পুলিশকে নিয়ম রক্ষার অনুমতিও নিতে হবে না!

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৪৩ ধারায় তল্লাশি, জব্দ ও গ্রেপ্তারের ক্ষেত্রে ডিজিটাল নিরাপত্তা এজেন্সির মহাপরিচালকের অনুমোদন নেওয়ার বিধান যুক্ত করার সুপারিশ করেছিল সংসদীয় কমিটি। কিন্তু শেষ মুহূর্তে পুলিশের আপত্তির মুখে মাত্র এক দিনের মধ্যেই অনুমোদনের বিষয়টি বাদ দেওয়া হয় বলে জানা গেছে।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের খসড়া মন্ত্রিসভায় অনুমোদন দেওয়ার পর থেকে সাংবাদিকসহ প্রায় সর্বমহল থেকে আপত্তি জানিয়ে বলা হয়েছিল এই আইনের বেশ কয়েকটি ধারা গণমাধ্যম ও বাকস্বাধীনতার জন্য হুমকি হবে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, আপত্তি আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনা হবে। শেষ পর্যন্ত ইতিবাচক কোনো পরিবর্তন ছাড়াই জাতীয় সংসদে আইনটির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। তবে পুলিশের আপত্তির মুখে আইন পাস হওয়ার আগে শেষ মুহূর্তে তড়িঘড়ি করে একটি ধারায় পরিবর্তন আনা হয়েছে। এর ফলে কারও অনুমোদন ও পরোয়ানা ছাড়াই শুধুমাত্র সন্দেহের বশবর্তী হয়ে তল্লাশি, জব্দ ও গ্রেপ্তারের ক্ষমতা পাচ্ছে পুলিশ।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৪৩ ধারায় তল্লাশি, জব্দ ও গ্রেপ্তারের ক্ষেত্রে ডিজিটাল নিরাপত্তা এজেন্সির মহাপরিচালকের অনুমোদন নেওয়ার বিধান যুক্ত করার সুপারিশ করেছিল সংসদীয় কমিটি। কিন্তু শেষ মুহূর্তে পুলিশের আপত্তির মুখে মাত্র এক দিনের মধ্যেই অনুমোদনের বিষয়টি বাদ দেওয়া হয় বলে জানা গেছে।

এই ধারা অনুযায়ী, ‘যদি কোনো পুলিশ অফিসারের এইরূপ বিশ্বাস করিবার কারণ থাকে যে কোনো স্থানে এই আইনের অধীন কোনো অপরাধ সংঘটিত হইয়াছে বা হইতেছে বা হইবার সম্ভাবনা রহিয়াছে বা সাক্ষ্য প্রমাণাদি হারানো, নষ্ট হওয়া, মুছিয়া ফেলা ফেলা, পরিবর্তন বা অন্য কোনো উপায়ে দুষ্প্রাপ্য হইবার বা করিবার সম্ভাবনা রহিয়াছে’ - তাহলেও তিনি তল্লাশি- গ্রেপ্তার করতে পারবেন। গণমাধ্যমের ক্ষেত্রে যদি বিষয়টি বিবেচনা করা হয়, তবে একটি সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পরেই নয়, প্রকাশিত হতে পারে এটা ভেবেও পুলিশ তল্লাশি- গ্রেপ্তার- জব্দ করতে পারবেন।

তবে সাংবাদিকসহ সর্ব মহলের আপত্তি আমলে নিয়ে একটি শব্দে পরিবর্তন এনেছে সরকার। আপত্তি ছিল ৩২ ধারার ‘গুপ্তচরবৃত্তি’ বিষয়টি নিয়ে। উদ্বেগ ছিল এর ফলে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় আইনি ঝুঁকি তৈরি হবে। গুপ্তচরবৃত্তির পরিবর্তে সেখানে ‘অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট’ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু ‘গুপ্তচরবৃত্তি’র চেয়ে ঔপনিবেশিক আমলের অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট আরও বিস্তৃত, আরও ভীতিকর বলে অভিযোগ রয়েছে।

বিভিন্ন মহলের আপত্তির মধ্যে গতকাল ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে স্বাক্ষর না করতে রাষ্ট্রপতির আহ্বান জানিয়েছে সাংবাদিকদের আন্তর্জাতিক সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস (সিপিজে)। রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদকে চিঠি দিয়ে তারা বিলটিকে পুনর্বিবেচনার জন্য সংসদে ফেরত পাঠানোর আহ্বান জানান। টিআইবির পক্ষ থেকেও রাষ্ট্রপ্রতির প্রতি অনুরূপ আহ্বান জানানো হয়েছে।

সংসদের ভেতরে ও বাইরে বিরোধিতার মধ্যেই গত ১৮ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদে ডিজিটাল নিরাপত্তা বিল কণ্ঠভোটে পাস হয়। এই আইনের কারণে জনগণের মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও স্বাধীন সাংবাদিকতা বাধাগ্রস্ত হতে পারে বলে সাংবাদিকসহ বিভিন্ন পক্ষের আপত্তি রয়েছে। রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের মাধ্যমে এই আইন বলবত হবে।

Comments

The Daily Star  | English

One month of interim govt: Yunus navigating thru high hopes

A month ago, as Bangladesh teetered on the brink of chaos after the downfall of Sheikh Hasina, Nobel Laureate Muhammad Yunus returned home to steer the nation through political turbulences.

5h ago