নেতাদের কাজের রেটিং করতে এসেছে ‘নেতা অ্যাপ’
রেস্তোরায়, উড়োজাহাজে কিংবা আবাসিক হোটেলের আপনি কেমন সেবা পাচ্ছেন গ্রাহক হিসেবে আপনি তার একটা রেটিং করতে পারেন।
কিংবা ভালো একটা কোম্পানির হাতঘড়ি কিনেছেন- প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে আপনাকে ফোন করে জানাতে চাওয়া হলো আপনি পণ্যের মানে সন্তুষ্ট নাকি নন। কিংবা কী করলে ভালো হতে পারে আরও।
ঠিক এভাবেই যদি কোনও নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির কাজের ক্ষেত্রে রেটিং দেওয়ারও সুযোগ এসে যায় তো কেমন হবে?
হ্যাঁ- একদম ঠিক। ভারতে এবার যেকোনো রাজ্যে, যেকোনো নির্বাচিত জনপ্রিতিনিধির কাজের মূল্যায়ন করতে অ্যাপের মাধ্যমে ‘রেটিং’ দিতে পারছেন নাগরিকরা। নেতার ভালোমন্দ দিক নিয়ে লিখা যাবে রিভিউ। ইতিমধ্যে আলোচনায় আসা এই অ্যাপটির নামও রাখা হয়েছে ‘নেতা’। এই অ্যাপ থেকে নেওয়া কাজের রেটিং আবার শেয়ার করা যাবে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও। রেটিং ভালো হলে ওই নেতা-নেত্রীর জনসমর্থন বাড়বে। আর খারাপ হলে, সমর্থন হারাবেন।
শুক্রবার এরকম অভিনব উদ্যোগের আনুষ্ঠানিক সূচনা করেছেন ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়। এই অ্যাপ ইতিমধ্যে ভারতের স্মার্টফোন ব্যবহারকারীরা ইন্সটল করতেও শুরু করেছেন।
যেহেতু এই ধরণের রেটিং একজন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির কাজের নিরিখে হবে- তাই অ্যাপ ইন্সটলেশনের সময় অবশ্যই মতামতদানকারীর জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর লাগবে।
জনপ্রতিনিধিদের এই রেটিং যেন কোনও রাজনৈতিকভাবে প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক নেতা কিংবা মতাদর্শের বিশ্বাসীরা হাতিয়ার না করতে পারেন এর জন্যও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন অ্যাপের কর্ণধার ব্যবসায়ী প্রথম মিত্তল।
দিল্লিতে শুক্রবার সন্ধ্যায় প্রথম মিত্তল জানিয়েছেন, ‘নির্বাচিত হওয়ার পর অনেক জনপ্রতিনিধি এলাকার খবর রাখেন না। আবার কেউ কেউ দারুণ ভাবে কাজ করছেন। যারা ভালো কাজ করেন তাদের মূল্যায়ন হওয়া যেমন প্রয়োজন। ঠিক অনুরূপ ভাবে যারা জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন- তাদেরও বিষয়ে একটা ধারণা থাকা প্রয়োজন। তাই রেটিং নির্ভর অ্যাপ তৈরির কথা ভেবেছিলাম। যার বাস্তবায়ন হতে শুরু করল।’
‘নেতা’ অ্যাপের উদ্বোধনের সময় প্রণব মুখোপাধ্যায় বলেছেন, তথ্যসমৃদ্ধ ভোটার, ভালো নেতা, কাজের দায়বদ্ধতা এবং সম্পূর্ণ স্বচ্ছতা ছাড়া গণতন্ত্রর ভালো কাজ হতে পারে না।
যদিও নেতা অ্যাপের রেটিং নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে অনেকের মধ্যে। যেমন সঙ্গীত শিল্পী রুপম ইসলাম মনে করছেন, নিজেদের কাজকর্মের দিকে নির্বাচিত জনপ্রিতিনিধিদের নিজেদের নজর রাখতে হবে। নিজের বিচারটা নিজের হাতে থাকলেই বরং সমাজের সঠিক উন্নয়ন করতে পারবেন নেতারা।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ইমনকল্যাণ লাহিড়ী বলছেন, ‘আসলে রোজ যেসব খবর পত্রিকার পাতায় আসে; সেগুলো ভালো করে লক্ষ্য করলেই অনেক কিছু শুধরে নেওয়া সম্ভব। বাড়তি কোনও অ্যাপে রেটিংয়ের প্রয়োজন পড়বে না।’
এই দুজনের সঙ্গে ভিন্নমত জানিয়ে কলকাতার সিনিয়র সাংবাদিক কৃষ্ণকুমার দাসের বক্তব্য, এই ধরণের অ্যাপে আর যাই হোক নির্বাচিতদের মধ্যে একটা আতঙ্ক তৈরি করবে বৈকি। কেননা অ্যাপের রেটিং যদি খারাপ হয়, আর সেটা যদিও সামাজিক মাধ্যমগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে তবে এর প্রভাব অবশ্যই পড়বে ভোট বাক্সে। তাই এটা একদিকে বেশ ভাল প্রয়াস।
তবে এর রাজনৈতিক ব্যবহারও হতে পারে। কারণ ভারতের রাজনীতিতে এখন সহনশীলতার জায়গাটা ক্রমশ আলগা হয়ে যাচ্ছে।
মৌখিক আক্রমণের সঙ্গে ব্যক্তিগত কুৎসা এমন নানা রকম প্রতিহিংসামূলক কাজ দেখা যাচ্ছে রাজনৈতিক দল এবং নেতা-নেত্রীর মধ্যে। এটা কিন্তু খুবই গুরুত্বপূর্ণ এখন- যোগ করেন কৃষ্ণকুমার দাস।
Comments