বাংলাদেশের স্বস্তির সিরিজ জয়

Mashrafee Mortaza

ক্রিস গেইলের ঝড় থামিয়ে প্রায় ১০ ওভার আগেই খেলা নিজেদের পকেটে পুরে ফেলেছিল বাংলাদেশ। সেখানে বাগড়া দেন রোবম্যান পাওয়েল। তার শেষের ঝড়ে জমে উঠে ম্যাচ, তবে এবার আর ভুল করেনি বাংলাদেশ। মাথা ঠান্ডা রেখে সামাল দিয়েছে পরিস্থিতি। ওয়েস্ট ইন্ডিজে গিয়ে টেস্ট সিরিজে নাজেহাল টাইগাররা ঠিকই জিতে নিয়েছে ওয়ানডে সিরিজ। বেশ কয়েকদিন থেকে দেশের ক্রিকেটে জমা হতে থাকা কালো মেঘ সরিয়েই যেন জিতল মাশরাফি মর্তুজার দল। 

সেন্ট কিটসে আগে ব্যাট করে বাংলাদেশের করা ৬ উইকেটে ৩০১ রানের জবাবে ক্যারিবিয়ানরা থামে ৬ উইকেটে  ২৮৩ রানে। এই ম্যাচ ১৮ রানে জিতে তাই ওয়ানডে সিরিজে জয় এল ২-১ ব্যবধানে । গায়ানায় প্রথম ওয়ানডে ৪৮ রানে জেতার পর দ্বিতীয় ওয়ানডেতে নাটকীয়ভাবে ৩ রানে হারার পর ঘুরে দাঁড়িয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে দ্বিতীয়বারের মতো সিরিজ জিতল বাংলাদেশ।  

ক্রিস গেইলের  ৭৩ রানের পর পাওয়েলের ৭৪। ওয়েস্ট ইন্ডিজের পক্ষে যা করার করলেন এই দুজনেই। মাঝে শাই হোপের ৬৪ রানের ইনিংসের মন্থর গতি মূলত ভুগিয়েছে স্বাগতিকদেরই। ৬৩ রানে ২ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের সেরা বোলার মাশরাফি। ৩৫ রানের এক ক্যামিওর সঙ্গে থাকছে অধিনায়কত্বের ঝলকও। তবে শতক হাকানোয় ম্যাচ সেরা তামিম ইকবালই।

শেষ দুই ওভারে জিততে হলে ৩৪ রান লাগত ওয়েস্ট ইন্ডিজের। বল করতে এলেন রুবেল হোসেন। শঙ্কাও জেগেছিল হয়ত কারো কারো মনে। শেষ দিকে এলোমেলো হয়ে যাওয়ার নজির তো তার একাধিকবার। তবে এবার করলেন দারুণ। ৪৯তম ওভার থেকে দিলেন মাত্র ৬ রান। তখনই আসলে জয়োৎসব নিশ্চিত বাংলাদেশের। শেষ ওভারের প্রথম বলে ছক্কা খেলেও বাকিটায় কোন ভুল করেননি মোস্তাফিজ।

অর্ধেক কাজটা অবশ্য ব্যাট হাতেই করে রেখেছিল টাইগাররা। দাঁড় করাতে পেরেছিল চ্যালেঞ্জিং স্কোর। মাথা খাটিয়ে তা ডিফেন্ড করেছেন বোলাররা।

তামিম ইকবালের সেঞ্চুরি, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ঝড়ো ফিফটি আর মাশরাফি মর্তুজার ক্যামিও বাংলাদেশকে পাইয়ে দেয় শক্ত সংগ্রহ।

একাদশ সেঞ্চুরি করা তামিম ১২৪ বলে ১০৩ রান করে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন। প্রথমে সময়ে নিয়ে ব্যাট করার পর ধীরে ধীরে বাড়িয়েছেন রান। দারুণ সিরিজ খেলা তামিমের ব্যক্তিগত ঝুলিতেও যুক্ত হয়েছে পালক। এই নিয়ে দেশের বাইরে তিন ম্যাচের সিরিজে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে দ্বিতীয় সেঞ্চুরি হয়ে যায় তার। ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে কোন সফরকারী ব্যাটসম্যানের সর্বোচ্চ রানের রেকর্ডও।

