জামাল খাশোগি রহস্য, নজর রাখছেন এরদোয়ান
এটি একটি ঘটনাই বটে! দিনে-দুপুরে একজন মানুষ একটি অফিসে ঢুকলেন আর তারপর থেকেই লাপাত্তা। এরপর, অভিযোগ এবং অভিযোগ উড়িয়ে দেওয়ার পালা। যেহেতু ঘটনাটি তুরস্কের মাটিতে ঘটেছে তাই দেশটির রাষ্ট্রপতি তাইয়েব এরদোয়ান ‘ব্যক্তিগত’ আগ্রহ থেকেই নজর রাখছেন এর ওপর।
গত ২ অক্টোবর ইস্তান্বুলে অবস্থিত সৌদি কনসুলেটে ব্যক্তিগত কাজে ঢোকার পর ‘নিখোঁজ’ হন দেশটির প্রথিতযশা সাংবাদিক জামাল খাশোগি। আরব নিউজ-খ্যাত সেই সাংবাদিককে ‘বন্ধু’ হিসেবে উল্লেখ করে গতকাল (৭ অক্টোবর) আঙ্কারায় সাংবাদিকদের এরদোয়ান বলেন, “ইনশাল্লাহ, আমরা কোনো অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতিতে পড়বো না।”
জামালের এমন ‘হাওয়া’ হয়ে যাওয়ার ঘটনাটিকে তুরস্কের জন্যে বিব্রতকর হিসেবে বর্ণনা দিয়ে তিনি যোগ করেন, “আর ঘটনা যাই ঘটুক না কেনো আমরা তা বিশ্ববাসীকে জানিয়ে দেব।”
তুরস্কের প্রভাবশালী ইংরেজি দৈনিক হুরিয়াত জানায়, এরদোয়ান বলেছেন- কনসুলেটে ঢোকার এবং বের হওয়ার এমনকি, ইস্তান্বুল বিমানবন্দরের সিসিটিভি ফুটেজ পরীক্ষা করে দেখছে তুর্কি পুলিশ।
এদিকে, রাষ্ট্রপতির একজন উপদেষ্টা ইয়াসিন আকতায় সিএনএন তুর্ক টেলিভিশন চ্যানেলকে গতকাল বলেন, সৌদি কনসুলেট থেকে জামাল ‘স্বাভাবিকভাবে’ বের হয়ে আসেনি। তুরস্কের কর্তৃপক্ষের কাছে জামালের ‘নিখোঁজ’ হওয়ার বিষয়ে তথ্য রয়েছে এবং তা সামাধানহীনভাবে ছেড়ে দেওয়া হবে না বলে মনে করেন তিনি।
গত ৬ অক্টোবর আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা দ্য এসোসিয়েটেড প্রেসকে একজন তুর্কি কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন যে গোয়েন্দাদের ‘প্রাথমিক ধারণা’ হলো জামালকে কনসুলেটের ভেতরে হত্যা করা হয়েছে। তবে পরদিন সৌদি কর্তৃপক্ষ এ অভিযোগকে ‘ভিত্তিহীন’ বলে উড়িয়ে দেয়।
ওয়াশিংটন পোস্টের সম্পাদকীয় পাতার সম্পাদক ফ্রেড হিয়াত এক বার্তায় বলেন, “যদি জামালের হত্যার খবরটি সত্য হয় তাহলে এটি হবে একটি দানবীয় ও অপ্রচলিত কাজ।”
জামালকে একজন সাহসী সাংবাদিক হিসেবে উল্লেখ করে বার্তায় বলা হয়, “তিনি দেশের প্রতি ভালোবাসা থেকেই কলম ধরেছিলেন। স্বাধীনতা ও মানবাধিকারের প্রতি তার রয়েছে গভীর বিশ্বাস।”
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কনসুলেটের এক কর্তাব্যক্তির বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যমটি জানায়, তদন্তকারীদের বিশ্বাস “সৌদি আরব থেকে ১৫ সদস্যের একটি দল” ইস্তান্বুলে এসেছে। সেই ব্যক্তির মতে, “এটি ছিলো একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড।”
তবে এমন অভিযোগকে ‘মিথ্যা’ আখ্যায়িত করে সৌদি সংবাদমাধ্যমগুলো জোর দিয়ে বলছে, “সৌদি আরব থেকে যারা গিয়েছেন তারা আসলে ঘটনাটি তদন্ত করতেই গিয়েছেন।”
সম্প্রতি, ওয়াশিংটন পোস্টে এক কলামে জামাল খাশোগি লিখেছিলেন, “সৌদি আরবে তরুণ যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান ক্ষমতায় আসার পর প্রতীজ্ঞা করেছিলেন যে তিনি দেশটিতে সামাজিক ও অর্থনৈতিক সংস্কার করবেন। কিন্তু, বাস্তবে দেখা যাচ্ছে সেখানে চলছে ধরপাকড়ের রাজনীতি।”
তাই ধারণা করা হচ্ছে জামালের এমন মন্তব্যে ক্ষেপেছেন রাজকুমার। ফলে সাংবাদিকের ‘নিখোঁজ’ বা ‘নিহত’ হওয়ার বিষয়ে পাওয়া যাচ্ছে পরস্পরবিরোধী মন্তব্য।
আসলে দুপক্ষ দুরকম কথা বললেও ঘটনাটি যে দেশ দুটির মধ্যে চলমান শীতল সম্পর্ককেই এখন তেতো করে তুলছে তা বলাই বাহুল্য। সেই সঙ্গে আর্ন্তজাতিক পরিমণ্ডলে উঠে আসছে বিরোধী মতের প্রতি সৌদি সরকারের দমননীতির দিকটিইও।
আরও পড়ুন:
Comments