শহিদুল আলম ও শিক্ষার্থীদের মুক্তির দাবিতে ১১ নোবেল বিজয়ী ও ১৭ বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বের বিবৃতি
নিরাপদ সড়কের দাবিতে ছাত্র আন্দোলনের মধ্যে গ্রেপ্তার বাংলাদেশের বিশিষ্ট আলোকচিত্রী শহিদুল আলম ও শিক্ষার্থীদের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি জানিয়ে ১১ জন নোবেল বিজয়ী ও বিশ্বের ১৭ জন বিশিষ্ট ব্যক্তি বিবৃতি দিয়েছেন। গ্রেপ্তারকৃতদের মুক্তি দাবি করে বাংলাদেশে সকল নাগরিকের মানবাধিকার, বাকস্বাধীনতা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও সমাবেশ করার স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
বিবিসি বাংলার খবরে জানানো হয়, প্রতিবাদ জানানো নোবেল পুরস্কার বিজয়ীদের মধ্যে ১০ জনই শান্তিতে পদক পেয়েছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন আর্চবিশপ ডেসমন্ড টুটু, শিরিন এবাদি, লেহমাহ বয়ই ও মোহাম্মদ ইউনূস। এছাড়া বিশিষ্ট অপর ১৭ ব্যক্তিত্বের মধ্যে রয়েছেন নরওয়ের সাবেক প্রধানমন্ত্রী গ্রো হারলেম ব্রান্টল্যান্ড, বিশিষ্ট উদ্যোক্তা ও বিলিয়নিয়ার স্যার রিচার্ড ব্র্যানসন, মার্কিন লেখিকা ও মানবাধিকার কর্মী কেরি কেনেডি, ভারতের অভিনেত্রী ও মানবাধিকার কর্মী শাবানা আজমি, হলিউড অভিনেত্রী ও মানবাধিকার কর্মী শ্যারন স্টোন, হাফিংটন পোস্টের প্রতিষ্ঠাতা আরিয়ানা হাফিংটন ও চলচ্চিত্র পরিচালক রিচার্ড কার্টিস।
শ্যারন স্টোন তার ভেরিফাইড টুইটার ও ফেসবুক একাউন্ট থেকে বিবৃতিটি প্রকাশ করেছেন।
A call for the release of Shahidul Alam and students in Bangladesh. pic.twitter.com/y6Sj1eBVNM
— Sharon Stone (@sharonstone) August 19, 2018
বিবৃতিতে তারা বলেছেন, দুই সপ্তাহ আগে বাস চাপায় দুজন শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার ঘটনায় বাংলাদেশের হাইস্কুলের শিক্ষার্থীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রতিবাদ জানাতে রাস্তায় নেমে আসে। তারা নিরাপদ সড়ক, আইনের শাসন ও ন্যায়বিচারের দাবি তোলে। এই ঘটনায় বিশ্বজুড়ে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক গণমাধ্যমে বিশ্বাসযোগ্য যেসব খবর প্রকাশিত হয়েছে তাতে বলা হয়, আন্দোলনরত অল্পবয়সী শিক্ষার্থী ও কর্তব্যরত সাংবাদিকরা পুলিশের উপস্থিতিতেই ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র ও যুব সংগঠনের লোকজনের হামলার শিকার হয়েছেন। খবরে আরও বলা হয়েছে, আন্দোলন শুরু হওয়ার কয়েক দিন পর হাইস্কুলের শিক্ষার্থীদের দাবির সঙ্গে সংহতি জানাতে যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নেমে আসেন তখন তাদের গ্রেপ্তার করে এমন সব মামলা দেওয়া হয়েছে যেগুলোতে তাদের রিমান্ড (আইনজীবীদের অনুপস্থিতিতে পুলিশ হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদ) ও কারাদণ্ড হতে পারে।
শহিদুল আলমকে বাংলাদেশে ফটো সাংবাদিকতার পুরোধা ব্যক্তিত্ব ও আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আলোকচিত্রী, শিক্ষক ও মানবাধিকার কর্মী আখ্যা বিবৃতিতে তারা বলেছেন, গত ৫ আগস্ট সন্ধ্যার পর গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ছাড়াই বেআইনিভাবে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোকজনের হাতে শহিদুল তার বাড়ি থেকে অপহৃত হন। গত সপ্তাহে তাকে ঢাকার এডিশনাল চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে পুলিশের গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষ থেকে ১০ দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায়— যে আইনটি কালাকানুন হিসেবে সুপরিচিত এবং সরকার নিজেও সংশোধনের প্রয়োজনীয়তার কথা স্বীকার করে— ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়। খবরে প্রকাশিত হয়েছে, আদালতে নিয়ে যাওয়ার সময় তিনি সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেছেন, ‘আমাকে আঘাত করা হয়েছে৷ আমার রক্তাক্ত পাঞ্জাবী ধুয়ে আবার পরানো হয়েছে। আটক থাকার সময় আমাকে আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলতে দেওয়া হয়নি।’ শহিদুল আলমের অপরাধ যে তিনি আন্দোলনরত কিশোর বয়সী শিক্ষার্থীদের ওপর নির্মম হামলার ছবি তুলেছিলেন এবং একটি আন্তর্জাতিক টেলিভিশন চ্যানেলে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বাকস্বাধীনতার চর্চা করেছিলেন। আটকের সপ্তম দিনে ১২ আগস্ট ২০১৮ তারিখে আইনজীবীর অনুপস্থিতিতে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের আদেশে হঠাৎ করে তাকে কারাগারে প্রেরণ করা হয়।
অনেক গণমাধ্যমের খবরে আরও বলা হয়েছে, পুলিশ হেফাজতে অনেক নিরপরাধ শিক্ষার্থীকে রিমান্ডে নিপীড়নসহ নানামুখী হয়রানি ও ভয়ভীতির মুখে ঠেলে দেওয়া হয়েছে যেখানে কিশোর বয়সী শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে হামলাকারীরা বিচারহীনতার সুযোগে মুক্তভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।
আমরা নিম্নোক্ত স্বাক্ষরকারীরা কালাকানুনের মামলায় অন্যায়ভাবে শহিদুল আলমের রিমান্ডের যৌথভাবে প্রতিবাদ জানাচ্ছি। তার নিঃশর্ত মুক্তির পাশাপাশি বেআইনি গ্রেপ্তারের ঘটনাগুলো তদন্তের জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানাচ্ছি।
প্রতিবাদ জানানো নোবেল বিজয়ীরা হলেন:
১. আর্চবিশপ ডেসমন্ড টুটু (১৯৮৪ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী)
২. তাওয়াক্কল কারমান (২০১১ সালে সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী)
৩. মাইরিয়াড ম্যাগুইরে (১৯৭৬ সালে সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী)
৪. বেটি উইলিয়ামস (১৯৭৬ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী)
৫. অস্কার এরিয়াস (১৯৮৭ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী)
৬. স্যার রিচার্ড যে. রবার্টস (১৯৯৩ সালে চিকিৎসা শাস্ত্রে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী)
৭. হোসে রামোস-হর্তা (১৯৯৬ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী)
৮. জোডি উইলিয়ামস (১৯৯৭ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী)
৯. শিরিন এবাদি (২০০৩ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী)
১০. প্রফেসর মোহাম্মদ ইউনূস (২০০৬ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী)
১১. লেহমাহ বয়ই (২০১১ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী)
Comments