কেজিতে ১০ টাকায় নেমে গেছে আমের দর

গত কয়েক সপ্তাহে আমের ব্যাপক দরপতনে লোকসানের মুখে পড়েছেন আম উৎপাদনকারী ও ব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা। যে জেলাগুলো থেকে রাজধানীসহ দেশের অন্যান্য অঞ্চলে আম যায় সেখানেই কিছু জাতের আমের দর কেজিতে ১০ টাকায় নেমে গেছে। বাগান মালিক ও মৌসুমি ব্যবসায়ীরা বলছেন গত কয়েক বছরের মধ্যে আমের আর এমন দরপতন হয়নি।
রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার সরদহ বাজারে আম প্যাকেটজাত করছেন কয়েকজন আম ব্যবসায়ী। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ বেশি থাকায় এই বাজারে সর্বনিম্ন ১০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে আম। ছবিটি গত মঙ্গলবার তোলা। ছবি: আনোয়ার আলী

গত কয়েক সপ্তাহে আমের ব্যাপক দরপতনে লোকসানের মুখে পড়েছেন আম উৎপাদনকারী ও ব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা। যে জেলাগুলো থেকে রাজধানীসহ দেশের অন্যান্য অঞ্চলে আম যায় সেখানেই কিছু জাতের আমের দর কেজিতে ১০ টাকায় নেমে গেছে। বাগান মালিক ও মৌসুমি ব্যবসায়ীরা বলছেন গত কয়েক বছরের মধ্যে আমের আর এমন দরপতন হয়নি।

দেশে সবচেয়ে বেশি আম উৎপাদিত হয় যে দুই জেলায় সেই চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহীতে ক্রেতার দেখা মিলছে না বলে জানাচ্ছেন আমচাষীরা। প্রতি বছর এই সময়ে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলার আম ব্যবসায়ীরা এই দুটি জেলায় গিয়ে ভিড় করেন। কিন্তু এবার তাদের দেখা মিলছে না। তারা বলছেন, এরকম অবস্থা তারা আগে কখনই দেখেননি।

একদিকে দেশের বাজারে যেমন আমের চাহিদা কম সেই সঙ্গে বিদেশে আম রপ্তানিও আশাব্যঞ্জক নয়। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাব বলছে, ২৬ জুন পর্যন্ত আম রপ্তানি হয়েছে মাত্র ২১৫ টন। যেখানে গত বছর এই সময়ের মধ্যে ৩০৮ টন আম রপ্তানি হয়েছিল।

আমের ব্যাপক ফলন দেখে লাভের আশায় ছিলেন রাজশাহীর আমচাষী আকরাম আলী। সর্বশেষ কবে আমের এমন দরপতন হয়েছিল তিনি স্মরণ করতে পারছেন না। গত মাসে আমের ভারে তার বাগানের গাছ ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছিল। বাঁশের খুঁটি লাগিয়ে, দিনের ২৪ ঘণ্টা বাগান পাহারা দেওয়ার জন্য তিনি লোক রেখেছিলেন। কিন্তু গত মাসে আমের মৌসুম শুরু থেকেই দাম কম থাকায় এখন তিনি হতাশ। অনেক যত্ন নিয়ে যে আম তিনি ফলিয়েছেন সেই গাছের আম গাছেই পেকে এখন মাটিতে ঝড়ে পড়ছে। এমনকি শিশুরাও আর আম খেতে চাইছে না বলে তিনি জানান।

রাজশাহীতে বানেশ্বরে আমের পাইকারি বাজারে গিয়ে দেখা যায়, লখনা জাতের আম প্রতি কেজি মাত্র ১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর ক্ষীরশাপাত প্রতি কেজির দাম ১৫ টাকা, ল্যাংড়া ২০ টাকা, ফজলি ১১ টাকা, অশ্বিনী ৮.৭৫ টাকা।

আকরাম জানান, যে জাতেরই হোক গত কয়েক বছরে ৩০ টাকার নিচে আমের দর নামেনি। দুই বছর আগে ১০০ টাকা কেজি পর্যন্ত আম বিক্রি করেছেন তিনি।

দাম কমে যাওয়ার কারণ

আম ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলা যা জানা যায় তা হলো, এ বছর আম যখন বাজারে আসতে শুরু করে তখন ছিল রমজান মাস। সে কারণেই আমের চাহিদা শুরু থেকেই কম। আমের ভরা মৌসুমে ছিল ঈদের ছুটি। এছাড়াও আমে ভেজালবিরোধী অভিযান ও কেমিক্যাল দিয়ে আমা পাকানো হচ্ছে এমন প্রচারণাকে আমের চাহিদা কমে যাওয়ার পেছনে কারণ হিসেবে দেখছেন অনেকেই। দাম বাড়ার আশায় এ কারণে অনেকেই বেশি দিন গাছে আম রেখে দিয়েছেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমের চাহিদা আর সে তুলনায় বাড়েনি।

ঢাকার আম ব্যবসায়ী হারুন-উর-রশিদ জানান, ঈদের ছুটির মধ্যে কারওয়ান বাজারে ল্যাংড়া আমের দাম কেজিতে ১০-১২ টাকায় নেমে গিয়েছিলেন। ঈদের পর চাহিদা বাড়লেও তুলনামূলকভাবে গত বছরের চেয়ে দাম এখনও কম। গত বৃহস্পতিবার প্রতি কেজি ল্যাংড়া আম তিনি ৪০ টাকায় বিক্রি করেছেন। তবে উৎপাদন পর্যায়ে এর দাম অর্ধেক বলে তিনি জানান।

Comments

The Daily Star  | English

One month of interim govt: Yunus navigating thru high hopes

A month ago, as Bangladesh teetered on the brink of chaos after the downfall of Sheikh Hasina, Nobel Laureate Muhammad Yunus returned home to steer the nation through political turbulences.

5h ago