কলকাতার পর্যটন মেলায় বাংলাদেশের দিকেই নজর সবার

কলকাতার বাসিন্দা শিপ্রা দাস। তার জন্ম ১৯৭৫ সালে। মুক্তিযুদ্ধের সময় বাবা গৌরব কান্ত দাস কুমিল্লা থেকে ওপার বাংলায় চলে গিয়েছিলেন। বাবার মুখে কুমিল্লার কথা শুনে শুনে একটা ছবি তৈরি হয়েছে তার। সেই ছবির সঙ্গে বাস্তবের মিল খুঁজতে এবার তিনি কুমিল্লার বজ্রপুর যাবেন স্থির করেছেন।
কলকাতায় পর্যটন মেলায় বাংলাদেশ প্যাভিলিয়ন। ছবি: স্টার

কলকাতার বাসিন্দা শিপ্রা দাস। তার জন্ম ১৯৭৫ সালে। মুক্তিযুদ্ধের সময় বাবা গৌরব কান্ত দাস কুমিল্লা থেকে ওপার বাংলায় চলে গিয়েছিলেন। বাবার মুখে কুমিল্লার কথা শুনে শুনে একটা ছবি তৈরি হয়েছে তার। সেই ছবির সঙ্গে বাস্তবের মিল খুঁজতে এবার তিনি কুমিল্লার বজ্রপুর যাবেন স্থির করেছেন।

দেশভাগের সময় উত্তর চব্বিশ পরগনার অশোকনগরের কলোনিতে এসে ঠাঁই নিয়েছিলেন নকুল চন্দ্র বালা। টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের বাড়ি ছিল তাদের। দাদু-বাবার হাত ধরে জিন্নাহ-নেহেরুর দেশভাগের তত্ত্বে ৯ বছরেই জন্মভূমি ছাড়ার যন্ত্রণা আজও তাড়া করে ৮১ বছরের প্রবীণের। মৃত্যুর আগে একবার জন্মভূমির মাটি ছুঁয়ে দেখতে চান নকুল চন্দ্র বালা।

কলকাতার নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়ামে আয়োজিত আন্তর্জাতিক পর্যটন মেলায় বাংলাদেশ প্যাভিলিয়নের সামনে দাঁড়িয়ে কথা হচ্ছিল ওই দুজনের সঙ্গে। দুজনই তাদের এই আবেগের কথা, স্মৃতির কথা এবং দেশভাগের যন্ত্রণার কথা জানান।

শুক্রবার সকালেই ভারতের অন্যতম প্রাচীন ও বৃহত্তম পর্যটন মেলা ট্যুর অ্যান্ড ট্রাভেল ফেয়ার শুরু হয়। বাংলাদেশ ছাড়াও নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, মায়েনমার, ভিয়েতনাম, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ বিশ্বের প্রায় ১৩ টি দেশ মেলায় অংশ নিয়েছে। এছাড়াও ভারতের গুজরাট, মহারাষ্ট্র, কর্ণাটক, বিহার, উড়িষ্যা, মিজোরাম, নাগা ল্যান্ড, উত্তরাখণ্ড, পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরাসহ ২৮ রাজ্যের পর্যটন বিষয়ক সংস্থাও যোগ দিয়েছে এই আয়োজনে। সব মিলিয়ে মেলায় বসেছে ৪৩০টি স্টল।

এছাড়াও গুগল, ইউটিউব, ফেসবুক ছাড়াও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ভ্রমণ ও পর্যটক বিষয়ক তথ্য প্রদানকারী সংস্থার স্থানীয় প্রতিনিধিরাও যোগ দিয়েছে এই পর্যটন মেলায়।

তবে সবচেয়ে নজরকাড়া স্টলগুলোর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের উদ্যোগে বাংলাদেশ প্যাভিলিয়নে বাংলাদেশের ১৩টি ভ্রমণ সংশ্লিষ্ট সংস্থা অংশ নিয়েছে। এর মধ্যে ওয়েলকাম বাংলাদেশ, জার্নি-প্লাস, ভিশন হলিডে, ট্যুরিজম উইন্ডো, এজাইয়ার, বিয়ন্ড অ্যাডভেঞ্চার অ্যান্ড ট্যুরিজম, বেটার বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন, বিশ্বভ্রমণ অন্যতম।

