দূরবীনে ‘গুরু’ দর্শন
নদীর নাম রবি। নদী বরাবর ভারত ও পাকিস্তানের আন্তর্জাতিক সীমারেখা। এই সীমান্তের দুই পাশেই পাঞ্জাব। ভারতীয় পাঞ্জাবের যেখানে গুরুদাসপুর জেলা, সীমান্তের ঠিক ওপাশে পাকিস্তানের নারওয়াল।
গুরুদাসপুরে পাকিস্তান সীমান্ত ঘেঁষে তৈরি করা হয়েছে একটি দর্শনস্থল। ভারতসহ বিভিন্নস্থান থেকে শিখ ধর্মাম্বলীরা এখানে আসছেন পূণ্য লাভের আশায়। ধৈর্য নিয়ে লম্বা লাইন করে দাঁড়িয়ে থাকছেন দূরবীনে চোখ রাখার অপেক্ষায়। কেননা, সেই দূরবীনেই মিলবে ‘গুরু’ দর্শন।
সম্প্রতি, ভারতীয় পাঞ্জাব রাজ্যের একজন মন্ত্রী ও সাবেক ক্রিকেটার নভজ্যোৎ সিং সিধু ঘোষণা দেন যে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রধান কামার জাভেদ বাজওয়া তাকে আশ্বস্ত করেছেন এই বলে- আগামী বছর শিখ ধর্মের প্রধান গুরু নানকের ৫৫০ তম জন্মজয়ন্তীতে খুলে দেওয়া হবে দেরা বাবা নানক থেকে গুরুদুয়ারা কারতারপুর সাহেব চলাচলের রাস্তা।
এরপর, পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী ফাওয়াদ আহমাদ চৌধুরী জানান, ভারতীয় শিখধর্মাম্বলীরা যাতে ভিসা ছাড়াই কারতারপুর সাহেব ভ্রমণ করতে পারেন সে ব্যবস্থা হাতে নিচ্ছে দেশটির নবনির্বাচিত ইমরান খান সরকার।
এমন ঘোষণায় উৎসাহ পান শিখ পূণ্যার্থীরা। জড়ো হতে শুরু করেন ভারতের সীমান্তবর্তী গুরুদাসপুরে। সীমানার কাঁটাতারের পাশে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বিএসএফ-এর তৈরি করে দেওয়া দর্শনস্থলে তারা নিয়মিত হাজির হচ্ছেন কারতারপুর সাহেব শিখ মন্দিরটি এক নজর দেখার আশায়।
লোহার খাঁচায় পুরে রাখা এক জোড়া দূরবীনে দর্শনার্থীরা একে একে চোখ রাখছেন সাদা রঙের মন্দিরের অন্তত গুম্বুজটি হলেও তা একবার দেখার জন্যে। এরপর, হাত জড়ো করে জানাচ্ছেন ভক্তি, পাঠ করছেন ভক্তিমূলক বাণী।
শিখদের ইতিহাসে রয়েছে- গুরুত্বপূর্ণ চারটি ভ্রমণ শেষে ১৫২২ সালে কারতারপুর সাহেবে এসে থিতু হন গুরু নানক শাহ। এখানেই তিনি চাষাবাস করে জীবনের বাকি ১৭টি বছর কাটিয়েছিলেন। আর সেই জায়গাতেই তৈরি করা হয়েছে শিখ মন্দির যা গুরু দুয়ারা নামে সমাধিক পরিচিত।
‘দর্শনস্থল’ থেকে সাড়ে চার কিলোমিটার দূরে অবস্থিত কারতারপুর সাহেব গুরু দুয়ারাটি শিখ ধর্মাম্বলীদের কাছে খুবই পবিত্র। ভারতের শিখরা সেখানে প্রতিদিন জড়ো হচ্ছেন শয়ে শয়ে। তাদের একজন বালজিন্দার কাউর ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়াকে বলেন, “আশা করি, আমাদের প্রার্থনা গুরু শুনবেন।”
Comments