বাংলাদেশের ইনিংসের শেষ দিকের হিরো অবশ্য মাহমুদউল্লাহ।  ৪৯ বলে ৬৭ রান করে অপরাজিত থেকেই মাঠ ছেড়েছেন।

শুরুর বিপর্যয়টা এনামুল হকের পতনে। আগের ম্যাচে ঝড়ো শুরু করেছিলেন এনামুল। এই ম্যাচে যেন একদম উলটো। ঢুকে গেলেন খোলসে। তার অতি মন্থর ব্যাটিংয়ে শুরুর দিকে রানও উঠল কম। শেষ পর্যন্ত ৩২ বলে ১০ রানের ইনিংস থেমেছে দৃষ্টিকটু আউটে। অল্প গতির জেসন হোল্ডারের বাউন্সার তুলে দেন আকাশে। তিন বছর পর দলে ফিরে চলতি বছরে সাত ওয়ানডে খেলে করতে পেরেছেন মাত্র ৮৮ রান। গড়টা মাত্র ১২.৫৭। এনামুল হয়ত সামনের এশিয়া কাপ থাকার আশাটা আর করবেন না।

এদিনও দ্বিতীয় উইকেটে তামিমের সঙ্গে হাল ধরেন সাকিব আল হাসান। তাদের ৮১ রানের জুটি থামে সাকিবের আউটে। ৪৪ বলে ৩৭ করা সাকিব ফেরেন অ্যাশল নার্সের বলে বাজে শট খেলে। নার্সের বলে বাজে শট খেলে ফিরেছেন মুশফিকুর রহিমও। ১২ রান করে স্কুপ করতে গিয়ে হয়েছেন বোল্ড।

চতুর্থ উইকেট তামিমের সঙ্গে ৪৮ রানের জুটি গড়ে উঠে মাহমুদউল্লাহর। দলের ঠিক ২০০ রানের তামিমের বিদায়ের সময়ও প্রায় ১১ ওভার বাকি ছিল। তখনই অনেকটা চমকে দিয়ে ছয় নম্বরে ব্যাট করতে আসেন অধিনায়ক মাশরাফি। দ্রুত রান বাড়ানোর তার এই ফাটকা কাজেও লেগে যায় বেশ। ৪ বাউন্ডারি আর এক ছক্কায় ২৫ বলে ৩৬ রান করে রানের চাকা উর্ধ্বমুখি করে দিয়ে যান মাশরাফি। তার রেশ ধরেই শেষটায় ঝড় তুলেন মাহমুদউল্লাহ। ৬৭ রানের ইনিংসে মেরেছেন ৫ চার আর তিন ছক্কা। তবে আরও একবার হতাশ করেছেন সাব্বির রহমান। নানান বিতর্কে জড়িয়ে থাকা এই ব্যাটসম্যান ৯ বলে ১২ রান করে ক্যাচ তুলে দেন আকাশে। তবু মাহমুদউল্লাহ ছিলেন বলে তিনশ ছাড়িয়ে যায় বাংলাদেশ । ওয়ানডেতে ওয়েস্ট  ইন্ডিজের বিপক্ষে এটাই বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সংগ্রহ।

বড় লক্ষ্যে ওয়েস্ট ইন্ডিজের শুরুটা রয়েসয়ে করেন দুই ওপেনার ক্রিস গেইল ও এভিন লুইস। ব্যাটে বল আসছিল ভাল, মাঠও ছোট। সেই ফায়দা তুলে গেইলই সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আলগা করেছেন বাধন।

প্রথম ১০ ওভারে ৫৩ রান করে প্রথম উইকেটের পর। আবারও ব্রেক থ্রো এনে দেন মাশরাফি মর্তুজাই। আবার প্রথম উইকেট লুইসের। টানা তিন ম্যাচে এই ওপেনারকে আউট করেন মাশরাফি। এবার লাফিয়ে উঠা অফ কাটারে ব্যাট ছুঁইয়ে লুইস ক্যাচ দেন উইকেটের পেছনে।