বাংলাদেশের বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী একেএম শাহজাহান কামাল শুক্রবার কলকাতার পর্যটন মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। এ সময় পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের স্বরাষ্ট্র সচিব অত্রি ভট্টাচার্য, কলকাতার বাংলাদেশ উপ-দূতাবাসের ডেপুটি হাইকমিশনার তৌফিক হাসান, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব নিখিল রঞ্জন রায় প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। মেলার উদ্বোধনের পরে তারা আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের প্যাভিলিয়নও উদ্বোধন করেন। এ সময় কলকাতার বাংলাদেশ উপ-দূতাবাসের প্রথম সচিব (কমার্স) সাইফুল ইসলাম, প্রথম সচিব (প্রেস) মোফাকখারুল ইকবালও উপস্থিত ছিলেন।

গত বছরের তুলনায় এবার আরও বেশি ভারতীয় পর্যটক বাংলাদেশ ভ্রমণ করবেন বলে ওই অনুষ্ঠানে আশা প্রকাশ করেন পর্যটনমন্ত্রী। তিনি বলেন, গত বছর ৬ লক্ষ ৪০ হাজারের মতো বিদেশি পর্যটক বাংলাদেশ ভ্রমণ করেছেন। এর মধ্যে ৪০ শতাংশই ছিলেন ভারতীয় পর্যটক।

কলকাতা থেকে ২০১৭ সালে ১ লক্ষ ২০ হাজার ভিসা ইস্যু করা হয়েছে। এর মধ্যে ৮০ শতাংশ ভিসা পর্যটক ভিসা ছিল- এই কথা জানিয়ে কলকাতার বাংলাদেশের উপ-রাষ্ট্রদূত তৌফিক হাসান বলেন, ভারতের বাংলাদেশের চারটি কনসুলেট থেকে দৈনিক গড়ে ১ হাজার ৩০০ ভিসা ইস্যু হয়। আর শুধুমাত্র কলকাতা থেকেই গড়ে রোজ ৭০০-৮০০ ভিসা দেওয়া হচ্ছে।

ভারতীয় পর্যটকদের জন্য বিশেষ কিছু সুবিধার কথা জানিয়েছেন বাংলাদেশের বেসরকারি বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব নিখিল রঞ্জন রায়। তিনি বলেন, চলো বাংলাদেশ বলে একটা প্যাকেজ আছে। সেখানে ভারতীয়দের জন্য বিশেষ কিছু সুবিধা রয়েছে। এছাড়াও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের আগে বাংলাদেশে ভারতীয়দের জন্য আরও কিছু সুবিধা দিয়ে ভিসা দেওয়া হয়।

ট্যুর অ্যান্ড ট্রাভেল ফেয়ারের সিইও সঞ্জীব আগরওয়াল জানান, এটা তাদের ৩০তম আয়োজন। কলকাতা ছাড়াও ভারতের মেট্রো সিটিগুলোতে আগামী কয়েক দিন এই পর্যটন মেলা চলবে। এই আয়োজনে বরাবরের মতো বাংলাদেশ অংশ নিয়েছে এবং বলতে গর্ব হচ্ছে প্রতিবেশী বাংলাদেশের দিকে এখানকার মানুষের বেড়ানোর প্রবণতা বেশি। 

প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এই মেলা চলবে। মেলা চলবে রবিবার (৮জুলাই) পর্যন্ত।

Comments

The Daily Star  | English
Bangladesh Bank's support for problem banks

Bangladesh Bank to rescue problem banks

The Bangladesh Bank is set to rescue problem banks including some Shariah-based banks controlled by S Alam Group by managing liquidity or merging a few.

4h ago