তরিকুলের ওপর হামলাকারী কারা

ডেইলি স্টারের অনুসন্ধানে হামলাকারীদের ১১ জনের পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া গেছে। এদের মধ্যে ১০ জনই সরকার দলীয় ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নেতাকর্মী।
স্টার অনলাইন গ্রাফিকস

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনে তরিকুলের ওপর হামলার যেসব ভিডিও ও ছবি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে তাতে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের লাঠি, রাম দা ও হাতুড়ি নিয়ে আঘাত করতে দেখা গেছে। গত ২ জুলাইয়ের ওই হামলায় তরিকুলের ডান পায়ের দুটি হাড় ভেঙে যায়।

দ্য ডেইলি স্টারের অনুসন্ধানে হামলাকারীদের ১১ জনের পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া গেছে। এদের মধ্যে ১০ জনই সরকার দলীয় ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নেতাকর্মী।

হামলার পর থেকে চলতি সপ্তাহ পর্যন্ত তাদের সবাইকেই ক্যাম্পাসে দেখা গেছে। রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পক্ষে তারা এখন প্রচারণা চালাচ্ছেন।

ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, হাতুড়ি দিয়ে তরিকুল ইসলামের ওপর হামলা চালায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ছাত্রলীগ নেতা আবদুল্লাহ আল মামুন। তরিকুলের পায়ে ও কোমরে লোহার হাতুড়ি দিয়ে সে আঘাত করে। তার বাড়ি রাজশাহীর পবা উপজেলার হরিয়ান এলাকায়। সে ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সহসম্পাদক।

হামলা সম্পর্কে তাকে জিজ্ঞাসা করা হলে গতকাল বলেন, ‘ওই ব্যাপারে কথা বলতে চাই না।’

তরিকুল যখন যন্ত্রণায় চিৎকার করছিল, মামুনের সঙ্গে রমিজুল ইসলাম রিমু ও লতিফুল কবির মানিক তার ঘাড়ে ও পিঠে লাথি মারছিল। রমিজুল ইসলাম রিমু ছাত্রলীগের রাবি শাখার সহসভাপতি। আর লতিফুল কবির মানিক মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের কর্মী।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনের সড়কে ফেলে পেটানোর সময় তরিকুল হাত দিয়ে তার মুখ বাঁচানোর চেষ্টা করছিলেন। এসময় ছাত্রলীগের কর্মী জন স্মিথ, সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান মিশু ও রিমু এগিয়ে গিয়ে লাঠি দিয়ে পেটাতে শুরু করেন। মানিক ব্যাডমিন্টন কভার থেকে একটি রামদা বের করে রাম দা’টির ভোঁতা দিক দিয়ে তরিকুলকে আঘাত করেন। তখনও হাতুড়ি ও বাঁশের লাঠি দিয়ে আঘাত অব্যাহত ছিল।

আরেকটি ভিডিওতে দেখা যায়, তরিকুলকে লাঠি দিয়ে পেটাচ্ছিলেন রাবি শাখা ছাত্রলীগের অনুষ্ঠান ও পরিকল্পনা বিষয়ক সহসম্পাদক সৌমিত্র কুমার রানা। অন্যান্য ছবিতে সাংগঠনিক সম্পাদক হাসান লাবন ও চার জন সহসভাপতি—আহমেদ সজীব, গুফরান গাজী, শোভন কায়সার ও মিজানুর রহমান সিনহাকে লাঠি নিয়ে পেটাতে দেখা যায়।

এ ব্যাপারে রাবি শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনের নামে ক্যাম্পাসে সহিংসতার চেষ্টা করছিল কিছু ছাত্র। জামায়াত-শিবির ও বিএনপির লোকজন ছাত্রদের উষ্কানি দিচ্ছিল। ‘তাদেরকে প্রতিহত করা আমাদের দায়িত্ব। আমরা সেটাই করেছি।’

একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে হাতুড়ি নিয়ে হামলাকারী মামুন দাবি করেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরাই তাদের ওপর হামলা চালাতে গিয়েছিল। ‘ওরা হামলা করতে এলে আমরা তাদের ধাওয়া করি। তাদের মধ্যে একজন পড়ে গেলে আমরা সবাই মিলে মারধর করি… ঘটনা এটাই।’ হাতুড়িসহ হামলার অস্ত্র তাদের কাছ থেকেই পাওয়া গিয়েছিল বলে তার দাবি।

নিজের মানসিক অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ভালো আছি।

হাসিমুখে গর্বভরে বলেন, ‘অনেক সাংবাদিক আমাকে ফোন করে জানতে চেয়েছে, আমি ক্যাম্পাস থেকে পালিয়েছি কিনা। আমি পালাইনি। আমি ক্যাম্পাসেই আছি এবং আমার ওপর কোনো মানসিক চাপ নেই।’

হামলায় তার সংশ্লিষ্টতা নিয়ে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশান বা ছাত্রলীগের কেউ যোগাযোগ করেছে কিনা জানতে চাইলে বলেন, না…না কেউ আমাকে কিছু বলেনি।’

যোগাযোগ করা হলে রাবি প্রক্টর লুতফর রহমান বলেন, ঘটনাটি ক্যাম্পাসের বাইরে ঘটায় তারা কোনো ব্যবস্থা নেননি। আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিষয়টি দেখবে।

হামলাকারী ও হামকার শিকার সবাই রাবির ছাত্র ছিল জানানোর পর তিনি বলেন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা সেখানে ছিলেন। তারাই আহতদের হাসপাতালে নিয়ে যায়। পুলিশ বিষয়টি দেখবে।

ছবি ও ভিডিওতে যাদেরকে হামলা চালাতে দেখা গেছে তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না জিজ্ঞাসা করা হলে বলেন, কেউ লিখিত অভিযোগ করলে তারা বিষয়টি দেখবেন।

হামলা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মতিহার থানার ওসি শাহাদাত হোসেন ঘটনায় ছাত্রলীগের সংশ্লিষ্টতার কথা অস্বীকার করেন। তিনি গতকাল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘রাস্তায় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পাবলিকের হাতাহাতি হয়েছিল। এতে তরিকুল আহত হয়। আমাদের পুলিশ অফিসাররাই তাকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিল।’

Comments

The Daily Star  | English

77.78% students pass HSC, equivalent exams

A total of 77.78 percent students passed this year’s Higher secondary Certificate (HSC) and equivalent examinations

1h ago