কিন্তু আরেকদিকে গেইলকে থামানো যাচ্ছিল না। গুণে গুণে ৫টা ছক্কা মেরেছেন এই ব্যাটিং দানব। পাঁচবারই বল হারানোর দশা। গেইল না থামায় বল করতেও আসছিলেন না  সাকিব আল হাসান। বাঁহাতি স্পিনটা গেইল খুব ভাল খেলেন, এই শঙ্কা থেকেই হয়ত সাকিবের এই কৌশল। গেইল থেমেছেন রুবেলের বলে, ৬৬ বলে ৭৩ রান করে। ততক্ষণে ক্যারিবিয়ানদের রানও পেরিয়েছে তিন অঙ্ক। রুবেলকে লং অন দিয়ে উড়াতে গিয়ে টাইমিংয়ের গোলমালে ধরা পড়েন মিরাজের হাতে। গেইলের আউটের পরের ওভারেই বল হাতে নেন সাকিব।

বাংলাদেশের স্পিনারদের চেপে ধরায় রানের চাকা মন্থর হতে থাকে উইন্ডিজের। শাই হোপই নামিয়ে দেন রানরেট। সেই চাপ সরাতে গিয়ে মিরাজের বলে বোল্ড হয়ে ফেরেন আগের দুই ম্যাচে রান পাওয়া শিমরন হেটমায়ার। খানিক পর মিরাজের বলেই আরেক উইকেট পায় বাংলাদেশ। এবার হোপের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে ফেরেন কাইরন পাওয়েল।

তখন ভালোভাবেই ম্যাচে ফিরেছে বাংলাদেশ। ম্যাচ জিততে ওভারপ্রতি ১০ এর উপর রান করতে হতো জেসন হোল্ডারদের। পাওয়াল ঝড়ে অনেকটা এগিয়ে পরে তীরে ভেড়া হয়নি তাদের।

৪০ ওভারের পরই আগ্রাসী খেলতে থাকে উইন্ডিজ। এর অবশ্য বিকল্পও ছিল না। মন্থর খেলতে থাকা হোপও মেরে খেলতে থাকেন। তবে শেষ স্পেলে বল করতে এসে তাকে থামান মাশরাফিই। ৯৪ বলে ৬৪ রান করা হোপ বাংলাদেশ অধিনায়ককে উড়াতে গিয়ে ক্যাচ দেন ডিপ স্কয়ার লেগে।

ওদিকে রোবম্যান পাওয়েল ছিলেন তেতে। মোস্তাফিজকে চার-ছয় মেরে ভড়কে দিয়েছিলেন পরিস্থিতি। বুদ্ধি করে থাকে আটকে রাখেন মাশরাফি। ৫ চার আর ৪ ছক্কায় ৪১ বলে পাওয়েলের ৭৪ রানের ইনিংস খেলার উত্তেজনায় কেবল বাড়িয়েছে।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ: ৫০ ওভারে ৩০১/৬ (তামিম ১০৩, এনামুল ১০, সাকিব ৩৭, মুশফিক ১২, মাহমুদউল্লাহ ৬৭*, মাশরাফি ৩৬, সাব্বির ১২, মোসাদ্দেক ১১*; কট্রেল ১/৫৯, হোল্ডার ২/৫৫, বিশু ১/৪২, পল ০/৭৭, নার্স ২/৫৩, গেইল ০/১৪)

 
ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ৫০ ওভারে ২৮৩/৬ (গেইল ৭৩, লুইস ৩৩, হোপ ৬৪, হেটমায়ার ৩০, কাইরন পাওয়েল ৪, রোভম্যান পাওয়েল ৭৪*, হোল্ডার ৯, নার্স ৫*; মাশরাফি ২/৬৩, মিরাজ ১/৪৫, মুস্তাফিজ ১/৬৩, মোসাদ্দেক ১০/০, মাহমুদউল্লাহ ০/২০, রুবেল ১/৩৪, সাকিব ০/৪৫)

 
ফল: বাংলাদেশ ১৮ রানে জয়ী।

 
সিরিজ: বাংলাদেশ ২-১ ব্যবধানে জয়ী। 

 

 

 

 

Comments

The Daily Star  | English

No price too high for mass deportations

US President-elect Donald Trump has doubled down on his campaign promise of the mass deportation of illegal immigrants, saying the cost of doing so will not be a deterrent.

4h ago