আওয়ামী লীগ বিদেশি শক্তির মদদে নয়, জনগণের ওপর নির্ভরশীল: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আগামী নির্বাচনে জনগণ তাকে ভোট দিলেই তার সরকার ক্ষমতায় থাকবে, নচেৎ নয় বা বিদেশি কোন শক্তির মদদে নয়। তিনি বলেন, ‘আমরা জনগণের ওপর নির্ভরশীল, কারো মুখাপেক্ষী হয়ে আমরা রাজনীতি করি না। কে সমর্থন করবে বা কে করবে না, বাইরের মুখাপেক্ষী হয়ে আমার রাজনীতি না।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আগামী নির্বাচনে জনগণ তাকে ভোট দিলেই তার সরকার ক্ষমতায় থাকবে, নচেৎ নয় বা বিদেশি কোন শক্তির মদদে নয়। তিনি বলেন, ‘আমরা জনগণের ওপর নির্ভরশীল, কারো মুখাপেক্ষী হয়ে আমরা রাজনীতি করি না। কে সমর্থন করবে বা কে করবে না, বাইরের মুখাপেক্ষী হয়ে আমার রাজনীতি না।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুধবার বিকেলে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে তার জাতিসংঘ সফর উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে একথা বলেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি মনে করি আমার জোর হচ্ছে আমার দেশের জনগণ। আমার জনগণের সমর্থন আছে কি না, জনগণ আমাদের চায় কি না, জনগণ আমাদের ভোট দেবে কি, দেবে না, সেটাই আমার কাছে বিচার্য বিষয়।’

সংসদে পাশ হওয়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা করে, এই আইন নিয়ে তাদের উদ্বেগের কোন কারণ নেই। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি যেসব সাংবাদিক মনে করেন তারা কোন অন্যায় করবেন না, কারো বিরুদ্ধে কোন ধরনের অপবাদ বা মিথ্যা তথ্য দেবেন না, জনগণকে বিভ্রান্ত করবেন না, তাদের উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই।’

তিনি বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অধিকাংশ ধারাই ফৌজদারি কার্যবিধিতে (সিআরপিসি) আছে। কেবলমাত্র ডিজিটাল ডিভাইসের ব্যবহার সংক্রান্ত ধারাগুলো নতুন ডিজিটাল আইনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী উদাহরণ দেন- জঙ্গি দমনের ক্ষেত্রে কাউকে মোবাইল ট্রাক করে সনাক্ত করা হলো এবং সে যেকোনো সময় একটি বিপদজনক ঘটনা ঘটাতে পারে। সেখানেতো গ্রেপ্তারের জন্য কারো নির্দেশের অপেক্ষা করলে চলে না। তাকে আগে ধরতে হবে, পরে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে এবং সারাবিশ্বে এটাই নিয়ম।

তিনি বলেন, কাজেই এখানে উদ্বিগ্ন তারাই বেশি হবে, যারা এতদিন ধরে খুব তৈরি হয়ে রয়েছে যে, নির্বাচন আসলেই বা তফসিল ঘোষণা হলেই আমাদের বিরুদ্ধে একের পর এক মিথ্যা খবর প্রচার করবে।

তিনি বলেন, এই আইনের একটি ধারা রয়েছে, কেউ কারো বিরুদ্ধে যদি কোন মিথ্যা তথ্য দেয় তাহলে সেই মিথ্যা তথ্যটা তাকে প্রমাণ করতে হবে যে, এটা সত্য। যদি সে প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয় তাহলে সেই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে বা যে পত্রিকা বা ইলেকট্রনিক মিডিয়া বা ডিজিটাল ডিভাইস এটা প্রকাশ বা ব্যবহার করবে, তাদের সবাইকে শাস্তি পেতে হবে। যার বিরুদ্ধে লিখবে তার যে ক্ষতি হবে তার ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।

মিডিয়ায় মিথ্যা তথ্য দিয়ে যাকে সমাজ এবং পরিবারের কাছে হেয় করা হলো তার বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া যাবেনা, প্রশ্ন উত্থাপন করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা নিয়ে অনেক সাংবাদিক উদ্বিগ্ন তা না হয় বুঝলাম কিন্তু এখানে ভুক্তভোগীদের কি হবে, তাদের কিভাবে কমপেনসেট করবেন?

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটি করার আগে পৃথিবীর বিভিন্ন আইনগুলো পর্যালোচনা করে দেখেছে, এটা অনলাইনে দিয়ে সবার সঙ্গে আলোচনাও করা হয়েছে, এরপরেও এত উদ্বেগ কিসের, জানতে চান তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘কারো যদি অপরাধী মন না থাকে বা ভবিষ্যতে অপরাধ করবে এরকম পরিকল্পনা না থাকে তবে, তার উদ্বিগ্ন হওয়ার কোন কারণ নেই।’

নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল জাতিসংঘে গিয়ে সেখানে মহাসচিবের প্রতিনিধির সঙ্গে সাক্ষাৎ করার প্রেক্ষিতে তাকে কেউ কোনো পরামর্শ বা অনুরোধ বা গাইডলাইন প্রদান করেছে কিনা এ প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী সরাসরি বিষয়টি নাকচ করে দেন।

তিনি বলেন, এরকম কোন পরামর্শ তো পাইনিই বরং যাদের সঙ্গে কথা বলেছি তারা আরও তাকে উৎসাহিত করেছেন, শুভেচ্ছা জানিয়েছেন যেন তিনি পুনরায় নির্বাচিত হয়ে আসতে পারেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি তখন বলিনি, আপনারা আসেন, আমাকে ক্ষমতায় বসিয়ে যান। বরং বলেছি, দেখেন দেশের মানুষ যদি ভোট দেয়, তাহলে আছি, না দিলে নাই। তাহলে এটাই আপনাদের সাথে আমার শেষ দেখা।’

সরকারি চাকরিতে কোটা তুলে দেওয়ার বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদের সিদ্ধান্ত সংক্রান্ত এক প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কেউ যখন কোটা চায় না তখন কোটা তুলে দেওয়ারই সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

শেখ হাসিনা কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের বক্তব্য তুলে ধরে বলেন, ‘মেয়েরাও কোটা চায় না। ভালো কথা। মুক্তিযোদ্ধারাও এখন চাকরি পাওয়ার মতো কেউ নেই। সবই তো মারা গেছে।’

তাও মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যদের বংশ পরম্পরায় সরকার পরিচালনায় যেন একটা অংশীদারিত্ব থাকে সেজন্য তিনি কোটা রাখার সপক্ষে ছিলেন উল্লেখ করে বলেন, ‘যারা আন্দোলন করলেন তাদের সঙ্গে আমাদের সেক্রেটারি জেনারেল যখন মিটিং করলেন সেখানে অনেকে বলে আমি মুক্তিযোদ্ধার নাতি- আমরা চাই না কোটা। মেয়েদের একজন বললো আমরা কোটা চাই না, আমরা প্রতিযোগিতা করেই আসবো। মেয়েদের মধ্যে যখন আমি আত্মবিশ্বাস দেখলাম তারা প্রতিযোগিতা করে আসবে তাহলে আর কোটা থাকার দরকার কি?’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধার নাতিই বলে আমি কোটা চাই না। বলেন দরকার আছে আর কোটা রাখার? আর কোটা থাকলে আন্দোলন, কোটাই নাই আন্দোলনও নাই, সংস্কারও নাই।’

Comments