যে পাঁচ কারণে ব্রাজিলের এমন হার

হেক্সা জয়ের স্বপ্ন নিয়ে রাশিয়ায় পা রেখেছিল ব্রাজিল। বিশ্বকাপ জেতার মতো যথেষ্ট পরিমাণ রসদও তাদের হাতে ছিল। কিন্তু তাহলেও কেন কোয়ার্টার ফাইনাল থেকেই বিদায় নিতে হলো পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের? ব্রাজিলের এমন বিদায়ের নেপথ্যের কিছু কারণ খুঁজে বের করা হলো।
Brazil Lost
বেলজিয়ামের কাছে হারার পর নেইমারদের হতাশা। ছবি: রয়টার্স

হেক্সা জয়ের স্বপ্ন নিয়ে রাশিয়ায় পা রেখেছিল ব্রাজিল। বিশ্বকাপ জেতার মতো যথেষ্ট পরিমাণ রসদও তাদের হাতে ছিল। কিন্তু তাহলেও কেন কোয়ার্টার ফাইনাল থেকেই বিদায় নিতে হলো পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের? ব্রাজিলের এমন বিদায়ের নেপথ্যের কিছু কারণ খুঁজে বের করা হলো।

১) ক্যাসেমিরোর অনুপস্থিতিতে ফার্নান্দিনহোর হতাশাজনক পারফরম্যান্স:

গত মৌসুমে ম্যানচেস্টার সিটির প্রিমিয়ার লীগ জয়ের অন্যতম নায়ক ছিলেন ফার্নান্দিনহো। পেপ গার্দিওলার অধীনে খেলে নিজের খেলার মান অনেকটাই বাড়িয়ে তুলেছিলেন এই ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার। হলুদ কার্ডের কারণে ক্যাসেমিরো কোয়ার্টার ফাইনাল মিস করবেন, এমনটা জানার পরেও তাই বোধহয় নিশ্চিন্তেই ছিলেন ব্রাজিল সমর্থকেরা। ফার্নান্দিনহো তো আছেনই! কোচ তিতেও ভরসা রেখেছিলেন তার উপরেই। কিন্তু সেই ভরসার মান রাখতে পারেননি ফার্নান্দিনহো।

আত্মঘাতী গোলের দায় যদি সেভাবে নাও দেয়া হয়, পুরো ম্যাচ জুড়েই নিষ্প্রভ থাকার দায় কিছুতেই এড়াতে পারবেন না ফার্নান্দিনহো। লাইমলাইটে না আসলেও আধুনিক ফুটবলে ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডারদের ভূমিকা অপরিহার্য। রক্ষণ এবং আক্রমণের মধ্যে সেতু হিসেবে কাজ করেন তারা। রক্ষণের প্রথম প্রহরী যেমন, তেমনি আক্রমণটাও শুরু হয় তাদের হাত ধরেই। আর এই দুই জায়গায়ই ব্যর্থ ফার্নান্দিনহো। না পেরেছেন বেলজিয়ামের গতিশীল ফুটবলারদের সাথে তাল মেলাতে, না পেরেছেন নেইমার-জেসুসদের জন্য আক্রমণের সূচনা করে দিতে। ব্রাজিলের হারের জন্য বেশ বড় একটা দায় তাই তার উপরেই বর্তায়।

২) ফিনিশিংয়ের অভাব  

প্রথমার্ধে দুই গোলে পিছিয়ে পড়লেও দ্বিতীয়ার্ধে বেশ ভালোভাবেই ম্যাচে ফিরে এসেছিল ব্রাজিল। এমনকি দ্বিতীয়ার্ধে বেলজিয়ামের আক্রমণভাগকে খুঁজেই পাওয়া যায়নি, ব্রাজিলের একের পর এক আক্রমণ সামলাতেই ব্যস্ত ছিলেন তারা। প্রচুর গোলের সুযোগ পেয়েছে ব্রাজিল, কিন্তু দুর্বল ফিনিশিংয়ের কারণে সমতাসূচক গোল বের করতে পারেনি। বিশেষ করে রেনাতো অগাস্তো, ফিলিপে কৌতিনহো আর রবার্তো ফিরমিনো যে তিনটি সহজতম সুযোগ মিস করেছেন, তার মাশুলই ব্রাজিলকে দিতে হয়েছে ম্যাচ হেরে। পুরো ম্যাচে ২৭ টি শট থেকে মাত্র একটি গোল, ব্রাজিলের আক্রমণভাগের নিষ্প্রভতা বোঝাতে এই একটি তথ্যই যথেষ্ট।

