সাকিব-তামিমের ঝলকে বাংলাদেশের জয়

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে বাংলাদেশের প্রথম কোন ক্রিকেট ম্যাচ। গ্যালারিতে ঝড়ো হওয়া প্রবাসী সমর্থকদের সামনে উপলক্ষটা রঙিন করার হাতছানি ছিল শুরু থেকেই। তা বিফলে যেতে দেয়নি বাংলাদেশ। ব্যাট হাতে সাকিব আল হাসান ও তামিমের ইকবালের দারুণ দুই ইনিংসের পর বল হাতে মূল ভূমিকা নিলেন অধিনায়ক সাকিব। আর তাতে বাংলাদেশ পেল মনে রাখার মতো জয়।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে বাংলাদেশের প্রথম কোন ক্রিকেট ম্যাচ। গ্যালারিতে ঝড়ো হওয়া প্রবাসী সমর্থকদের সামনে উপলক্ষটা রঙিন করার হাতছানি ছিল শুরু থেকেই। তা বিফলে যেতে দেয়নি বাংলাদেশ।  ব্যাট হাতে সাকিব আল হাসান ও তামিমের ইকবালের দারুণ দুই ইনিংসের পর বল হাতে মূল ভূমিকা নিলেন অধিনায়ক সাকিব। আর তাতে বাংলাদেশ পেল মনে রাখার মতো জয়।

মোস্তাফিজুর রহমানের করা ১৯তম ওভার থেকে ১৬ রান তুলে খেলা জমিয়ে তুলেছিলেন অ্যাশলে নার্স। নাজমুল ইসলাম অপুর শেষ ওভার থেকে ১৫ রান দরকার ছিল তাদের। কিন্তু শেষ পর্যন্ত নার্স ফিরলেন বাউন্ডারিতে ক্যাচ দিয়ে। ওই ওভারে পরে আরেক উইকেট নিলেন অপু রান দিলেন মাত্র ২। শেষ দিকে স্নায়ু চাপে বারবার কাবু হওয়ার পর এবার আর তা হয়নি। শেষের নখকামড়ানো স্নায়ু চাপও এদিন জয় করল বাংলাদেশ। 

ফ্লোরিডায় বাংলাদেশের করা ১৭১ রানের জবাবে খেলতে নেমে ওয়েস্ট ইন্ডিজ থামে ১৫৯ রানে। ১২ রানে জিতে তিন ম্যাচ সিরিজে তাই ১-১ সমতায় ফিরেছে সাকিব আল হাসানের দল। টি-টোয়েন্টিতে টানা পাঁচ ম্যাচ হারের পর জিতল বাংলাদেশ।

ব্যাট হাতে ৩৮ বলে ৬০ রানের ইনিংসের পর বল হাতে ১৯ রানে ২ উইকেট।  দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে জিতিয়েছেন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। ব্যাটিংয়ে ৪৪ বলে ৭৪ রানের ইনিংস খেলে মাতিয়েছেন তামিম। বিচারকদের রায়ে ম্যাচ সেরা তিনিই। 

বাংলাদেশের দেওয়া লক্ষ্য টপকাতে এই মাঠে রান তাড়ার রেকর্ড গড়তে হতো ওয়েস্ট ইন্ডিজকে। তাদের বিস্ফোরক সব ব্যাটসম্যানের জন্য কাজটা ছিল না তেমন কঠিন কিছু। কঠিন করেছেন বাংলাদেশের বোলাররাই। 

উইকেটের ভাষা পড়ে এই ম্যাচে একাদশে একজন স্পিনার কমিয়ে পেসার বাড়ায় বাংলাদেশ। মেহেদী হাসান মিরাজের জায়গায় নামা আবু হায়দার রনিই শুরু করেন বোলিং। আটোসাটো বল করে রান আটকানোর কাজটা ভালোই করেছেন তিনি। তিন উইকেট পেলেও খরুচে ছিলেন মোস্তাফিজ। বেক থ্রু আনলেও রান দিয়েছেন রুবেলও। তবে সবাইকে ছাপিয়ে গেছেন সাকিব। চার ওভারে ১০টি ডট বল, রান দিয়েছেন ১৯।  আউট করেছেন মারলন স্যামুয়েলস ও কার্লোস ব্র্যথোয়েটের মতো দুই ব্যাটসম্যানকে। দারুণ বল করেছেন আরেক বাঁহাতি নাজমুলও। তার চার ওভারে এসেছে ২৮ রান। শেষ ওভারে দুটিসহ নিয়েছেন ৩ উইকেট।

টস জিতে বাংলাদেশকে ব্যাট করতে দিয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। শুরুটা খুব বাজেই হয় বাংলাদেশের।  অ্যাশলে নার্সকে সামলাতে তামিমের সঙ্গে ওপেন করতে পাঠানো হয় লিটন দাসকে। পরিস্থিতি পাল্টায়নি। শুরুতেই ফেরেন লিটন। ডান-বাম সমন্বয় রাখতে ওয়ানডাউনে এসে বেশিক্ষণ টেকেননি মুশফিকুর রহিমও। ছন্দ হারানো সৌম্য সরকার এদিনও ব্যর্থ।  ৪৮ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে দলের অবস্থা যখন টালমাটাল তখনই জমে উঠে সাকিব-তামিম জুটি।

