বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স

ফাইনালের স্নায়ুচাপটাই সামলে নিতে পারল না ক্রোয়েশিয়া। নতুবা ম্যাচের শুরু থেকে সমান তালেই লড়েছিল দলটি। আর বড় ম্যাচে এ চাপ কিভাবে সামলে নিতে হয় তা ভালো করেই দেখিয়ে দল ফ্রান্স। শেষ হাসি হাসল তারাই। ক্রোয়েটদের উড়িয়ে দিয়ে ৪-২ গোলের ব্যবধানে দ্বিতীয়বারের মতো শিরোপা জিতে নিল ফরাসীরা। আর প্রথমবারের মতো ফাইনালে খেলতে নেমে রানার্স আপ হওয়ায় সান্ত্বনা নিয়েই মাঠ ছাড়তে হয় ক্রোয়েটদের।

ফাইনালের স্নায়ুচাপটাই সামলে নিতে পারল না ক্রোয়েশিয়া। নতুবা ম্যাচের শুরু থেকে সমান তালেই লড়েছিল দলটি। আর বড় ম্যাচে এ চাপ কিভাবে সামলে নিতে হয় তা ভালো করেই দেখিয়ে দল ফ্রান্স। শেষ হাসি হাসল তারাই। ক্রোয়েটদের উড়িয়ে দিয়ে ৪-২ গোলের ব্যবধানে দ্বিতীয়বারের মতো শিরোপা জিতে নিল ফরাসীরা। প্রথমবারের মতো ফাইনালে খেলতে নেমে রানার্স আপ হওয়ায় সান্ত্বনা নিয়েই মাঠ ছাড়তে হয় ক্রোয়েটদের।

ফ্রান্সের আকাশে বাতাসে বইছে আনন্দের বন্যা। কারণ আবারো একটি বিশ্বকাপ জিতে নিয়েছে তাদের দল। ২০ বছর আগে অধিনায়ক হিসেবে যে কাজটি করেছিলেন দিদিয়ের দেশম। এবার করলেন কোচ হিসেবে। আনন্দটা হয়তো তাই তার একটু বেশিই। তাই তো নিজের বয়সটা ভুলে গিয়ে শেষ বাঁশি বাজতেই শিশুদের মতোই লাফিয়ে রীতিমতো উড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরলেন শিষ্যদের।

মস্কোর লুজনিকি স্টেডিয়ামে ফরাসীদের হয়ে গোল করেছেন আঁতোয়ান গ্রিজম্যান, কিলিয়ান এমবাপে, পল পগবা। আরেকটি গোল তারা পেয়েছে মারিও মানজুকিচের আত্মঘাতীতে। 

মাঠে নামার আগে ইতিহাসটা তাদের সঙ্গেই ছিল। ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে কখনোই হারেনি ফ্রান্স। তিনবার জয় আর দুইবার ড্র। আর বিশ্বকাপে এর আগে ১৯৯৮ সালে ক্রোয়েট হারিয়েছিল সেমিফাইনালে। ওইবারই প্রথমবার বিশ্বকাপ জয়ের আনন্দে মেতেছিল তারা। ২০ বছর পর আবারো ক্রোয়েটদের হারাল। এবারও তারা বিশ্বচ্যাম্পিয়ন। আর মাঠে এ কাজটা সহজ করে দিলেন গ্রিজম্যান, পগবা, এমবাপেরা।

লুঝনিকি স্টেডিয়ামে শিরোপা যুদ্ধে ম্যাচের প্রথমার্ধের পুরো সময়টাই মাঝ মাঠে ঘোরাফেরা করেছে বল। দুই একটা আক্রমণ যা হলো তা করল ক্রোয়েশিয়া। কিন্তু এ অর্ধ শেষে ১-২ গোলে পিছিয়ে তারা। কারণ ফরাসীদের দুটি গোলই এসেছে সেট পিস থেকে। তবে ফাইনালে ফরাসীদের সেট পিস ভাগ্য যে নতুন কিছু নয়। আগের দুই ফাইনালে করা চারটি গোলের তিনটিই এসেছিল ওই সেট পিস থেকেই। এদিনও এলো দুটি।

ঠিক উল্টো করে বললে, বলা যায় প্রথমার্ধে ফ্রান্সের করা দুটি গোলই এলো আত্মঘাতী থেকে। কারণ ম্যাচের ১৮ মিনিটে আতোঁয়া গ্রিজম্যানের শট ফেরাতে হেড দিতে গিয়ে নিজেদের জালে বল ঢুকিয়ে দেন সেমিফাইনালের নায়ক মারিও মানজুকিচ। চলতি বিশ্বকাপে এটা ১২তম আত্মঘাতী গোল। আর বিশ্বকাপের ইতিহাসে প্রথমবার কোন ফাইনালে আত্মঘাতী গোল হলো।

