অরাজক পরিস্থিতি দেখে বলেছিলাম কোটা থাকবে না: প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সাম্প্রতিক কোটা বিরোধী আন্দোলন প্রচ্ছন্নভাবে সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের কোটার বিরুদ্ধেই আন্দোলন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনে হামলা ও আন্দোলনে অরাজক পরিস্থিতি দেখে তিনি কোটা বাতিলের ঘোষণা দিয়েছিলেন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী গতকাল মঙ্গলবার মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানী ভাতা ইলেক্ট্রনিক পদ্ধতিতে সরাসরি (জিটুপি) মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যাংক হিসাবে প্রদান কার্যক্রম উদ্বোধনকালে একথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের প্রয়োজনীয় সংখ্যায় পাওয়া না গেলে সুপ্রিম কোটের একটি নির্দেশনার আলোকে সরকার মেধা তালিকা থেকে শূন্য পদ পূরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা আদালতের নির্দেশ অমান্য করতে পারি না এবং মুক্তিযোদ্ধাদের কোটা বাতিল করতে পারি না। কাজেই আমরা কেবিনেট সচিবের নেতৃত্ব একটি কমিটি গঠন করে দিয়েছি এই বিষয়টি দেখার জন্য।’
প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের সাহায্যে কক্সবাজার জেলার সুবিধাভোগী, প্রশাসন এবং রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সঙ্গে কথোপকথনের মাধ্যমে ডিজিটাল পদ্ধতিতে মুক্তিযোদ্ধাদের অ্যাকাউন্টে এই সম্মানী ভাতা প্রদান কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, স্বাধীনতার পর জাতির পিতা মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ৩০ শতাংশ কোটা বরাদ্দ করেন। সেই সঙ্গে নারীদের জন্য ১০ শতাংশ এবং প্রতিবন্ধীদের জন্য কোটার ব্যবস্থা করেন।
তিনি বলেন, ’৯৬ সালে সরকার গঠনের পর সরকারি চাকরির জন্য কোন মুক্তিযোদ্ধাকে পাওয়া যেত না। ফলে, সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান এবং নাতি-নাতনীদের অন্তর্ভুক্তির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। যাতে রাষ্ট্রপরিচালনায় মুক্তিযোদ্ধাদের অংশগ্রহণ থাকে।’
প্রধানমন্ত্রী এ সময় কোটা সংস্কার আন্দোলন সমর্থনকারীদের উদ্দেশ্য করে বলেন, কিছু বুদ্ধিজীবী যাদের আদালতের রায় সম্পর্কে কোন জ্ঞান নেই তারা ‘টক শো’তে যখন মুক্তিযোদ্ধা কোটার বিরুদ্ধে কথা বলেন তখন আমার দুঃখ হয়। আন্দোলনের নামে কতিপয় ছাত্র ভিসির বাড়িতে আক্রমণ করে লুটপাট করেছে। এর চেয়ে গর্হিত কাজ শিক্ষার্থীর জন্য আর কী হতে পারে। সেটা নিয়ে তারা কোন উচ্চবাচ্য করেন না – যোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোটা বিরোধী আন্দোলনের নামে ভিসির বাড়িতে আক্রমণ, তাকে হত্যার প্রচেষ্টা এবং ভাঙচুর ও লুটপাট, একেবারে বেডরুমে ঢুকে লুটপাট চলেছে। অরাজক পরিস্থিতি দেখে আমি বলেছিলাম, ‘ঠিক আছে কোটা থাকবে না।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোটা থাকবে না কিন্তু সাথে সাথে আমাদের এটাও দেখতে হবে স্বাধীনতা বিরোধী যারা যুদ্ধাপরাধী তারা যেন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসতে না পারে, বা রাষ্ট্রীয় কোন পজিশন না পায় সেটাও দেখতে হবে।
তিনি বলেন, আপনারা জানেন যে, হাইকোর্টে একটা রিট হয়েছিল। সে রিটের প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট হুকুম দিল, এই ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা থাকবে, না হলে পদ শূন্য থাকবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটি যখন আপিল বিভাগে যায় তখন আপিল বিভাগ একটা রায় দেয়- ‘কোটা পূরণ করে যদি কোন শূন্য পদ থাকে তাহলে মেধা তালিকা থেকে তা পূরণ করা যাবে।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীর কাছ থেকে তিনি বিষয়টি অবহিত হয়েই কেবিনেট সচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি করে দেন। কারণ, হাইকোর্টের রায় তিনি অবমাননা করতে পারেন না ।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আকম মোজাম্মেল হক অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব অপরূপ চৌধুরী এই প্রকল্প এবং মন্ত্রণালয়ের কর্মকাণ্ডের ওপর একটি প্রেজেন্টেশন অনুষ্ঠানে উপস্থাপন করেন। মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন।
অপরূপ চৌধুরী জানান, ২ লাখ ৩০ হাজার ৪৩৮ জন গেজেটেড মুক্তিযোদ্ধার মধ্যে ১ লাখ ৮৬ হাজার ৪০৪ জন এই ডিজিটাল পদ্ধতি সরাসরি তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে এই ভাতা পাবেন। প্রত্যেকে ১০ হাজার করে টাকা পাবেন। সঙ্গে বাংলা নববর্ষের ভাতাসহ দুই ঈদে দুটি উৎসব ভাতাও থাকবে।
Comments