বেলজিয়ামের স্বপ্নযাত্রা থামিয়ে ফাইনালে ফ্রান্স

কিলিয়েন এমবাপে, আতোঁয়া গ্রিজম্যান, পল পগবা, অলিভার জিরুদদের ঠিকই আটকে রাখল বেলজিয়ান ডিফেন্ডাররা। কিন্তু কে জানতো চোরাগোপ্তা হামলা করবেন স্যামুয়েল উমতিতির মতো ডিফেন্ডাররা। দারুণ উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচের ভাগ্য নির্ধারণ করে দেন এ বার্সা ডিফেন্ডারই। তার দেওয়া একমাত্র গোলে রাশিয়া বিশ্বকাপের ফাইনালের টিকেট পেল ফ্রান্স। আর তাতে স্বপ্নযাত্রা থাকল টুর্নামেন্টের ডাকহর্স বেলজিয়ামের।

দারুণ সব খেলোয়াড়ে গড়া ফ্রান্স টুর্নামেন্টের শুরুটা খুব ভালো ভাবে করতে পারেনি ঠিকই, কিন্তু নক পর্বে এসেই যেন ভিন্ন ফ্রান্স। বড় ম্যাচের চাপ কিভাবে নিতে হয় তা দেখিয়ে দিচ্ছে দলটি। এদিন ম্যাচে দুই দলই সমান তালে খেললেও পার্থক্যটা ছিল অভিজ্ঞতাতেই। আর তাতেই এগিয়ে থেকে ম্যাচ জিতে নিল ১৯৯৮ সালের চ্যাম্পিয়নরা। অথচ ম্যাচের আগে সাম্প্রতিক সময়ের পারফরম্যান্সে এগিয়ে ছিল রেড ডেভিলরাই। ইতিহাসও ছিল তাদের পক্ষেই।

সেন্ট পিটার্সবার্গে ৫১ মিনিটে ক্ষিপ্র হেডে ম্যাচ জেতানো গোল করেন স্যামুয়েল উমতিতি। এই নিয়ে নক আউট পর্বে তিন ফরাসী ডিফেন্ডারই দলকে এনে দেন গোল। দ্বিতীয় রাউন্ডে আর্জেন্টিনার বিপক্ষে গোল করেছিলেন বেঞ্জামিন পাভার্ড, কোয়ার্টার ফাইনালে গোল করেছিলেন রাফায়েল ভারানে। এবার তা করলেন উমতিতি। 

শুরু থেকে বল পজিশন বেলজিয়ামের বেশি থাকলেও প্রথম সুযোগ পেয়েছিল ফ্রান্সই। ম্যাচের ১২ মিনিটে পগবার বাড়ানো বলে এমবাপে ধরতে পারলে বিপদ হতে পারতো বেলজিয়ামের। তবে এ পিএসজি তারকা বলের নাগাল পাওয়ার আগেই ক্ষিপ্ততার সঙ্গে লুফে নেন সতর্ক গোলরক্ষক থিবো কর্তোয়া। তিন মিনিট পর সুযোগ পেয়েছিল বেলজিয়াম। তবে হ্যাজার্ডের ডান প্রান্ত থেকে নেওয়া কোণাকুণি শট অল্পের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। 

১৭ মিনিটে ডি বক্সের প্রায় ৩০ গজ বাইরে থেকে দারুণ শট নিয়েছিলেন মাতুইদি। তবে সে শট সহজেই লুফে নেন কর্তোয়া। পরের মিনিটে লক্ষ্যে দারুণ এক শট নিয়েছিলেন হ্যাজার্ড। তবে কর্নারের বিনিময়ে তা রক্ষা করেন ফরাসী ডিফেন্ডার। ২১ মিনিটে দিনের সেরা সেভটি করেন ফরাসী গোলরক্ষক হুগো লরিস। ডান দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে দারুণ ভাবে ফিরিয়ে দেন তবি অ্যালডারউইয়ারল্ডের শট। প্রথম ২০ মিনিটে কিছুটা এলোমেলো থাকলেও এরপর দারুণভাবে ম্যাচে ফিরে আসে ফরাসীরা।

পরের মিনিটে নিজের অর্ধ থেকে বুদ্ধিদীপ্ত  পাস দিয়েছিলেন উমতিতি। ফাঁকায় সে বল নিয়ন্ত্রণে নিতে ব্যর্থ না হলে তখনই দলকে এগিয়ে দিতে পারতেন জিরুদ। ৩০ মিনিটে বেঞ্জামিন পাভার্ডের ক্রস থেকে জিরুদের নেওয়া হেড অল্পের জন্য লক্ষ্যে থাকেনি। দুই মিনিটে দারুণ সুযোগ ছিল গ্রিজম্যানের। কিন্তু তার শট বারের অনেক উপর দিয়ে লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। পরের মিনিটে এমবাপের ক্রস থেকে ফাঁকায় শট নিয়েই লক্ষ্যে রাখতে পারেননি জিরুদ।

