জলের ওপর চালের হাট

বরিশালের বানারীপাড়ার সন্ধ্যা নদীতে ভোরের দিকে গেলেই চোখে পড়বে একটি ভাসমান হাট। নীল আকাশের নীচে প্রায় ৫০০টি ছোট বড় নৌকায় বাঁশের তৈরি বড় বড় পাত্রে চালের পসরা সাজিয়ে রাখা হয়েছে। প্রথম দেখাতেই কৌতূহলী যে কারোরই নজর কাড়বে এই দৃশ্য।
বরিশালের বানারীপাড়ায় সন্ধ্যা নদীতে সপ্তাহে দুদিন বসে এই ভাসমান চালের হাট। ছবি: টিটু দাশ

বরিশালের বানারীপাড়ার সন্ধ্যা নদীতে ভোরের দিকে গেলেই চোখে পড়বে একটি ভাসমান হাট। নীল আকাশের নীচে প্রায় ৫০০টি ছোট বড় নৌকায় বাঁশের তৈরি বড় বড় পাত্রে চালের পসরা সাজিয়ে রাখা হয়েছে। প্রথম দেখাতেই কৌতূহলী যে কারোরই নজর কাড়বে এই দৃশ্য।

ভাসমান এই হাট বরিশালের চালের কেনাবেচার সবচেয়ে বড় জায়গা। প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে শত শত ক্রেতার সমাগম ঘটে এখানে। ভাসমান এই হাট থেকেই নানান জাতের চাল কিনে ফিরে যান তারা। আর জেলে না হয়েও বহুকাল ধরে এভাবেই নৌকায় ভেসে প্রাত্যহিক জীবিকা নির্বাহের কাজ করে আসছেন এ অঞ্চলের কৃষকেরা।

সপ্তাহে দুদিন (শনিবার ও মঙ্গলবার) বসে এই বানারীপাড়া ভাসমান চালের হাট। সকাল ৭টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত চলে এখানকার কেনাবেচা। বানারীপাড়া বাজারের পশ্চিমে এবং সন্ধ্যা নদীর পূর্ব তীরে বসা এই হাট থেকে বরিশাল জেলা কার্যালয়ের দূরত্ব প্রায় ২৫ কিলোমিটার। প্রায় সারাবছরই চালু থাকে এই হাট।

এমনকি আগস্ট থেকে অক্টোবর (আউশ) এবং ডিসেম্বর থেকে মার্চ (অন্যান্য জাত) পর্যন্ত ধানের মৌসুম চলাকালে এখানে সপ্তাহে অতিরিক্ত দুদিন (বুধ ও শুক্র) হাট বসানো হয়।

স্থানীয় মানুষ এবং জেলা কৃষি অফিসের বরাতে জানা গেছে, প্রায় ২০০ বছর ধরে সন্ধ্যা নদীর ওপরে চলমান এই হাট এখনও সমান জমজমাট। যুগ যুগ ধরে ক্রেতাদের হাতে বিচিত্র জাতের চাল পৌঁছে দিতে পেরে গর্বিত স্থানীয় কৃষকেরাও।

এই হাটেই বরিশাল অঞ্চলের বিখ্যাত সুগন্ধি জাতের ‘বালাম চাল’ পাওয়া যায়। মসজিদ বাড়ি গ্রামের কৃষক বেলাল হোসেন বলেন, স্বাদে অনন্য বালামের খ্যাতি দেশজুড়ে। তবে এই হাটের তুলনায় এতো বেশি পরিমাণে অন্য কোথাও এই চাল মেলে না।

ভাসমান হাটে চলছে বিকিকিনি। ছবি: টিটু দাশ

বালাম ছাড়াও হাটে আরও দুটি বিশেষ জাতের চাল গোদাই ও আউশেরও সহজলভ্যতা রয়েছে।

জেলা কৃষি বিভাগের উপ-পরিচালক হরিদাস শিকারি বলেন, বানারীপাড়া উপজেলার অধিকাংশ কৃষকই এই হাটের বিক্রেতা। কেউ নিজে ধান চাষ না করলেও, বাজার থেকে ধান কিনে তা থেকে চাল প্রস্তুত করে ভাসমান হাটে এনে বিক্রি করেন।

তিনি জানান, প্রচুর নদী-নালা থাকায় আগে এ অঞ্চলের যোগাযোগের মূল মাধ্যম ছিল নৌকা। এই হাট থেকে চাল কিনতে ঢাকা থেকেও বড় বড় নৌকা আসতো একসময়। আর এভাবেই সন্ধ্যা নদীর ওপর ধীরে ধীরে বিস্তৃতি পায় ভাসমান চালের হাট।

অপর এক বিক্রেতা বলেন, বানারীপাড়া উপজেলার নলেশ্রী, দিদিহার, দাণ্ডয়াট, বাইশারী, মসজিদ বাড়ী, আউরা, কালি বাজার, খোদাবকশ, মঙ্গল, চাখার, বাকপুর, ঝিরাকাঠি, ভৈতস্বর, চালতাবাড়ী, চাউলাকাঠি, কাজলাহার, ব্রাহ্মণকাঠি, জম্বু দ্বীপ গ্রামের ৯৫ ভাগ কৃষক এই হাটের ওপর নির্ভরশীল।

‘আমি আগের রাতে নৌকায় চাল বোঝাই করি। এ কাজে স্ত্রী আমাকে সাহায্য করে। ভোরের আলো ফোটার আগেই আমি হাটে পৌঁছে যাই। এভাবেই দূরদূরান্ত থেকে আরও আসেন অনেকে। জমে ওঠে হাট’ বলেন আউরা গ্রামের কৃষক আমজাদ হোসেন।

ভাসমান এই হাটে প্রতি মণ চাল ১ হাজার ৬০০ টাকা দরে বিক্রি হয়। যেখানে অন্যান্য বাজারে প্রতি মণ চালের দাম পড়ে প্রায় ১ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার টাকা। বরিশালের আড়তদার পট্টির মামুন হোসেন বলেন, বিচিত্র জাতের চাল পাওয়ার পাশাপাশি ন্যায্যমূল্যের কারণেই আমি এই হাটে আসি।

Comments

The Daily Star  | English
Yunus meets Malaysian PM Anwar Ibrahim

Anwar Ibrahim to consider issue of Bangladeshi workers

Malaysian Prime Minister Anwar Ibrahim today promised to consider the issue of 18,000 Bangladeshi workers who missed a deadline to enter Malaysia saying that they need workers, but not "modern slaves"

4h ago