পছন্দের ফরম্যাট, অনুপ্রেরণাদায়ী অধিনায়ক পেয়ে জয়ে ফিরল বাংলাদেশ

পছন্দের ফরম্যাট, মাননসই পিচ আর অনুপ্রেরণাদায়ী অধিনায়ক। ওয়েস্ট ইন্ডিজে গিয়ে দিশেহারা বাংলাদেশ এই তিনটি পেয়ে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়ালো। উইকেটের হাবভাব পড়ে পরিণত ব্যাটিং, পরে শরীরী ভাষায় তেজ দেখানো বোলিং। সব মিলে যাওয়ার দিনে বাংলাদেশ জিতেছে বড় ব্যবধানে। ব্যাটে বলে দলের তিন বড় তারকা সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবার আর অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা রেখেছেন মূল ভূমিকা।
Bangladesh Cricket team
উইকেট পেয়ে মাশরাফি উল্লাস। ফাইল ছবি: এএফপি

পছন্দের ফরম্যাট, মাননসই পিচ আর অনুপ্রেরণাদায়ী অধিনায়ক। ওয়েস্ট ইন্ডিজে গিয়ে দিশেহারা বাংলাদেশ এই তিনটি পেয়ে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়ালো। উইকেটের হাবভাব পড়ে পরিণত ব্যাটিং, পরে শরীরী ভাষায় তেজ দেখানো বোলিং। সব মিলে যাওয়ার দিনে বাংলাদেশ জিতেছে বড় ব্যবধানে। ব্যাটে বলে দলের তিন বড় তারকা সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবার আর অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা রেখেছেন মূল ভূমিকা।

গায়ানায়  বাংলাদেশের করা ২৭৯ রানের জবাবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৫০ ওভারে থামে ৯ উইকেটে ২৩১  রানে। জেসন হোল্ডারের দলের ৯ উইকেট পড়ে যায় ১৭২ রানেই। শেষ উইকেট দেবেন্দ্র বিশু আর আলজেরি জোসেফ মিলে ৫৯ রান যোগ করে পরাজয়ের ব্যবধানই কমিয়েছেন কেবল। ৪৮ রানে অনায়াসে জিতে তিন ম্যাচ সিরিজ তাই ১-০ তে এগিয়ে গেল মাশরাফি মর্তুজার দল। ব্যাট হাতে তামিমের ১৩০, সাকিবের ৯৭ রানের পর ৩৭ রানে ৪ উইকেট নিয়ে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন মাশরাফি।

মন্থর উইকেটে ২৮০ রানের লক্ষ্যটা বেশ বড়োসড়োই ছিল। কেবল খুব বেশি এলোমেলো বল করলেই ম্যাচটা হাতছাড়া হতে পারত বাংলাদেশের। কিন্তু শুরু থেকেই মাশরাফি আর মেহেদী হাসান মিরাজ মিলে চেপে ধরেন ক্রিস গেইল আর এভিন লুইসকে।বল ধীরে আসছিল ব্যাটে, মিরাজ পাচ্ছিলেন টার্ন। মাপা লাইন-লেন্থকে অস্ত্র বানিয়ে বল করে যাচ্ছিলেন মাশরাফি। রান রেটের চাপে হাঁসফাঁস করতে গিয়ে তাতেই উইকেট দিয়েছে ক্যারিবিয়ানরা।

প্রথম আঘাত অধিনায়কেরই। রান বাড়ানোর তাড়ায় মাশরাফিকে মিড অফ দিয়ে উড়াতে গিয়েছিলেন লুইস। কিন্তু পার করতে পারেননি মাহমুদউল্লাহকে। নবম ওভারে তখন সবে ২৭ রান উঠেছে বোর্ডে।

আক্রমানাত্মক গেইল ওদিকে মোটেও সুবিধা করতে পারছিলেন না। মিরাজের বলে বাংলাদেশ রিভিউ নিলে তার দৌড় থেমে যেত ত্রিশের ঘরেই। তবে জীবন পেয়েও বেশিদূর এগুতে পারেননি। শিমরন হেটমায়ারের সঙ্গে ভুলবোঝাবুঝিতে ৪০ রান করে রান আউট হয়েছেন গেইল। ৪০ রান করতেই লাগিয়েছেন ৬০ বল।তার আগে বল করতে এসেই শাই হোপকে তুলে নিয়েছিলেন রুবেল। যদিও রিপ্লে দেখে রিভিউ না নেওয়ার আফসোসে পুড়তে পারেন হোপ। একপ্রান্তে টিকে থাকা হেটমায়ারকে সঙ্গ দিতে পারেননি জেসন মোহাম্মদ। মিরাজের ফ্লাইট বুঝতে না পেরে হয়েছেন সহজ স্টাম্পিং।

হেটমায়ারও বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। ফিফটির পরই মোস্তাফিজের বলে কাভারে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান তিনি। পরের বলেই রোবমান পাওয়েলকে উইকেটের পেছনে ক্যাচ বানান মোস্তাফিজ। ৩৬তম ওভারে ততক্ষণে ১৪১ রানে ৬ উইকেট খুইয়ে খাদের কিনারে চলে যায় স্বাগতিকরা। ১০ রান পর জেসন হোল্ডারকে বিদায় করে উইন্ডিজের সব সম্ভাবনাই যেন মুছে দেন মাশরাফি।  আন্দ্রে রাসেল নেমে বিশাল ছক্কা মেরে হম্বিতম্বি দেখাচ্ছিলেন। গতির বৈচিত্র্য দিয়ে তাকেও ছাটাই করেন টাইগার অধিনায়ক। মাশরাফিকে উড়াতে গিয়ে লং অনে ক্যাচ দেন রাসেল। ফলাফল নিয়ে সব জল্পনাই তখন শেষ। পরে অ্যাশলে নার্সকে আউট করে নেন নিজের চার নম্বর উইকেট। ১০ ওভার বল করে ৩৭ রানে চার উইকেট নিয়ে মাশরাফিই দলের সেরা বোলার।

