বন্ধই হয়ে গেল বড়পুকুরিয়া বিদ্যুৎকেন্দ্র

বড়পুকুরিয়া বিদ্যুৎকেন্দ্র। ছবি: আবু সাদিক

কয়লা সংকটে বন্ধ হয়ে গেল বড়পুকুরিয়ায় বিদ্যুৎ উৎপাদন। খনি থেকে উত্তোলন করে রাখা ১ লাখ ৪২ হাজার টন কয়লা ‘গায়েব’ হয়ে যাওয়ার ফলাফল হিসেবে গত রাত থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বিদ্যুৎকেদ্রটি পুরোপুরিভাবে বন্ধ হয়ে যায়।

উৎপাদন থেমে যাওয়ার পর কেন্দ্রটির প্রধান প্রকৌশলী আব্দুল হাকিম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘রাত সাড়ে ১০টায় বিদ্যুৎ উৎপাদন অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।’ দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলায় অবস্থিত এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের সুপারিনটেন্ডেন্ট মাহবুবুর রহমান জানান, কেন্দ্রটির সর্বোচ্চ ক্ষমতা ছিল ৫২৫ মেগাওয়াট। তবে সম্প্রতি জ্বালানি সংকট তৈরি হওয়ার আগ পর্যন্ত উৎপাদন ৩৮০ মেগাওয়াটের আশপাশে ছিল।

মোট তিনটি ইউনিট নিয়ে বড়পুকুরিয়া বিদ্যুৎকেন্দ্র। তিনটিতেই কয়লা আসত পাশের কয়লা খনিটি থেকে। কিন্তু কয়লা সরবরাহ কমতে থাকায় এ মাসের শুরুর দিকেই একটি ইউনিট বন্ধ হয়ে যায়। অপর একটি ইউনিট বন্ধ হয় গত বুধবার। সর্বশেষ চালু থাকা ২৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতার ইউনিটটিও গতরাতে বন্ধ হয়ে গেল।

বিদ্যুৎকেন্দ্রটি পূর্ণ ক্ষমতায় চালাতে প্রতিদিন ৩ হাজার ৩০০ টন কয়লার প্রয়োজন হলেও শেষ কয়েকদিনে সরবরাহ কমতে কমতে ৬০০ টনে এসে ঠেকেছিল।

বিদ্যুৎকেন্দ্রে কয়লা সংকটের বিষয়টি সামনে আসার পর জানা যায় খনি থেকে উত্তোলন করে ইয়ার্ডে রাখা ১ লাখ ৪২ হাজার টন কয়লা গায়েব হয়ে গেছে। বর্তমান বাজার মূল্যে এই কয়লার দাম ২২৭ কোটি টাকার ওপরে। গত সোমবার বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) সদস্য আবু সাঈদ কয়লা খনি এলাকা পরিদর্শনে যাওয়ার পর কয়লা গায়েব হওয়ার কথা প্রথম জানা যায়।

এই ঘটনায় বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানির (বিসিএমসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও একজন মহাব্যবস্থাপককে প্রত্যাহার করা হয়েছে। আরও একজন মহাব্যবস্থাপক ও উপ-মহাব্যবস্থাপককে সাময়িক বরখাস্ত করেছে খনি কোম্পানিটির নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান পেট্রোবাংলা।

তবে কয়লাখনির কর্মকর্তারা দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করে বলছেন, বছরের পর বছর ধরে সিস্টেম লস হয়েছে। কিন্তু এগুলো কখনওই সমন্বয় করা হয়নি। প্রত্যক্ষ ফলাফল হিসেবে কয়লা সংকট তৈরি হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক খনির এক কর্মকর্তা বলেন, ২০০৫ সালে খনি থেকে কয়লা উত্তোলন শুরু হওয়ার পর থেকে সিস্টেম লস হয়ে কয়লা কমেছে। তার ভাষ্য, কয়লা বৃষ্টির পানিতে ভিজে, ধুলা ও আর্দ্রতার কারণে কমে গেছে। আবার কয়লা আপনা আপনি জ্বলে গিয়ে থাকতে পারে বলেও তিনি দাবি করেন।

পদচ্যুত মহাব্যবস্থাপক আবুল কাশেম প্রধানিয়া গতকাল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, কয়লায় সিস্টেম লস ১ দশমিক ৪০ শতাংশ। কিন্তু এর আগে কখনই এটাকে বিবেচনায় আনা হয়নি।

তবে খনিতে কর্মরত অন্য সূত্রগুলো বলছে, উত্তোলন করা কয়লা ছয় মাসের বেশি ইয়ার্ডে ফেলে রাখলেই কেবল এরকম সিস্টেম লস হতে পারে। বাস্তবতা হলো, উত্তোলনের প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই কয়লা বিপিডিবি ও ইটভাটা মালিকসহ স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে দেওয়া হয়। পূর্বে কয়লা খনিটিতে ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে কাজ করেছেন পেট্রোবাংলার এমন দুজন কর্মকর্তাও সিস্টেম লসের দাবি উড়িয়ে দেন।

Comments

The Daily Star  | English

Iran says 'main target' of attack that hit Israel hospital was military site

Iran and Israel traded further air attacks on Thursday as Trump kept the world guessing about whether the US would join Israel's bombardment of Iranian nuclear facilities.

15h ago