ককপিটের কথোপকথন

ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনসের উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় নেপাল সরকারের তদন্তকারীরা প্রতিবেদনে বলেছেন, ‘ককপিটের ভয়েস রেকর্ডারের কথোপকথন বিশ্লেষণ করে আমরা যা পেয়েছি তাতে এটা স্পষ্ট যে পাইলট প্রচণ্ড রকম মানসিক চাপের মধ্যে ছিলেন। এছাড়াও কম ঘুমের কারণে তাকে অবসাদগ্রস্ত ও ক্লান্ত বলে মনে হয়েছে।’ ককপিটে বসে তিনি একাধিক বার কান্নাকাটি করেছিলেন বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
US Bangla aircraft
কাঠমান্ডুতে বিধ্বস্ত ইউএস বাংলার উড়োজাহাজ। ছবি: রয়টার্স

ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনসের উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় নেপাল সরকারের তদন্তকারীরা প্রতিবেদনে বলেছেন, ‘ককপিটের ভয়েস রেকর্ডারের কথোপকথন বিশ্লেষণ করে আমরা যা পেয়েছি তাতে এটা স্পষ্ট যে পাইলট প্রচণ্ড রকম মানসিক চাপের মধ্যে ছিলেন। এছাড়াও কম ঘুমের কারণে তাকে অবসাদগ্রস্ত ও ক্লান্ত বলে মনে হয়েছে।’ ককপিটে বসে তিনি একাধিক বার কান্নাকাটি করেছিলেন বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

তদন্ত এখনো শেষ হয়নি, আনুষ্ঠানিকভাবে নেপাল সরকার তা প্রকাশও করেনি। এমন সময় সম্পূর্ণ দায় পাইলটের ওপর চাপিয়ে নেপালের গণমাধ্যমে কেন রিপোর্ট প্রকাশ করা হলো, সে প্রশ্নও সামনে আসছে। দুর্ঘটনার পর দিন ত্রিভুবন বিমানবন্দরের এয়ার ট্রাফিক কনট্রোলারের সঙ্গে কথোপকথনের যে সামান্য অংশ ইউটিউবে প্রকাশিত হয়েছিল তাতে পাইলট আবিদ সুলতানের কথা ও আচরণ উদ্বিগ্ন বা বেপরোয়া বলে মনে হয়নি। উড়োজাহাজটি রানওয়ের কোন দিক থেকে অবতরণ করবে সেটিই ছিল তাদের কথোপকথনের বিষয়।

গত ১২ মার্চ ঢাকা থেকে কাঠমান্ডুগামী বাংলাদেশের বেসরকারি বিমান সংস্থা ইউএস-বাংলার ফ্লাইট বিএস২১১, ৭১ জন আরোহী নিয়ে ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিধ্বস্ত হয়। এতে নিহত ৫১ জনের মধ্যে ২২ জন নেপালি ও একজন চীনা নাগরিক। অন্যরা সবাই বাংলাদেশি।

আজ কাঠমান্ডু পোস্টের খবরে জানানো হয়, এই দুর্ঘটনা নিয়ে নেপাল সরকার যে তদন্ত করেছে, সেই প্রতিবেদনের একটি কপি তাদের হাতে এসেছে। প্রতিবেদনে বিধ্বস্ত উড়োজাহাজের যান্ত্রিক ত্রুটি বা এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলারের ভুল নির্দেশনার কোনো কথা উল্লেখ নেই। দুর্ঘটনার জন্য পুরোপুরিভাবে পাইলটকেই দায়ী করেছেন তারা।

ত্রিভুবন বিমানবন্দরের সিসিটিভি ফুটেজে ইউএস বাংলার বিমান দুর্ঘটনা। ছবি: কাঠমান্ডু পোস্ট

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ফ্লাইটের সময় পাইলট আবিদ সুলতান ইউএস বাংলার আরেকজন নারী কো-পাইলটের ব্যাপারে আপত্তিকর ভাষায় একাধিকবার কথা তুলেছিলেন। তার কথা থেকে বোঝা যায়, প্রশিক্ষক হিসেবে আবিদ সুলতানের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে ওই কো-পাইলটের আপত্তি ছিল। ফ্লাইটের পুরো সময় জুড়েই মূলত তাদের আন্তসম্পর্কের বিষয়টি নিয়ে কথা হচ্ছিল। তবে ককপিটে থাকা কো-পাইলট পৃথুলা রশিদ এই আলোচনায় শ্রোতার ভূমিকায় ছিলেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়, অডিও রেকর্ড থেকে তদন্তকারীরা বুঝতে পেরেছেন ফ্লাইটের এক পর্যায়ে পাইলট আবিদ সুলতান কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন। পৃথুলা রশিদকে তিনি বলেন, ওই নারী সহকর্মীর আচরণে তিনি ভীষণ মর্মাহত এবং শুধুমাত্র তার কারণেই চাকরি ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

প্রতিবেদনে উল্লেখ রয়েছে, দুর্ঘটনার এক দিন আগেই আবিদ সুলতান চাকরি থেকে ইস্তফা দেওয়ার ইচ্ছার কথা জানিয়েছিলেন। তবে তিনি কোনো লিখিত আবেদন জমা দেননি। কো-পাইলটদের প্রশিক্ষণ শেষ হওয়া পর্যন্ত আরও তিন মাস চাকরি করার ইচ্ছার কথাও বলেন তিনি।

পাইলট ও কো-পাইলটের শেষ এক ঘণ্টার কথোপকথনের বিষয়বস্তু থেকে নেপালের তদন্তকারীরা মনে করেন, ফ্লাইটের পুরো সময় ধরেই পাইলট আবিদ সুলতানের মানসিক চাপ ও পূর্ণ অসতর্কতার বিষয়টি উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, এক পর্যায়ে কো-পাইলটকে তিনি প্রকাশ অযোগ্য শব্দ ব্যবহার করে বলেন, ‘ফ্লাইটের নিরাপত্তা নিয়ে আমি পরোয়া করি না, তুমি তোমার কাজ নিয়ে চিন্তা কর।’

ইউএস বাংলার ককপিটের কথোপকথন সম্পর্কে নেপাল এয়ারলাইনসের ক্যাপ্টেন শ্রাবণ রাজাল কাঠমান্ডু পোস্টকে বলেন, ‘উড়োজাহাজ উড্ডয়ন ও অবতরণের প্রস্তুতির সময় ককপিটে পাইলটদের মধ্যে ব্যক্তিগত আলাপচারিতা পুরোপুরিভাবে নিষিদ্ধ। এসময় শুধুমাত্র উড়োজাহাজের দিকেই তাদের মনোযোগ সীমাবদ্ধ  রাখার কথা।’

Comments

The Daily Star  | English

One month of interim govt: Yunus navigating thru high hopes

A month ago, as Bangladesh teetered on the brink of chaos after the downfall of Sheikh Hasina, Nobel Laureate Muhammad Yunus returned home to steer the nation through political turbulences.

7h ago