দেশের জন্য দৌড়াতে না পারলে উড়বেন মাশরাফি

মাত্র ০.৮৪ সেকেন্ড। তাতেই এক রাশ বিস্ময় উপহার দিলেন অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। মিড উইকেটে অধিনায়কের মাথার উপর দিয়ে সীমানা পার করতে চেয়েছিলেন শোয়েব মালিক। তখন ধনুকের মতো বাঁকিয়ে পাখির মতো উড়ে লুফে নিলেন সে বল। কে বলবে তার বয়সটা ৩৪ পেরিয়ে ৩৫ ছুঁইছুঁই।

মাত্র ০.৮৪ সেকেন্ড। তাতেই এক রাশ বিস্ময় উপহার দিলেন অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। মিড উইকেটে অধিনায়কের মাথার উপর দিয়ে সীমানা পার করতে চেয়েছিলেন শোয়েব মালিক। তখন ধনুকের মতো বাঁকিয়ে পাখির মতো উড়ে লুফে নিলেন সে বল। কে বলবে তার বয়সটা ৩৪ পেরিয়ে ৩৫ ছুঁইছুঁই।

টিকে গেলে মালিক কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারেন তা এশিয়া কাপেই প্রমাণ রেখেছেন। একাই আফগানদের স্বপ্ন ভেঙেছেন। আগের দিনও সেই আভাস দিচ্ছিলেন। কিন্তু ওই ০.৮৪ সেকেন্ডেই পাকিস্তানকে বাড়ির ঠিকানা দেখিয়ে দিয়েছেন মাশরাফি। কারণ কার্যত তখনই ম্যাচ থেকে ছিটকে যায় পাকিস্তান।

০.৮৪ সেকেন্ডে মাশরাফি উড়েছেন ২.৫৪ মিটার। এই বয়সে! চোখ কচলেই নিশ্চিত হতে হয়েছিল এটা মাশরাফিই তো? বাংলাদেশ ক্রিকেটের যারা খবর রাখেন তারা জানেন এমন ক্যাচ মাশরাফির দ্বারাই সম্ভব। তবুও। আবুধাবির প্রচণ্ড গরমে কাহিল শরীরে বিস্ময় কিছুটা জেগেছেই। এমনকি ক্যাচ নিতে গিয়ে আঙুলে ব্যথাও পেয়েছেন। কিন্তু আঙুলে ব্যান্ডেজ করে একটু পরেই নেমে গেছেন মাঠে।

লড়াই করা মাশরাফির রক্তে মিশে আছে সূচনা লগ্ন থেকেই। অভিষেক সিরিজেই তিনি দেখিয়েছেন হারার আগে তিনি হারেন না। দ্বিতীয় টেস্টে মাত্র ১১ রান লক্ষ্য দিয়ে যেভাবে ডিওন ইব্রাহীমের স্টাম্প উড়িয়েছিলেন তা বাংলাদেশী ক্রিকেট ভক্তের হৃদয়ে গেঁথে আছে। জাত চিনিয়েছিলেন তখনই।

সেই মাশরাফির ক্যারিয়ারে এরপর অনেক ঝড় গিয়েছে। সাতবার তো অস্ত্রোপচার করতে হয়েছে দুই হাঁটুতেই। ছোট খাট মিলিয়ে ১৩ বার গিয়েছেন চিকিৎসকের ছুরিকাঁচির নিচে। এমন ইনজুরি নিয়ে ক্রীড়া বিশ্বে টিকে আছেন কজন? উদাহরণ কেবল মাশরাফিই। ভেঙেছেন, তবে মচকাননি। ইনজুরিকে পেছনে ফেলে বারবার ফিরে এসেছেন।

আর শেষবার যখন এলেন, তার কিছু দিন পরই তৃতীয় বারের মতো পেলেন নেতৃত্বের ভার। টানা হারের বৃত্তে থাকা বাংলাদেশ দলের আত্মবিশ্বাস তখন তলানিতে। কিন্তু তার হাতে পরেই যেন দলের চেহারা বদলে যায়। বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো কোয়ার্টার ফাইনালে জায়গা করে নেওয়া। একই বছরে ভারত, পাকিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দলের বিপক্ষে টানা সিরিজ জয়। ব্যাস! তখন থেকেই বড় দলের ট্যাগ লেগে গেল টাইগারদের গায়ে। এখন বিশ্ব ক্রিকেটে বাড়তি সমীহ করে সব দলই। বাঘের গর্জন আর কালে-ভদ্রে না, নিয়মিতই শোনে ক্রিকেট বিশ্ব।

এরপর কতো অর্জন। যে কোন আসরে ফেবারিটের তালিকায় থাকে বাংলাদেশ। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ইংল্যান্ডের মাঠে টাইগাররা সেমি-ফাইনাল খেলেছে। কে ভাবতে পেরেছিল? তার অনেকটাই সম্ভব হয়েছে মাশরাফির নেতৃত্ব গুণে। দলকে উজ্জীবিত করতে যেমন জানেন, তেমনি জানেন খেলোয়াড়দের থেকে সেরাটা আদায় করে নিতে।

আগের দিন পাকিস্তানের মতো দলের বিপক্ষে নেই দলের সেরা তারকা তামিম ইকবাল ও সাকিব আল হাসান। তাও কি না সেই মাঠে, যে মাঠ প্রায় এক দশক ধরে পাকিস্তানের হোম ভেন্যু। সেখানেও এমন জয়। তাও প্রথমে ব্যাট করে পুঁজি ছিল মাত্র ২৩৯ রানের। পরে সেই রান আটকে রাখা চাট্টে খানে কথা নয়। ইমাম-উল-হক ও শোয়েব মালিক চোখ রাঙাচ্ছিলেন। তখনই মাশরাফির উড়ন্ত ক্যাচ। ম্যাচের মোমেন্টাম ঘুরে যায় তখন থেকেই।

শুধু কি তাই। এরপর বেশ কিছু ফিল্ডিংও করেছেন ঝাঁপিয়ে পরে। টিভি ধারাভাষ্যকার তখন বলেছিলেন, ‘কোন কিছুই মাশরাফিকে শতভাগ দেওয়া থেকে আটকাতে পারে না।’ মাশরাফিও বললেন একই কথা। নিজের ফেসবুক পেজে লিখেছেন, ‘দেশের জন্য তুমি যদি দৌড়াতে বা হাটতে না পার, তখন তুমি উড়তে পারবে।’

আসলেই তাই। দেশের প্রয়োজনে তিনি উড়বেন। শুধু নিজেই উড়বেন না, উড়াবেন দেশকে। কোন বাধাই আটকাতে পারে না তাকে। মাশরাফি তাই প্রেরণার নাম। বাংলাদেশের জাদুর কাঠি।

Comments

The Daily Star  | English

One month of interim govt: Yunus navigating thru high hopes

A month ago, as Bangladesh teetered on the brink of chaos after the downfall of Sheikh Hasina, Nobel Laureate Muhammad Yunus returned home to steer the nation through political turbulences.

5h ago