ঢাকায় শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে কলকাতায় বিক্ষোভ

ঢাকার রাস্তায় দেওয়া একই স্লোগান। হাতে প্রায় একই কথা লেখা ব্যানার, ফেস্টুন। কুশ-পুতুল পোড়ানোর দৃশ্যও এক। একই লয়ে উত্তেজনা, ক্ষোভ এবং সহমর্মিতা; তবে শহরটির ঢাকা নয়, প্রতিবেশী কলকাতা।
বাংলাদেশে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে কলকাতায় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ মিছিল। ছবি: সুব্রত আচার্য

ঢাকার রাস্তায় দেওয়া একই স্লোগান। হাতে একই কথা লেখা ব্যানার, ফেস্টুন। কুশ-পুতুল পোড়ানোর দৃশ্যও এক। একই লয়ে উত্তেজনা, ক্ষোভ এবং সহমর্মিতা; তবে শহরটির ঢাকা নয়, প্রতিবেশী কলকাতা।

বাংলাদেশে নিরাপদ সড়কের দাবিতে চলমান ছাত্র আন্দোলনের প্রতি সমর্থন এবং আন্দোলনে পুলিশ, সরকারি দলের ছাত্র সংগঠনের হামলা নিন্দা জানাতে গতকাল সোমবার কলকাতার একাধিক জায়গায় বিক্ষোভ দেখিয়েছেন ছাত্ররা।

সোমবার দুপুরের পর থেকে কলকাতার পার্ক সার্কাস সাত-রাস্তার মোড় থেকে বেগ-বাগানের ৯ নম্বর বঙ্গবন্ধু সরণির প্রায় পৌনে এক কিলোমিটার রাস্তা কয়েক ঘণ্টার জন্য কার্যত হয়ে উঠেছিল এক খণ্ড উত্তাল বাংলাদেশ।

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, প্রেসিডেন্সি কলেজ, মেডিক্যাল কলেজ, গণি খান ইঞ্জিনিয়ারিং, রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও কলকাতার বেশ কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকশো ছাত্রছাত্রী এই এলাকায় বিক্ষোভ দেখান।

ভারতের প্রাচীনতম বামপন্থী ছাত্র সংগঠন অল ইন্ডিয়া ডেমোক্রেটিক স্টুডেন্ট অর্গানাইজেশন (ডিএসও) একইভাবে এদিন বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করে।

স্থানীয় সময় দুপুর আড়াইটার দিকে ছাত্র সংগঠনটির পাঁচ শতাধিক সদস্য রামলীলা ময়দানের একত্রিত হন। সেখান থেকেই তারা বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন। মিছিলের গতিমুখ ছিল ৯ নম্বর বঙ্গবন্ধু সরণির বাংলাদেশ উপ-দূতাবাস প্রাঙ্গণ। যদিও তিন স্তরের নিরাপত্তা বেষ্টনীর প্রথম স্তরেই মিছিলটি আটকে দেয় কলকাতা পুলিশ। সেখানেই ভ্যানের ওপর দাঁড়িয়ে হাতে মাইক নিয়ে প্রতিবাদ সভা করেন বিক্ষোভকারীরা। সংগঠনের সভাপতি কমল সাঁই, সম্পাদক অশোক মিশ্রসহ অনেকেই বক্তব্য রাখেন এখানে। বক্তারা বলেন, ‘নিরাপদ সড়কের দাবিটা কোনও দাবি নয়, এটা অধিকার। এই দাবিতে কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীরা যখন পথে নামে- রাষ্ট্রের উচিত ছিল তাদের নিরাপত্তা দেওয়া। কিন্তু তাদের ওপর এইভাবে দমন-পীড়ন চালানো কোনও গণতান্ত্রিক দেশের আচরণ হতে পারে না।’

বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে কলকাতায় অল ইন্ডিয়া ডেমোক্রেটিক স্টুডেন্টস অর্গানাইজেশনের (এআইডিএসও) বিক্ষোভ মিছিল। ছবি: সুব্রত আচার্য

সংগঠনটির প্রতিবাদ কর্মসূচী শেষ হওয়ার পরপরই ‘কলকাতার ছাত্র সমাজ’-এর উদ্যোগে আরও একটি প্রতিবাদ মিছিল হয়। ‘চলুক লাঠি টিয়ার গ্যাস- পাশে আছি বাংলাদেশ’-এই ব্যানারে প্রতিবাদ কর্মসূচির কথা আগেই প্রচার করা হয়েছিল বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। আর সে কারণে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি উপেক্ষা করেও হাজার খানেক ছাত্র-ছাত্রী জমায়েত হয়েছিলেন। বিকেল ৩টার দিকে পার্ক-সার্কাস সেভেন পয়েন্টের মুখে ‘সার্কাস অ্যাভিনিউ’-এর সামনে শিক্ষার্থীরা সমবেত হতে শুরু করেন। এরপর বিভিন্ন ফেস্টুন ও ব্যানার নিয়ে কলকাতার বাংলাদেশ উপ-দূতাবাসের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে মিছিলটি। কিছুটা পথ অতিক্রম করার পরই রাস্তার ওপরই পোড়ানো হয় বাংলাদেশ পুলিশের কুশ-পুতুল। তবে মিছিলটিকে মাঝপথেই আটকে দেওয়ার চেষ্টা করে পুলিশ। এসময়ই মিছিলকারীরা ব্যারিকেড ভেঙে উপ-দূতাবাসের দিকে এগুতে চেষ্টা করেন। শুরু হয় ধস্তাধস্তি। প্রায় ১৫ মিনিট এই অবস্থা চলার পর পরিস্থিতি দেখে অতিরিক্ত পুলিশ নামানো হয়। শেষ পর্যন্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয় পুলিশ। বিক্ষোভকারীদের মধ্যে পাঁচ জনের একটি প্রতিনিধি দল উপ-দূতাবাসের গিয়ে তাদের প্রতিবাদ লিপি পেশ করেন।

বিক্ষোভ কর্মসূচির ডাক দেওয়া সৈকত দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমরা তো বাংলাদেশের কেউ নই; আমরা ভারতীয়। আজকের এই প্রতিবাদের সামিল হওয়া একশোর মধ্যে বাংলাদেশের ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ১৫ শতাংশ হবে। কিন্তু গোটা পৃথিবীর ছাত্র সমাজ এক। তাদের কোনও রাষ্ট্র নেই। নিরাপদ সড়কের দাবির আন্দোলনের ছোট্ট ছেলেমেয়েরা পথে নামল, তারা দেখিয়ে দিল কি করে সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানো যায়। সেটা দেখে আমরা সবাই গর্বিত হচ্ছিলাম। কিন্তু পরবর্তীতে কি হলো বলুন, পুলিশ, সরকারের দল এবং তাদের ছাত্র সংগঠন এই আন্দোলনকারীর মারধর শুরু করল। এটা হতে পারে না। এরই প্রতিবাদে আমরা আজ পথে। এই পরিস্থিতির উত্তরণ না ঘটলে আমরা আরও বড় ধরনের আন্দোলনে যাব।’

Comments

The Daily Star  | English
quota reform movement,

Govt publishes preliminary list of those killed in July-August protests

The interim government today published a preliminary list of the people who died during the student-led mass protests in July and August.

1h ago