আসামের নাগরিকপঞ্জি ইস্যু, উত্তপ্ত পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিও
আসামের নাগরিকপঞ্জি থেকে বাঙালি বাদ পড়ার ঘটনায় ক্রমশ পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য রাজনীতিও উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। রাজ্যের শাসক তৃণমূল কংগ্রেস এবং বিরোধী বিজেপি পাল্টাপাল্টি নিজেদের অবস্থান তুলে ধরছে।
তৃণমূলের অভিযোগ, বিজেপি দেশ জুড়ে বিভাজনের রাজনীতি প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে অস্থিরতা তৈরি করছে। আসামের ঘটনা, মানবিকতার সঙ্গে আগুন নিয়ে খেলার মতো বলেও মনে করে তারা।
উল্টো দিকে, বিজেপির দাবি দেশের শীর্ষ আদালতের নির্দেশনা মেনেই আসামে নাগরিকপঞ্জি সংশোধন করা হয়েছে। আর যারা বাদ পড়ছেন তাদেরও আবেদন করার সুযোগ আছে। তবে শীর্ষ আদালতের নির্দেশনা মেনে আগামীতে তারা ক্ষমতায় এলে পশ্চিমবঙ্গ থেকে একইভাবে অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করে বের করে দেওয়া হবে- এমন কড়া অবস্থানের কথা জানিয়েছে রাজ্য বিজেপি।
গতকাল (৩০ জুলাই) আসামে দ্বিতীয় দফার সংশোধিত নাগরিকপঞ্জি প্রকাশ করা হয়। সেখানে বাদ পড়েন ৪০ লাখ সাত হাজার বাঙালি ভাষাভাষী। আর সেই ঘটনায় দেশজুড়ে তুমুল বিতর্ক তৈরি হয়।
আসামের এই নাগরিকপঞ্জি প্রকাশ করারকে ‘বাঙালি খেদাও’ অভিযান হিসেবে উল্লেখ করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। তিনি এর কঠোর সমালোচনা করে গতরাতেই ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের সঙ্গে কথা বলতে দিল্লি পৌঁছান। এর আগে সেদিন দুপুরে রাজ্যটির সচিবালয়ের মমতা ঘটনাটির সমালোচনা করে আসামের বাঙালিদের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দেন।
তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় সরকার আসামের এই নাগরিকপঞ্জি তৈরির আগে বা পরে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের সঙ্গে কথা বলেনি। আসামের প্রতিবেশী রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ। ফলে আসামের যেকোনো কিছুর প্রভাব পড়ে রাজ্যটিতে।
মমতা ব্যানার্জি আরও বলেন, আসাম থেকে এই বাঙালিদের বাংলাদেশে পুশব্যাক করানো হবে আর বাংলাদেশ যদি এই পুশব্যাক মেনে না নেয় তবে কি পরিস্থিতি তৈরি হবে- সেটি ভেবে দেখা উচিৎ ছিল।
দেশের মানুষকে নিজের দেশেই শরণার্থী বানানো হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন মমতা। তার ভাষায়, “আমরা ছাড়বো না। আইন সংশোধন করতে হবে। তৃণমূলের সংসদীয় প্রতিনিধি দল আসাম যাবে, প্রয়োজন হলে আমি নিজেও যেতে পারি।”
মমতার এই সমালোচনার কড়া ভাষায় জবাব দিয়েই শুধু থেমে যাননি পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তিনি কয়েক ধাপ এগিয়ে বলেছেন, “বিজেপি পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় আসলে আসামের মতোই পশ্চিমবঙ্গ থেকে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের গলাধাক্কা দিয়ে তাড়ানো হবে।”
তার ভাষায়, রাজ্যের মতুয়াদের নিয়ে সাতবছর রাজনীতি করেছেন মমতা ব্যানার্জি। মতুয়াদের নাগরিকত্বের দাবি মানার ব্যাপারে তিনি কিছুই করেননি। একইভাবে বাংলাদেশ থেকে আসা শরণার্থীদের নাগরিকত্ব নিয়েও কথা বলেন না। দিলীপ বলেন, “২০১৪ সালের মার্চ পর্যন্ত ধর্মীয় কারণে বাংলাদেশ থেকে আসা সব শরণার্থীদের ভারতের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে।”
দিলীপ ঘোষের অভিযোগ, বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের ডেকে আনছেন মমতা ব্যানার্জি। এসব অনুপ্রবেশকারীদের ব্যাগ রেডি করে রাখার পরামর্শও দেন ওই বিজেপি নেতা।
যদিও বিজেপির এই শীর্ষ নেতার হুমকিকে তৃণমূল কংগ্রেস কোনও মূল্য দেয় না বলে মন্তব্য করেছেন তৃণমূল নেতা ও রাজ্য সরকারের পৌর ও নগর উন্নয়নমন্ত্রী ফিরাদ হাকিম। তিনি বলেন, মমতা ব্যানার্জি ও এই সরকার যতদিন থাকবে ততদিন রাজ্যে সব মানুষের সহাবস্থানে থাকবে। বিজেপি সারা ভারতের যাই করুক পশ্চিমবঙ্গে তাদের কোনও জায়গা নেই।
আসামের এই ঘটনায় ভারতের আগামী লোকসভা নির্বাচন পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস ও বিরোধী বিজেপির মধ্যে তর্কযুদ্ধ অব্যাহত থাকবে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
Comments