এরা আতঙ্কে, ওরা আনন্দে

গত তিনমাসে অন্তত ১৩ বার হামলা করা হয়েছিল কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর। এসব হামলায় দেশের চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬৮ জনের মতো আহত হয়েছেন। কিন্তু, পুলিশ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কেউই হামলাকারীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
Quota arrestees
আদালতে নেওয়া হচ্ছে কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতা ফারুক হোসেন (বামে) এবং মশিউর রহমানকে। ছবি: স্টার

গত তিনমাসে অন্তত ১৩ বার হামলা করা হয়েছিল কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর। এসব হামলায় দেশের চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬৮ জনের মতো আহত হয়েছেন। কিন্তু, পুলিশ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কেউই হামলাকারীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

আরও দুঃখজনক বিষয় হলো হামলার শিকার ও কয়েকজন আহত আন্দোলনকারীকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। আবার কাউকে হাসপাতাল থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগও উঠেছে। তবে, হামলাকারীরা রয়েছে খোশ মেজাজেই। গায়ে হাওয়া লাগিয়ে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে ক্যাম্পাসগুলোতে।

অভিযোগ উঠেছে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সমর্থিত বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কর্মীরা কোটা সংস্কার আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটির কয়েকজন নেতাকে মারধর করে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। পরে, পুলিশ সেসব আহতদের বিভিন্ন মামলায় গ্রেফতার দেখায়।

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কর্তৃপক্ষ আন্দোলনকারীদের এখন দেখছে ‘সমস্যা সৃষ্টিকারী’ হিসেবে। নিজেদের শিক্ষার্থীদের ছুঁড়ে দিয়েছে হামলাকারীদের আরও নির্যাতনের মুখে। ছুঁড়ে দিয়েছে আরও গ্রেফতার-ঝুঁকির মধ্যে।

গত ২ জুলাই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র তরিকুল ইসলামকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকের সামনে হাতুড়ি, ছোরা ও বাঁশের লাঠি দিয়ে নৃশংসভাবে পেটায়। যে ১১ জন তাকে আক্রমণ করেছে তাদের মধ্যে ১০ জনই ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী।

হামলার সেই করুণ চিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। প্রকাশ্য দিবালোকে তাকে মারধর করা হয়। সেসময় পুলিশ ধারে-কাছেই ছিল। কয়েকজন পুলিশ সদস্য রক্তাক্ত অবস্থায় তরিকুলকে হাসপাতালে নিয়ে যান।

অথচ, রাজশাহীর মনিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জানালেন সাধারণ কয়েকজনের সাথে ‘হাতাহাতি’-র খবর। কিন্তু, হামলাকারীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হলো না কেনো? – এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বললেন, যেহেতু হামলার শিকার ব্যক্তিটি কোনো অভিযোগ দায়ের করেননি, তাই।

আক্রমণকারীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে কী না- এ বিষয়ে জানার জন্যে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, তিনি এখন ঢাকায় এবং এ সংক্রান্ত কোনো খবর তিনি দেখেননি।

এরপর, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর লুৎফর রহমানের কাছে এ বিষয়ে তার করণীয় কী- তা জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, “আমি আপনাদের আগেও বলেছি এবং এখনও বলছি- ঘটনাটি ঘটেছে ক্যাম্পাসের বাইরে। তাই এর দায়দায়িত্ব পুলিশের।” কিন্তু, ঘটনার সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জড়িত রয়েছে- এমন প্রশ্নে তার মন্তব্য, “হামলার শিকার ব্যক্তি এখনো কোনো লিখিত অভিযোগ করেননি।”

তবে ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, হামলার পর এর শিকার ব্যক্তিটিকে অভিযোগ দায়ের করতে হবে এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। পুলিশ নিজেই এ বিষয়ে অভিযোগ দায়ের করতে পারেন। পুলিশকে সেই ক্ষমতা দেওয়া রয়েছে।

এর আগে, ৩০ জুন ছাত্রলীগ কর্মীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর আক্রমণ চালায়। এরপর আরও দুবার হামলা করে তারা। আন্দোলনকারী সংগঠন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক নূরুল হক নূরকে বেধড়ক মার দেওয়া হয়। শুধু তাই নয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার চিকিৎসা নিশ্চিত করা যায়নি।

বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রক্টর একেএম গোলাম রব্বানী বলেন, “আমরা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যখন কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বিবেচনা করি তখন তা আমরা কোনো দল বা সংগঠনের স্বার্থে নেই না। আমরা তা নেই সাধারণ শিক্ষার্থীদের স্বার্থে।”

ঘটনাগুলো তদন্তে সাত-সদস্যের একটি কমিটি গঠন কার হয়েছে বলেও তিনি জানান। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত সবাইকে অপেক্ষা করার কথাও বলেন তিনি।

গত তিন মাসে কোটা সংস্কার আন্দোলনে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্তত পাঁচজন আন্দোলনকারী আহত হয়েছেন। ফেসবুকে অনেককেই হুমকি দেওয়া হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আলী আসগর চৌধুরীও একই বক্তব্য দিয়েছেন- কোনো শিক্ষার্থী এখনো কোনো অভিযোগ জানাননি। হাটহাজারি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাও একই কথার প্রতিধ্বনি করেন।

গত এপ্রিল থেকে অন্তত চার বার আন্দোলনকারীরা হামলার শিকার হন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। প্রোক্টর শিকদার মোহাম্মদ জুলকারনাইন অবশ্য আশ্বাস দিয়েছিলেন- ঘটনার ফুটেজ দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু, এখন পর্যন্তও কোনো ব্যবস্থা দৃশ্যমান হয়নি।

তবে এসব সাম্প্রতিক ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ঢাকায় অবস্থিত সুইজারল্যান্ড এবং নেদারল্যান্ডস দূতাবাস। রাজধানী ঢাকা ও অন্যান্য জায়গায় আন্দোলনকারীদের শান্তিপূর্ণ সমাবেশে হামলার কারণে তারা এই উদ্বেগ প্রকাশ করে। দূতাবাসগুলোর ফেসবুক পেজে সেই উদ্বেগের কথা জানানো হয়।

Comments

The Daily Star  | English

One month of interim govt: Yunus navigating thru high hopes

A month ago, as Bangladesh teetered on the brink of chaos after the downfall of Sheikh Hasina, Nobel Laureate Muhammad Yunus returned home to steer the nation through political turbulences.

5h ago