৩) ডি বক্সে নেইমারের অযথা কারিকুরি:

বেলজিয়ামের বিপক্ষে নিজের গতি দিয়ে মুগ্ধ করেছেন নেইমার, কিন্তু ডি বক্সে তার অযথা কারিকুরি করাটা বেশ সমালোচিত হয়েছে। দ্বিতীয়ার্ধে বেশ কয়েকবার বল নিয়ে বক্সে ঢুকেছিলেন তিনি, কিন্তু সতীর্থদের উদ্দেশ্যে বল ছাড়তে দেরি করেছেন অনেক। আর সেই সুযোগে বেলজিয়ান ডিফেন্ডাররা বক্সে ফিরে আসার মতো পর্যাপ্ত সময়ও পেয়েছেন।

৪) বেলজিয়ামের ট্যাকটিকাল শিফটের সাথে মানিয়ে নিতে না পারা:

জাপানের বিপক্ষে ম্যাচে বদলি হিসেবে নেমে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিলেন নাসের শাদলি আর মারুয়ান ফেলাইনি। ব্রাজিলের বিপক্ষে ম্যাচে এই দুজনকেই তাই শুরুর একাদশে রেখেছিলেন কোচ রবার্তো মার্টিনেজ। আরও কিছু জুয়া খেলেছিলেন মার্টিনেজ, যেগুলোর সাথে খাপ খাওয়াতে পারেনি ব্রাজিল। যেমন, এই ম্যাচে কেভিন ডি ব্রুইনকে ফলস নাইন হিসেবে খেলিয়ে রোমেলু লুকাকুকে ডানে শিফট করে নিয়েছিলেন মার্টিনেজ। এতে করে লুকাকুর স্কোরিং চান্স কিছুটা কমে গিয়েছিল ঠিকই, কিন্তু মার্টিনেজের এই বাজির সুফলই পেয়েছে বেলজিয়াম। লুকাকুকে ডানে সরিয়ে আনার কারণ ছিল মার্সেলোকে আটকে রাখা। ব্রাজিলের আক্রমণে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন মার্সেলো। সে কারণেই লুকাকুকে মার্সেলোর সাইডে নিয়ে আসেন মার্টিনেজ, যাতে করে আক্রমণে যাওয়ার আগে দ্বিতীয়বার ভাবতে বাধ্য হন মার্সেলো। কারণ তিনি উপরে উঠে গেলে যে ফাঁকা স্পেস তৈরি হবে, সেটি কাজে লাগিয়ে বেলজিয়ামকে গোল এনে দিতে পারবেন লুকাকু। মার্টিনেজের এমন কৌশলের কোন জবাব ছিল না তিতের কাছে।

৫) থিবো কোর্তোয়ার অতিমানবীয় পারফরম্যান্স:

নিজের পেশাদার ক্যারিয়ারের সেরা ম্যাচটা সম্ভবত এদিন খেলেছেন বেলজিয়াম কিপার থিবো কোর্তোয়া। ব্রাজিলের নিশ্চিত কয়েকটি গোল ঠেকিয়েছেন এই চেলসি কিপার, বিশেষ করে একদম শেষ দিকে নেইমারের দুর্দান্ত শটটি যেভাবে ফিরিয়েছেন, বাজপাখির ক্ষিপ্রতাও যেন এদিন হার মানতো কোর্তোয়ার কাছে।

আরও পড়ুন ঃ ‘মেসি-রোনালদোর পর্যায়ে আসতে আরও দুবছর লাগবে নেইমারের’

Comments

The Daily Star  | English

Houses for homeless: A project destined to fall into ruin

At least a dozen homes built for the homeless and landless on a river island in Bogura’s Sariakandi upazila have been devoured by the Jamuna while dozens of others are under threat of being lost.

4h ago