৩৯ মিনিটে দিনের সেরা সুযোগটি পান পাভার্দ। কিন্তু লক্ষ্যভেদ করতে পারেননি বেলজিয়ান গোলরক্ষক কর্তোয়ার দক্ষতায়। এমবাপের বাড়ানো বলে গোলরক্ষককে একা পেয়েও বল জালে জড়াতে পারেননি পাভার্দ। প্রথমার্ধের শেষ মুহূর্তে বিপদ প্রায় ডেকে এনেছিলেন উমতিতি। ডি ব্রুইনের ক্রস ফেরাতে গিয়ে লুকাকুর পায়ে দিয়েছিলেন তিনি। তবে লুকাকু বলের নিয়ন্ত্রণ ঠিকভাবে করতে না পারায় সে যাত্রা রক্ষা পায় ফ্রান্স।

৪৭ মিনিটে এগিয়ে যাওয়ার দারুণ সুযোগ ছিল বেলজিয়ামের। একেবারে ফাঁকায় হেড দেওয়ার সুযোগ পেয়েও লক্ষ্যে রাখতে পারেননি লুকাকু। তিন মিনিট পর এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ ছিল ফরাসীদেরও। সহজ সুযোগ পেয়েছিলেন জিরুদ। তবে বল নিয়ন্ত্রণ করে শট নিতে দেরি করায় তা ফিরিয়ে দেন ভিনসেন্ট কম্পানি।

৫১ মিনিটে ফ্রান্সের কাঙ্ক্ষিত গোলটি আসে কর্নার থেকে। গ্রিজম্যানের ক্রসে দারুণ এক হেডে লক্ষ্যভেদ করেন উমতিতি। ১-০ গোলে গিয়ে যায় ফ্রান্স। এরপরও গোলের দারুণ কিছু সুযোগ আসলেও শেষ পর্যন্ত এই গোলেই ম্যাচের ভাগ্য নির্ধারিত হয়। ৫৫ মিনিটে ফাঁকায় পেয়েও ঠিকভাবে শট নিতে পারেননি মাতুইদি। পরের মিনিটেই সুযোগ ছিল জিরুদেরও। তার শট ফিরিয়ে দেন বেলজিয়ান ডিফেন্ডাররা।

৬০ মিনিটে দারুণ সুযোগ পেয়েছিল বেলজিয়াম। মার্টিনের ক্রস ঠিকভাবে ফেরাতে না পারায় ডি বক্সে পেয়ে গিয়েছিলেন ডি ব্রুইন। তবে তার দুর্বল হেড সহজেই ধরে ফেলেন লরিস। চার মিনিট পর দারুণ এক সেভ করেন লরিস। ঝাঁপিয়ে পড়ে ফিরিয়ে দেন মার্টিনের শট । পরের মিনিটে সুবর্ণ সুযোগ মিস করে বেলজিয়াম। মার্টিনের ক্রস থেকে ফাঁকায় দাঁড়িয়ে হেড নিয়েও লক্ষ্যভ্রষ্ট করেন ফেলানি। ফলে হতাশা বাড়ে বেলজিয়ানদের।

৮০ মিনিটে দূরপাল্লার দারুণ এক শট নিয়েছিলেন আলেক্স উইসেল। দারুণ দক্ষতায় সে শট ফিরিয়ে দেন ফরাসী গোলরক্ষক। এরপর ফ্রান্সকে চেপে ধরেও ধারালো কোন আক্রমণ করতে পারেনি বেলজিয়াম। উল্টো ম্যাচের যোগ করা সময়ে ব্যবধান বাড়ানোর সুযোগ ছিল ফ্রান্সের। যোগ করা সময়ের তৃতীয় মিনিটে ফাঁকায় শট নিয়েও কর্তোয়াকে পরাস্ত করতে পারেননি গ্রিজম্যান। দুই মিনিট পর কোরেনতিন তিলিসোও ফাঁকায় পেয়েছিলেন। তার শট ঝাঁপিয়ে পড়ে রক্ষা করেন কর্তোয়া।

এই নিয়ে তৃতীয়বার বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠল ফ্রান্স। ১৯৯৮ সালে ব্রাজিলকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল তারা। ২০০৬ সালে ফাইনালে হেরেছিল ইতালির কাছে। এবার ১৫ জুলাই ফাইনালে ফ্রান্সের প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ড কিংবা ক্রোয়েশিয়া। 

Comments

The Daily Star  | English
NCP will not accept delay in Teesta master plan

Won’t accept any implementation delay: Nahid

National Citizen Party Convener Nahid Islam yesterday said his party would not accept any delay or political maneuver over implementing the Teesta master plan.

7h ago