ইমরানের রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও নির্বাচন কমিশনের ব্যর্থতা
রাজনৈতিক ক্ষমতার চূড়ায় আরোহণের জন্যে দীর্ঘদিন ধৈর্যের সঙ্গে লড়াই করেছেন ইমরান খান। অবশেষে, সফল হয়েছেন তিনি। এখন, সাবেক ক্রিকেটার ইমরান পাকিস্তানের ভবিষ্যৎ প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন। নির্বাচনের আগের ও পরের বিতর্কিত ঘটনাগুলো দেখলে বোঝা যায় যে দেশটির জাতীয় রাজনীতি পরিচালনায় পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই)-এর এই নেতার যথেষ্ট প্রজ্ঞা রয়েছে।
শুক্রবার পাকিস্তানের প্রভাবশালী ডন পত্রিকার এক সম্পাদকীয়তে বলা হয়, গতকাল জাতির উদ্দেশে দেওয়া আবেগময় ভাষণে ইমরান পাকিস্তানের আর্থ-সামাজিক, সরকারি ব্যবস্থাপনা ও বিদেশনীতিতে সংস্কারের কথা বলেছেন। এবং তার সেই ইচ্ছেগুলো বাস্তবায়নের সংকল্পও করেছেন। কিন্তু, এই দুর্ভাগা জাতির জীবনে সেসব সংস্কার বাস্তবায়নের বিষয়ে আগের সব সরকারের ভূমিকা ছিলো নিতান্তই দুর্বল। সেই পরিস্থিতির পরিবর্তন হওয়া প্রয়োজন বলেও মন্তব্য করা হয় সম্পাদকীয়টিতে। আশাবাদ ব্যক্ত করা হয় একটি সমৃদ্ধশালী, আধুনিক ও প্রতিবেশীদের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক বজায়কারী পাকিস্তানের। কেননা, অধিকাংশ পাকিস্তানিই এমনটি আশা করেন বলেও সম্পাদকীয়টিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
ইমরান ও তার পিটিআই সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার জন্যে জোরালো ভূমিকা পালন করছে। কিন্তু, পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশন পালন করছে একটি অবাক করার মতো ধ্বংসাত্মক ভূমিকা।
ভোট গণনা ও ফলাফল ঘোষণার ক্ষেত্রে কমিশনের অব্যবস্থাপনার ফলে বলা যেতে পারে যে কমিশনের সব জ্যেষ্ঠ কর্তাব্যক্তিদের নির্বাচনের বাকি কাজগুলো শেষ করার পর পদত্যাগ করা উচিত। এছাড়াও, কমিশনের এমন ব্যর্থতার কারণ খতিয়ে দেখতে দ্রুত উচ্চ-পর্যায়ের তদন্ত হওয়া প্রয়োজন।
ভোটের প্রাথমিক ফল ঘোষণাকে কেন্দ্র করে কমিশনের কালক্ষেপণ কোনো মতেই গ্রহণযোগ্য নয়। এর ফলে, নির্বাচনকে নিয়ে অনিয়মের অভিযোগগুলো আরও শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। নির্বাচন চলাকালে ভোটকেন্দ্র থেকে পিটিআই ছাড়া অন্য দলগুলোর এজেন্টদের বের করে দেওয়ার অভিযোগটি ভীষণ বিব্রতকর। নির্বাচনী নীতিমালা ভাঙ্গার খবরগুলো নিয়ে পুরো নির্বাচনী ব্যবস্থাকে সন্দেহের মুখে ফেলে দেওয়ার মতো কাজ বিরোধীরা করেননি বলে তারা ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য।
তবে গত এক দশক দেশজুড়ে জাতীয়, প্রাদেশিক ও স্থানীয় সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার ফলে নির্বাচন কমিশন ক্ষমতাবান, স্বাধীন ও সমৃদ্ধ হয়ে উঠেছে। কিন্তু, সেগুলোকে কাজে লাগিয়ে কমিশন তাদের বিরুদ্ধে আনা বিতর্কগুলোর ঊর্ধ্বে উঠতে পারতো। একটি দেশের নির্বাচন কমিশনের কাজই তো তাই। কিন্তু, কমিশনের কর্মকর্তারা গণমাধ্যমের সামনে যেভাবে মুখ মুছে সব অস্বীকার করে গেলেন তাতে সবাই আরও বেশি বিভ্রান্ত হয়েছেন।
পাকিস্তান এমন একটি দেশ যেখানে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো দুর্বল। আর সেখানে নির্বাচন হওয়ার আগেই অনিয়মের এতো এতো অভিযোগ। আর সঙ্গে রয়েছে সন্ত্রাসী হামলা। আসলে দেশটিতে প্রয়োজন একটি স্বচ্ছ-শান্তিপূর্ণ নির্বাচন। কিন্তু, সব মিলিয়ে দেখা গেলো যে কমিশন ঐতিহাসিক ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। কিন্তু, এর জবাবদিহিতা অবশ্যই দিতে হবে।
এ মুহূর্তে দক্ষিণ এশীয় এই দেশটিতে যখন রাজনৈতিক বিভাজন চলছে তখন পিটিআই-এর নেতা-কর্মীরা উৎসবে মেতেছেন। আর নতুন বিরোধীরা চিৎকার করছেন অনিয়মের অভিযোগ তুলে। এর কোনটাই অপ্রত্যাশিত নয়। বাস্তবতা হলো এ বছরের নির্বাচন অনেক আগেই প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে গেছে। এরপর, নির্বাচন কমিশনের ব্যর্থতা যোগ করেছে বাড়তি অনিশ্চয়তা ও বিভ্রান্তি।
এখন সব দলকেই সতর্ক হতে হবে। তাদেরকে দিতে হবে রাজনৈতিক প্রজ্ঞার পরিচয়। ইমরানের গতকালের ভাষণ আশার আলো দেখিয়েছে। এখন অনিয়মের অভিযোগগুলো নিয়ে বিরোধীদের এগোতে হবে যথাযথ নিয়ম মেনে।
সংসদীয় ব্যবস্থা বা পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদকে শক্তিশালী করার লক্ষ্য হাতে নিতে হবে সব রাজনৈতিক দলকেই। সরকারের কাজের দিকে বিরোধীদের রাখতে হবে তীক্ষ্ণ নজর। রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পথ সুগম করে দিতে হবে। আর এগুলোই হোক তাদের আগামী দিনের প্রতিজ্ঞা।
Comments