‘তাদেরকে মানুষ হত্যার লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে’

এক পেশাদার গাড়িচালক হিসেবে জীবনের ৩০ বছর কাটিয়ে দিয়েছেন তিনি। তার স্বপ্ন ছিলো মেয়ে দিয়া খানম মিম বড় হয়ে একজন ব্যাংকার হবে। কিন্তু, এ কথা তিনি ঘুণাক্ষরেও বুঝতে পারেননি যে কোনো এক বেপরোয়া বাসচালকের গাড়ির চাকায় পিষে যাবে মেয়ের জীবন ও তাদের স্বপ্ন।
classmates
২৯ জুলাই ২০১৮, রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে র্যা ডিসন ব্লু হোটেলের সামনে বাসের ধাক্কায় শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের একাদশ বর্ষের শিক্ষার্থী দিয়া খানম মিমের মৃত্যুতে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে সহপাঠীরা। ছবি: আনিসুর রহমান

এক পেশাদার গাড়িচালক হিসেবে জীবনের ৩০ বছর কাটিয়ে দিয়েছেন তিনি। তার স্বপ্ন ছিলো মেয়ে দিয়া খানম মিম বড় হয়ে একজন ব্যাংকার হবে। কিন্তু, এ কথা তিনি ঘুণাক্ষরেও বুঝতে পারেননি যে কোনো এক বেপরোয়া বাসচালকের গাড়ির চাকায় পিষে যাবে মেয়ের জীবন ও তাদের স্বপ্ন।

কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে মিমের দুঃখভারাক্রান্ত বাবা জাহাঙ্গীর ফকির দ্য ডেইলি স্টারকে এ কথাগুলোই বলছিলেন। তিনি বলেন, “আমরা মেয়ের ইচ্ছা পূরণের জন্য যা কিছু দরকার তাই করার চেষ্টা করতেছিলাম। কিন্তু, আমাদের সব আশা ধূলায় মিশে গেলো।”

গতকাল (২৯ জুলাই) রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে রেডিসন ব্লু হোটেলের কাছে যে দুজন কলেজ শিক্ষার্থী সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান মিম (১৭) তাদের একজন।

চোখ মুছতে মুছতে মিমের বাবা জানান, শহীদ বীর বিক্রম রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের একাদশ বর্ষের ছাত্রী মিম সকাল সাড়ে ৭টার দিকে মহাখালী দক্ষিণপাড়ার বাসা থেকে বের হয়। কয়েক ঘণ্টা পর জাহাঙ্গীরের কাছে ফোন আসে। তিনি পান মেয়ের মর্মান্তিক মৃত্যুর খবর।

নিজেকে কিছুটা সামলে নিয়ে ঢাকা জেলা বাস-মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক নির্বাহী সদস্য জাহাঙ্গীর বলেন, অধিকাংশ সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে ‘অদক্ষ চালকের’ কারণে।

তার মতে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে গাড়ির মালিকরা চালক নেন যত কম টাকায় সম্ভব। কম টাকাতে যে কাজ করতে চায় তাকেই তারা কাজে নেয়। ফলে অনেক অদক্ষ চালক গাড়ি চালানোর কাজ পায়।

যেহেতু বিমানবন্দর সড়কের সেই এলাকায় দুটি হাসপাতাল ও একটি কলেজ রয়েছে তাই সেখানে এসে চালকদের সতর্ক হওয়া উচিত বলে মনে করেন জাহাঙ্গীর।

“কিন্তু, আমি প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছে শুনেছি, দুর্ঘটনার সময় দুই বাসের চালক রেষারেষি করছিলো,” মিমের বাবার দাবি, “আমি চালক ও তার চাকরিদাতার কঠোর শাস্তি চাই।”

তিনি বলেন, “গাড়ির মালিকেরা তাদের সঙ্গে সম্পর্ক ও পরিচিত লোকের সুপারিশ অনুযায়ী চালক ঠিক করেন। সেসময় তারা সেই ব্যক্তিদের গাড়ি চালানোর দক্ষতার দিকটি বিবেচনা করেন না। এর ফলে মালিকেরা তাদের চালকদের হাতে যেন মানুষ হত্যার লাইসেন্স তুলে দিতেছেন।”

এছাড়াও, অনেক মাদকাসক্ত ব্যক্তিও পেশাদার চালক হয়ে যাচ্ছেন বলেও উল্লেখ করেন সন্তানহারা সেই পিতা।

“আমি এমনও দেখেছি, অনেক চালক গাড়ি চালানো অবস্থাতেই মাদকসেবন করছেন। অনেকেরই সামান্যতম প্রশিক্ষণও নেই। গাড়ি চালানোর বিষয়ে তাদের মৌলিক জ্ঞানও নেই। এ ধরনের অদক্ষ চালকদের নিয়োগের বিষয়ে আমরা প্রায়ই গাড়ির মালিকদের সতর্ক করি,” বলেন জাহাঙ্গীর।

এদিকে, গাড়িচালকদের বেপরোয়া ভাব নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে বিরক্ত হন নৌপরিবহণমন্ত্রী শাহজাহান খান। তিনি বলেন, “ভারতের মহারাষ্ট্রে একটি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু, তাদের সাংবাদিকরা তো এভাবে কথা বলেন না?”

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ শ্রমিক ফেডারেশনের নির্বাহী সভাপতি সচিবালয়ে তার কার্যালয়ে বলেন, দুর্ঘটনায় দায়ী ব্যক্তিদের অবশ্যই শাস্তি হবে।

Comments

The Daily Star  | English

Teesta floods bury arable land in sand, leaving farmers devastated

40 unions across 13 upazilas in Lalmonirhat, Kurigram, Rangpur, Gaibandha, and Nilphamari are part of the Teesta shoal region

1h ago