দুই গোলে পিছিয়ে পড়েও বেলজিয়ামের নাটকীয় জয়

দুই গোলে এগিয়ে জাপান। তখন অনেকেই ভেবেছিলেন প্রথমবারের মতো হয়তো কোয়ার্টার ফাইনালে পা রাখতে যাচ্ছে এশিয়ার দলটি। কিন্তু তখনও যে রেড ডেভিলদের জাদু দেখানো বাকি। গোলতো শোধ করলই। গুনে গুনে তিনটি দিয়ে ম্যাচ জিতে নিল বেলজিয়ামই। রোমাঞ্চকর ম্যাচের নাটকীয় পরিণতিতে ৩-২ গোলের জয়ে শেষ আটে জায়গা নিল হ্যাজার্ড-ডি ব্রুইন-লুকাকুরাই।

ফেভারিটের তকমা গায়ে মেখে রাশিয়ায় পা রাখে বেলজিয়াম। অপরদিকে গ্রুপ পর্ব পার হওয়ায়ই লক্ষ্য ছিল জাপানের। তাই শক্তির দিকে পরিষ্কারভাবে পিছিয়ে থেকেই মাঠে নামে তারা। কিন্তু নিজেদের প্রত্যাশাকে ছাড়িয়ে প্রায় এক ধাপ বেশি এগিয়ে গিয়েছিল দলটি। শেষ আট অসম্ভব কিছু ছিল না। কিন্তু শেষ দিকে লিডটা ধরে রাখতে পারেনি। ম্যাচের শেষ মুহূর্তে গোল হজম করে ছিটকে গেল তারা। তবে তাদের দারুণ লড়াই হৃদয় ঠিকই করে নেয়।

এশিয়ার দল জাপান এদিন মনে করিয়ে দিল আরেক এশিয়ান দলের কথা।  ১৯৬৬ বিশ্বকাপের এমনই একটি ম্যাচে এগিয়ে থেকে হেরেছিল উত্তর কোরিয়া।  যদিও কোরিয়ানদের ক্ষতটা আরও বড়। ৫২ বছর আগে সেবার পর্তুগালের বিপক্ষে শুরুতে তিন গোলে এগিয়েছিল এশিয়ার দলটি। কিন্তু পড়ে পাঁচটি গোল হজম করে ছিটকে পড়েছিল তারাই। ১৯৭০ সালে ঘটেছিল প্রায় একই রকম ঘটনা। সেবার ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দুই গোলে পিছিয়ে থেকে পড়ে তিন গোল দিয়ে জিতেছিল পশ্চিম জার্মানি। যদিও ম্যাচটি গড়িয়েছিল অতিরিক্ত সময়ে।

এদিন প্রথমার্ধে সমান তালেই লড়াই করেছে জাপান। ম্যাচের প্রথম সুযোগটা পায় তারাই। যদিও গোল করার মতো সুযোগ তৈরি করতে পেরেছিল বেলজিয়ামই। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে যেন অপ্রতিরোধ্য জাপান। চার মিনিটের ঝলকে দুই গোলে এগিয়ে যায় দলটি। ৪৮ মিনিটে জান ভেরতনঘেনের ভুলে ডান প্রান্তে ফাঁকায় বল পেয়ে যান গেনকি হারাগুচি। আর তা থেকে বল পেয়ে ডান পায়ের জোরালো শটে লক্ষ্যভেদ করেন তিনি।

তবে পরের মিনিটেই সমতায় ফিরতে পারতো বেলজিয়াম। দুর্ভাগ্য তাদের হ্যাজার্ডের দুর্দান্ত শট বারপোস্টে লেগে ফিরে আসে। ৫২ মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করে জাপান। কাগাওয়ার কাছ থেকে বল পেয়ে ডি বক্সের বাইরে থেকে দূরপাল্লার নিখুঁত মাপা এক শটে বল জালে জড়ান তাকাশি ইনুই। 

দুই গোলে পিছিয়ে পড়ে যেন ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বসে বেলজিয়াম। সে সুযোগে আরও তেতে ওঠে জাপান। বেশ কিছু আক্রমণ করে তারা। তবে নিজেদের গোছাতে খুব বেশি সময় নেয়নি বেলজিয়াম। মাঝে কিছু আক্রমণ করেছিল বটে। তবে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য আসে ৬৯ মিনিটে।

অবিশ্বাস্য এক হেডে দায় মোচন করেন ভেরতনঘেন। ডি বক্সে মধ্যে দুরূহ কোণে ফাঁকায় হেড দেওয়ার সুযোগ পান তিনি। জাপানি ডিফেন্ডার বাধা দেওয়ার জন্যও এগিয়ে আসেননি। ভেবেছিলেন এমন কোণ থেকে ডি বক্সে সতীর্থদের পাস দিবেন তিনি। কিন্তু তার হাওয়ায় ভাসানো মাপা হেড দ্বিতীয় বারে লেগে জালে জড়ালে কিছুটা স্বস্তি ফেরে রেড ডেভিলদের। 

এক গোল শোধ করে নিজেদের ফিরে পায় বেলজিয়াম। পাঁচ মিনিট পরই সমতায় ফেরে তারা। হ্যাজার্ডের ক্রস থেকে ফাঁকায় দারুণ হেডে লক্ষ্যভেদ করেন বদলি খেলোয়াড় ফেলানি। ৭৮ মিনিটে লুকাকুর হেড লক্ষ্যে থাকেনি। তবে ৮৬ মিনিটেই এগিয়ে যেতে পারতো বেলজিয়াম। পারেনি জাপানি গোলরক্ষক ইজি কাওয়াশিমার অতিমানবীয় সেভে।

তাও একবার নয় দুইবার। প্রথমবার নাসের ছাদলির জোরালো হেড বাঁদিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে ফিরিয়ে দেন। ফিরতি বল পেয়ে ছাদলি এবার ক্রস দেন ডি বক্সে। সেখানে একেবারে ফাঁকায় লুকাকু। কিন্তু তার হেড আবারো দারুণ দক্ষতায় ফিরিয়ে দেন কাওয়াশিমা।

ম্যাচের যোগ করা সময়ে এগিয়ে যেতে পারতো জাপান। কিন্তু হোন্ডোর দূরপাল্লার শট ডান দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে কর্নারের বিনিময়ে ফিরিয়ে দেন বেলজিয়ান গোলরক্ষক কর্তোয়া। আর এটাই যেন কাল হয়ে দাঁড়ায় জাপানের। সেই কর্নার থেকে বল হারিয়ে কাউন্টার অ্যাটাকে উল্টো গোল খেয়ে বসে তারা। থমাস মিউনারের ক্রস থেকে ফাঁকায় বল পেয়ে বল জালে জড়ান ছাদলি।

 

Comments

The Daily Star  | English
10-bed ICU

Life-saving care hampered in 25 govt hospitals

Intensive Care Units at 25 public hospitals across the country have remained non-functional or partially operational over the last few months largely due to a manpower crisis, depriving many critically ill patients of life-saving care.

8h ago