‘গুজব’ ছড়ানোর অভিযোগে গ্রেপ্তার ১৭ জন

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘গুজব’ ছড়িয়ে ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে দেশকে অস্থিতিশীল করার অভিযোগে আরও সাত জনকে গ্রেপ্তার করেছে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এ নিয়ে নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলন শুরু হওয়ার পর থেকে বিতর্কিত তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় মামলায় অন্তত ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হলো।

এদের মধ্যে রাজধানীর রমনা, উত্তরা পশ্চিম, রূপনগর ও ধানমন্ডি থানায় ছয় মামলায় ১২ জনকে ও চট্টগ্রামের কোতোয়ালী থানায় মামলায় চার জনকে ও সিরাজগঞ্জের সদর থানায় হওয়া মামলায় এক জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ফেসবুকে সরকারবিরোধী বক্তব্য শেয়ার করার অভিযোগ আনা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। এসব মামলায় গত মঙ্গলবার ঢাকা ও সিরাজগঞ্জে সাত জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

মঙ্গলবার রাতে ধানমন্ডি থেকে র‍্যাপিড একশন ব্যাটালিয়নের (র‍্যাব) একটি দল আখতারুজ্জামান টনি (২২), আসাদুল্লাহ আল গালিব (২২) ও মুনিম সরকার (২৩) নামের তিন জনকে গ্রেপ্তার করে বলে র‍্যাব-২ এর অপারেশন অফিসার রবিউল আলম জানিয়েছেন। র‍্যাবের পক্ষ থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা সবাই নিজেদের শিবির কর্মী বলে পরিচয় দিয়েছেন। তারা স্বীকার করেছেন, ছাত্র আন্দোলনের অভিমুখ বদলে দিতে ও আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে তারা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ফেসবুকে উত্তেজক পোস্ট দিয়েছেন। এতে আরও বলা হয়, গ্রেপ্তারকৃতদের কাছ থেকে ল্যাপটপ, মোবাইল সিম ও শিবিরে যোগদানের ফর্ম জব্দ করা হয়েছে।

র‍্যাবের ওই কর্মকর্তা জানান, ধানমন্ডি থানায় আইসিটি আইনে হওয়া একটি মামলায় গ্রেপ্তারকৃতদের হস্তান্তর করা হয়েছে।

একই দিনে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) সাইবার অপরাধ বিভাগ গ্রেপ্তার করেছে আরও তিন জনকে। তারা হলেন- তৌহিদুল ইসলাম তুষার (২৪), মোহাম্মদ ওয়ালিউল্লাহ (২৮) ও এহসান উদ্দিন এজাজ (১৮)। তাদের বিরুদ্ধেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘গুজব’ ছড়ানোর অভিযোগ আনা হয়েছে।

রমনা থানায় হওয়া একটি মামলায় তাদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত উপ-কমিশনার নাজমুল ইসলাম। তিনি জানান, তাদের মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ, মেমোরি কার্ড ও ফেসবুক আইডি থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে।

গতকাল ঢাকার আদালত ওয়ালিউল্লাহকে পাঁচ দিনের, এজাজ ও তুষারকে চার দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছেন। আদালতে হাজির করে তাদের প্রত্যেককে ১০ দিনের রিমান্ড চেয়েছিল পুলিশ। আর সোমবার গ্রেপ্তার হওয়া মাহবুবুর রহমান, আলমগীর হোসেন ও সাইদুল ইসলাম এখন পাঁচ দিনের রিমান্ডে রয়েছেন। অতিরিক্ত উপ-কমিশনার নাজমুল বলেছেন, জিজ্ঞাসাবাদে শেষ এই তিন জনের কাছ থেকে চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে।

ফেসবুকে গুজব ছড়ানো ও ছাত্র আন্দোলনে উসকানি দেওয়ার অভিযোগে সিরাজগঞ্জে গ্রেপ্তার হওয়া শাখাওয়াত হোসেন শাকিল মাহমুদকে জেল হাজতে পাঠিয়েছেন আদালত। তিনি পেশায় একজন আইনজীবী। সিরাজগঞ্জের গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোজহারুল ইসলাম বলেছেন, সেনাবাহিনী নিয়ে মিথ্যা তথ্য ফেসবুকে শেয়ার করেছিলেন শাকিল।

আর চট্টগ্রামে আইসিটি আইনের মামলায় গ্রেপ্তার চার যুবককে এক দিনের রিমান্ডে পাঠানো হয়েছে। তারা হলেন, মারুফ হোসেন, আজিউর রহমান, ইমদাদুল হক অনিক ও আব্দুল্লাহ আল শাহেদ। এদের দুজন ছাত্র ফেডারেশনের নেতা।

একই ধরনের অভিযোগে গত ৪ আগস্ট রাজধানীর উত্তরা থেকে অভিনেত্রী কাজী নওশাবা আহমেদ, রংপুরে শাহেদ আক্তার ও প্রখ্যাত আলোকচিত্রী শহিদুল আলমকে গ্রেপ্তার করে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

এছাড়াও গত সোমবার থেকে ফেসবুকে একটি পোস্ট শেয়ার হতে দেখা গেছে যেখানে ৩০ জনের ব্যাপারে তথ্য দিয়ে পুলিশকে সহায়তা করতে বলা হচ্ছে। পোস্টটিতে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ফোন নাম্বার ও ইমেইল ঠিকানা উল্লেখ করে বলা হয়েছে, এই ৩০ জন গুজব ছড়িয়ে ছাত্র আন্দোলনে সহিংস করার চেষ্টা করেছিলেন।

তবে সিআইডির পক্ষ থেকে মঙ্গলবার ফেসবুকে দেওয়া এক বিবৃতিতে এ ধরনের কোনো পোস্টের কথা অস্বীকার করে বলা হয়, যে কেউ তথ্য দিয়ে তাদের সহায়তা করতেই পারেন।

Comments

The Daily Star  | English
Rizvi criticizes PR system in elections

PR system a threat to democracy: Rizvi

Under the PR system, the party, not the people, will choose MPs, he says

4h ago