এর আগে টস জিতে ব্যাটিং নেওয়া বাংলাদেশ  শুরুতেই হারায় এনামুল হক বিজয়ের উইকেট। ওয়েস্ট ইন্ডিজে গিয়ে প্রস্তুতি ম্যাচে কোন রান না পেলেও একাদশে তামিমের সঙ্গী হয়েছিলেন বিজয়। সুযোগটা কাজে লাগাতে পারেননি। এবারও শূন্য রানে জেসন হোল্ডারের বলে জায়গায় দাঁড়িয়ে খোঁচা মেরে ক্যাচ দেন স্লিপে। ১ রানে ১ উইকেট হারানোর পর বৃষ্টিতে কিছুক্ষণ খেলা বন্ধ থাকে।

বৃষ্টির পর সাবধানে এগুতে থাকেন সাকিব-তামিম। পিচের হাবভাব দ্রুতই পড়ে নিয়েছিলেন। তাই উইকেট আগলে রেখেই খেলার চেষ্টা করেছেন তারা। রান করেছেন ধুঁকে ধুঁকে। ত্রিশের ঘরে দুজনেই অবশ্য জীবন পেয়েছেন। অ্যাশলে নার্সের বলে তামিমের ক্যাচ ফেলে দেন উইকেট রক্ষক শাই হোপ। আলজেরি জোসেফের বলে স্লিপে সাকিবের ক্যাচ রাখতে পারেননি ক্রিস গেইল। ৮৪ রানে গিয়ে  সাকিব পরে জীবন পেয়েছেন আরেকবার। এবার দেবেন্দ্র বিশুর বলে স্কয়ার লেগে তার সহজ ক্যাচ ছেড়ে দেন হেটমায়ার। তবে ঐ বিশুর বলেই আউট হয়েছেন সাকিব। সেঞ্চুরি থেকে তিন রান দূরে এবার ক্যাচ নিয়ে প্রায়শ্চিত্ত করেন হেটমায়ার। তবে তার আগেই হয়ে গেছে রেকর্ড।  ২০৭ রান করে ওয়ানডেতে বাংলাদেশের দ্বিতীয় উইকেটে জুটির রেকর্ডটা করে নেন তারা। কোন সফরকারী দলেরও উইন্ডিজে গিয়ে এটি সর্বোচ্চ রানের জুটি। 

চারে নেমে রান পাননি সাব্বির রহমান। বিশুর টার্নে পরাস্ত হয়ে ক্রিজ থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন, সময়মত ফিরতে পারেননি। পরে রিপ্লে দেখে তাকে অবশ্য দুর্ভাগাই মনে হয়েছে। তার আগেই ১৪৬ বলে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের মন্থরতম সেঞ্চুরি তুলে নেন তামিম, ওয়ানডেতে বাংলাদেশেরও এটি সবচেয়ে ধীরগতির সেঞ্চুরির রেকর্ড। সব পোষাতে শেষ দিকে নেমে ব্যাটে ঝড় তুলেন মুশফিকুর রহিম, হাত খুলেন তামিমও । তাতে ২৭৯ রানের শক্ত পূঁজি পায় বাংলাদেশ। সংগ্রহটা যে বেশ বড়ই ছিল বল হাতে পরে তা বুঝিয়ে দিয়েছেন বাংলাদেশের বোলাররা।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

বাংলাদেশ: ৫০ ওভারে ২৭৯/৪ (তামিম ১৩০*, এনামুল ০, সাকিব ৯৭, সাব্বির ৩, মুশফিক ৩০, মাহমুদউল্লাহ ৪*; রাসেল ১/৬২, হোল্ডার ১/৪৭, জোসেফ ০/৫৭ নার্স ০/৩৯, বিশু ২/৫২, মোহাম্মদ ০/১৫)

ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ৫০ ওভারে ২৩১/৯ (গেইল ৪০, লুইস ১৭, হোপ ৬, হেটমায়ার ৫২, মোহামেদ ১০, হোল্ডার ১৭, পাওয়েল ০, রাসেল ১৩, নার্স ৭, বিশু ২৯*, জোসেফ ২৯*; মাশরাফি ৪/৩৭, মিরাজ ১/৩৭, রুবেল ১/৫২, মোসাদ্দেক ০/২২, মুস্তাফিজ ২/৩৫, সাকিব ০/৪৩)

ফল: বাংলাদেশ ৪৮ রানে জয়ী।



ম্যান অব দ্য ম্যাচ: তামিম ইকবাল 

 

Comments

The Daily Star  | English

One month of interim govt: Yunus navigating thru high hopes

A month ago, as Bangladesh teetered on the brink of chaos after the downfall of Sheikh Hasina, Nobel Laureate Muhammad Yunus returned home to steer the nation through political turbulences.

5h ago