‘আলিবাবা আমার নয়, আমি আলিবাবার’
![Jack Ma Jack Ma](https://bangla.thedailystar.net/sites/default/files/styles/big_202/public/feature/images/jack-ma-1.jpg?itok=TKy3Ye-o×tamp=1584795133)
“একটি বিষয় আমি আপনাদের সবাইকে জানিয়ে রাখতে চাই যে, আলিবাবা আমার নয়, আমি আলিবাবার।”- এমন আবেগী কথা যিনি বললেন তিনি চীনা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান আলিবাবা গ্রুপের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা জ্যাক মা। কথাটি তিনি বললেন প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবার উদ্দেশে- আর তার বিদায় বেলায়।
আলিবাবার বর্তমান নির্বাহী চেয়ারম্যান জ্যাক মা অবসরে যাচ্ছেন এমন খবরের মধ্যেই তিনি আজ (১০ সেপ্টেম্বর) এক দীর্ঘ চিঠিতে নিশ্চিত করলেন প্রতিষ্ঠানটির প্রধান পদ থেকে তার ‘বিদায়ের’ বিষয়টি।
চিঠিতে তিনি বলেন, “গত ১০ বছর থেকে আমি এই অবসরের কথাই ভেবে আসছি। এর জন্যে প্রস্তুতি নিয়ে আসছি। আজ সেই ঘোষণা দিতে পেরে আমি ভীষণ আনন্দিত।”
আলিবাবার সহকর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তিনি বলেন, “আর আপনারা গত ১৯ বছর থেকে প্রবল আত্মবিশ্বাস ও শক্তি নিয়ে এই দিনটির জন্যে প্রস্তুতি নিয়েছেন- তাই আপনাদের বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানাই।”
তার এই অবসর এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) দানিয়েল ঝংয়ের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরকে তিনি প্রতিষ্ঠানটির নতুন যুগে প্রবেশের মাহেন্দ্রক্ষণ হিসেবে উল্লেখ করেন। এ ঘটনাটিকে তিনি প্রতিভাবানদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের এক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসেবও মন্তব্য করেন।
“১৯৯৯ সালে যখন আলিবাবা প্রতিষ্ঠিত হয় তখন আমাদের লক্ষ্য ছিলো এমন একটি কোম্পানি গড়ে তোলা যেটি চীন এবং বিশ্বকে গর্বিত করবে।… একটি টেকসই আলিবাবার মানেই হলো সুশাসন, সংস্কৃতি-ভিত্তিক দর্শন ও প্রতিভার উন্নয়নে গতিশীল থাকা।”
জ্যাক মা মনে করেন, কোনো প্রতিষ্ঠানই এর প্রতিষ্ঠাতাদের ওপর এককভাবে নির্ভর করে না। কেননা, একজন ব্যক্তির শারীরিক ও মানসিক শক্তির সীমাবদ্ধতা থাকে। তাই একজন ব্যক্তির পক্ষে চিরদিন প্রতিষ্ঠানের প্রধান চালিকাশক্তি হয়ে থাকা সম্ভব নয় বলেই মায়ের বিশ্বাস।
“এই বিষয়টিই আমরা গত ১০ বছর ধরে আলোচনা করে আসছি যে জ্যাক মা না থাকলে প্রতিষ্ঠানটি কীভাবে চলবে, কীভাবে এর অগ্রগতি অব্যাহত রাখবে। আমাদের বিশ্বাস- প্রতিষ্ঠানটিকে শক্তিশালী রাখার জন্যে এমন একটি ব্যবস্থা গড়ে তোলা প্রয়োজন যেখানে থাকবে সুশাসন ও প্রতিভাবানদের গুরুত্ব দেওয়ার প্রবণতা। আর এই বিষয়গুলো নিয়েই আমরা গত ১০টি বছর কাজ করেছি।”
আলিবাবার বিদায়ী চেয়ারম্যানের মতে, একজন শিক্ষক চান পরবর্তীতে শিক্ষার্থীরা তার হাল ধরুক এবং প্রতিভাবানরাই নেতৃত্বে আসুক। তিনি মনে করেন, খুব ভালো ব্যবসা করছে বলেই আলিবাবা সেরা- বিষয়টি এমন নয়। বরং আলিবাবা সেরা এই জন্যেই যে সবাই মিলে একটি অভিন্ন লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে চলছে।
“আমাদের অনন্য সংস্কৃতি, উন্নত ব্যবস্থাপনা এবং এক দল প্রতিভাবান ব্যক্তির কারণেই এই প্রতিষ্ঠানটি শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে রয়েছে। তাই ২০১৩ সালে সিইও-র পদ থেকে আমার সরে আসার পরও গত পাঁচ বছরে আমাদের ব্যবসার কোনো ক্ষতি হয়নি।”
জ্যাক মা চিঠিটিতে আরও উল্লেখ করেন যে ১৯৯৯ সালে প্রতিষ্ঠানটি শুরু করার পর থেকেই তারা প্রতিভাবানদের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছিলেন বলেই আলিবাবার আজ সারা বিশ্বে একটি সফল প্রতিষ্ঠান হিসেবে সুনাম অর্জন করতে পেরেছে। আজ সেই প্রতিভাবানদের একজন দানিয়েল ঝং-এর নেতৃত্বেই চলছে এই প্রতিষ্ঠানটি।
পরবর্তী প্রজন্মের নেতৃত্বের প্রতি তার গভীর আস্থা রয়েছে উল্লেখ করে জ্যাক মা জানান, গত ১১ বছর থেকে আলিবাবা গ্রুপে কাজ করা দানিয়েলকে এ বছর চীনে এক নম্বর সিইও হিসেবে পুরস্কৃত করা হয়েছে।
নিজের সম্পর্কে তিনি বলেন, “আমার এখনো অনেক স্বপ্ন বাস্তবায়িত হওয়া বাকি রয়েছে। যারা আমাকে চেনেন তারা জানেন যে আমি অলস হয়ে বসে থাকতে পারি না। এছাড়াও, আমি আলিবাবার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে কাজ তো করেই যাবো। তবে আমি পড়ালেখায় ফিরে যেতে চাই। এখানেই আমার অনাবিল আনন্দ।”
তার মতে, “পৃথিবী অনেক বড় এবং আমি এখনো অনেক তরুণ। সে কারণেই আমি নতুন নতুন বিষয়ে চেষ্টা চালিয়ে যেতে চাই। এভাবেই হয়তো নতুন স্বপ্নগুলো বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে?!”
“তাই, একটি বিষয় আমি আপনাদের সবাইকে জানিয়ে রাখতে চাই যে, আলিবাবা আমার নয়, আমি আলিবাবার। চিরদিনের জন্যেই আলিবাবার।”
তথ্যসূত্র: হিন্দুস্তান টাইমস
Comments