দুর্দান্ত ব্যাট করে বাংলাদেশের অন্যতম সেরা দুই ক্রিকেটার দুর্দান্ত ব্যাট করে বদলে দেন অবস্থা। দারুণ ব্যাট করে দুজনেই তুলে নেন ফিফটি। ৪৪ বলে ৭৪ করেছন তামিম, ৩৮ বলে ৬০ সাকিব।

শুরু থেকেই চনমনে ছিলেন তামিম। একপাশে উইকেট পতন আর মন্থর ব্যাটিং ছাপিয়ে রানের চাকা সচল রেখেছেন তিনিই। পাওয়ার প্লে ব্যবহার করতে না পারায় ক্ষতি পরে পুষিয়ে নেন দারুণ কিছু শটে। পুরো ইনিংসে ৬ বাউন্ডারির সঙ্গে মেরেছেন চারটি ছক্কা।

৩৫ বলে টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ ফিফটি করার পর তার ব্যাট হয় আরও আগ্রাসী। আন্দ্রে রাসের এক ওভারের মারেন তিন ছক্কা আর এক চার। আরেকটি ছক্কা মারতে গিয়েই ক্যাচ দেন বাউন্ডারি লাইনে।

২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর এই ফরম্যাটে ফিফটি পাচ্ছিলেন না সাকিব। ১৬ ইনিংস পর পেলেন ফিফটির দেখা। তাতে বাংলাদেশের বড় স্কোর পাওয়াও নিশ্চিত হয়।

রান তাড়ায় বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বিপদজনক হতে পারতেন এভিন লুইস। তাকে শুরুতেই ফেরান মোস্তাফিজ। দ্বিতীয় ওভারেই লেগ বিফোর উইকেটের ফাঁদে পড়েন এই বাঁহাতি। ওয়ানডাউনে নামা রাসেলকেও থামান মোস্তাফিজ। সাকিব এসেই ফিরিয়ে দেন স্যামুয়লসকে। ৪৮ রানেই ৩ উইকেট হারায় ক্যারিবিয়ানরা। ১০ রান পর দিনেশ রামদিনকে ফিরিয়ে চার নম্বর উইকেট ফেলেন রুবেল।  তবে টিকে গিয়েছিনেল ফ্লেচার আর রোবম্যান পাওয়েল। গায়ের জোরে ছক্কা হাঁকিয়ে ধরাচ্ছিলেন ভয়। সেই ভয় আরও বাড়ছিল ক্যাচ মিসে। ৩৬ রানে আন্দ্রে ফ্লেচারের ক্যাচ ছেড়ে দেন আরিফুল হক। অবশ্য পরের ওভারেই নাজমুল ইসলাম অপুর বলে ৪৩ রান করে ফেরেন ফ্লেচার।

৪৩ রান করে ফিরেছেন পাওয়েলও। উইকেটের পেছনে তাকেও ক্যাচ বানান মোস্তাফিজ। খরুচে বল করলেও কার্যকর সব উইকেট নিতে পেরেছেন মোস্তাফিজ। শেষটাই স্নায়ু ধরে রেখে অধিনায়কের আস্থার প্রতিদান দেন নাজমুলও।

আগামীকাল একই সময়, একই ভেন্যুতে হবে দুদলের সিরিজ নির্ধারনি ম্যাচ।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১৭১/৫ (লিটন ১, তামিম ৭৪, মুশফিক ৪, সৌম্য ১৪, সাকিব ৬০, মাহমুদউল্লাহ ১৩*, আরিফুল ১*; বদ্রি ০/১৪, নার্স ২/২৫, রাসেল ১/৩৩, পল ২/৩৯, উইলিয়ামস ০/২৯, ব্র্যাথওয়েট ০/২৯)।

ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ২০ ওভারে ১৫৯/৯ ( ফ্লেচার ৪৩, লুইস ১, রাসেল ১৭, স্যামুয়েলস ১০, রামদিন ৫, পাওয়েল ৪৩, ব্র্যাথওয়েট ১১, নার্স ১৬, পল ২, উইলিয়ামস ০*, বাদ্রি ১* ; আবু হায়দার ০/২৬, মোস্তাফিজ ৩/৫০, রুবেল ১/৩৫, সাকিব ২/১৯, নাজমুল ৩/২৮)

ফল: বাংলাদেশ ১২ রানে জয়ী।

ম্যান অব দ্য ম্যাচ: তামিম ইকবাল।

Comments

The Daily Star  | English

Dhaka's rail link with most of Bangladesh snapped after derailment in Tejgaon

Railway operation between Dhaka and most of the country was suspended after a train derailed hitting a crane in the Tejgaon area in the capital this evening.

2h ago