আর ৩৪ মিনিটে কর্নার ফেরাতে গিয়ে ভুলটা করে ফেলেন ইভান পেরিসিচ। বল হাতে লেগে যায় তার। প্রথমে রেফারি দেখেননি বিষয়টি। ফরাসী খেলোয়াড়দের আবেদনে ভিএআরের সাহায্য নিয়ে রিপ্লেতে দেখা যায় ইচ্ছে করেই হাত নিচে নামিয়ে বল ফিরিয়েছিলেন পেরিসিচ। পেনাল্টির সিদ্ধান্ত দেন তিনি। আর সে পেনাল্টি থেকে গোল আদায় করে নিতে কোন ভুল করেননি গ্রিজম্যান। এর আগে ফ্রান্সের যত ম্যাচে গোল করেছেন গ্রিজম্যান তার কোন ম্যাচেই হারেনি তারা।

অথচ মিনিট দশেক আগে দলকে সমতায় ফিরিয়েছিলেন পেরিসিচই। বাঁ প্রান্ত থেকে ফ্রি কিক নিয়ে ডান প্রান্তে সতীর্থকে দেন মদ্রিচ। এরপর ডি বক্সের মধ্যে বল জটলা পাকালে পেরিসিচের দিকে বল ঠেলে দেন ভিদা। বল নিয়ন্ত্রণ করে এক ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে দুর্দান্ত এক শটে বল জালে জড়ান পেরিসিচ।

তবে দ্বিতীয়ার্ধেই জমে ওঠে খেলা। ফাইনাল তখন হয় ফাইনালের মতোই। একের পর এক আক্রমণ প্রতি-আক্রমণে খেলতে থাকে দুই দলই। শুরুতে গোল শোধে মরিয়া হয়ে খেলতে থাকে ক্রোয়েশিয়া। ৪৭ মিনিটে গোল প্রায় পেয়েও গিয়েছিল দলটি। রেবিচের শট ঝাঁপিয়ে দারুণ দক্ষতায় ফিরিয়ে দেন ফরাসী অধিনায়ক ও গোলরক্ষক হুগো লরিস। চার মিনিট পর পগবার বাড়ানো বলে গোলরক্ষককে একা পেয়ে গিয়েছিলেন এমবাপে। কিন্তু সুবাসিচকে ফাঁকি দিতে পারেননি এ তরুণ।

৫৮ মিনিটেই ব্যবধান বাড়িয়ে নেয় ফ্রান্স। এমবাপের কাছ থেকে বল পেয়ে গ্রিজম্যান বল দেন পগবাকে। তার বাঁপায়ের প্রথম শটটি ফেরাতে পেরেছিলেন ক্রোয়েট ডিফেন্ডার। তবে ফিরতি বলে ডান পায়ের পরের শট আর ফেরাতে না পারলে দূরপাল্লার দারুণ এক গোল পেয়ে যান এ ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড মিডফিল্ডার। পরের মিনিটেও দারুণ আক্রমণ করেছিল ফরাসীরা। তবে বিপদ হওয়ার আগেই কর্নারের বিনিময়ে ফেরান ক্রোয়েট ডিফেন্ডার।

৬৪ মিনিটে ক্রোয়েশিয়ার স্বপ্নে বড় ধাক্কাটা দেন এমবাপে। দুই খেলোয়াড়কে কাটিয়ে এমবাপেকে বল বাড়িয়েছিলেন হের্নান্দেজ। প্রায় ৩৫ গজ দূর থেকে ডান পায়ের জোরালো শটে লক্ষ্যভেদ করেন এমবাপে। ৪-১ গোলে পিছিয়ে পড়ে কার্যত তখনই শেষ হয়ে যায় ক্রোয়েশিয়ার আশা। তবে চার মিনিট পর ফরাসী অধিনায়কের ভুলে গোল পেলে কিছুটা জ্বলে ওঠে ক্রোয়েটদের স্বপ্ন। উমতিতির ব্যাক পাস পেয়ে মানজুকিচকে কাটাতে চেয়েছিলেন লরিস। কিন্তু মানজুকিচের বাড়ানো পায়ে বল লেগে জালে চলে গেলে গোল পায় ক্রোয়েশিয়া।

এরপর বেশ কিছু সুযোগ পেয়েছিল ক্রোয়েশিয়া। সুযোগ পেয়েছিল ফ্রান্সও। তবে আর গোল হয়নি। ৭৭ মিনিটে রাকিতিচের শট অল্পের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। ৮৮ মিনিটেও হতাশ হতে হয় রাকিতিচকে। এবারও তার দারুণ শট অল্পের জন্য লক্ষ্যে থাকেনি। ম্যাচের শেষ দিকে ফাঁকায় বল ধরতে পারলে গোল পেতে পারতেন পগবা। তবে হারলেও টুর্নামেন্ট সেরা হয়ে গোল্ডেন বল জিতে নেন ক্রোয়েশিয়ার অধিনায়ক লুকা মদ্রিচ। আর গোল্ডেন বুট জিতেন ইংল্যান্ডের অধিনায়ক হ্যারি কেইন।

Comments

The Daily Star  | English

Students besiege HC demanding resignation of 'pro-AL fascist judges'

A group of students marched to the High Court premises to besiege the court, demanding the resignation of "pro-Awami League fascist judges"

1h ago