নির্বাচন কমিশনারদের সঙ্গে দূরত্ব ঘোচানোর চেষ্টায় সিইসি

অবশেষে একলা চলো নীতি থেকে সরে অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারদের থেকে দূরত্ব ঘোচানোর পন্থা নিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নুরুল হুদা। বেশ কিছুদিন থেকেই সাংবিধানিক এই সংস্থাটির প্রায় সব সিদ্ধান্ত একাই নিচ্ছিলেন সিইসি।
cec
প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা। ফাইল ছবি

অবশেষে একলা চলো নীতি থেকে সরে অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারদের থেকে দূরত্ব ঘোচানোর পন্থা নিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদা। বেশ কিছুদিন থেকেই সাংবিধানিক এই সংস্থাটির প্রায় সব সিদ্ধান্ত একাই নিচ্ছিলেন সিইসি। স্বাভাবিকভাবেই এ নিয়ে অন্য চার কমিশনারের সঙ্গে তার দূরত্ব তৈরি হয়। এখন নানাভাবে সেই অবস্থা থেকে উত্তরণের চেষ্টা চলছে।

নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের প্রাত্যহিক কর্মকাণ্ড নিয়ে সর্বশেষ গত ২ দুই অক্টোবর একটি অফিস আদেশ জারি করা হয়। এতে বলা হয়, ইসি সচিবালয়ের কর্মকাণ্ড পরিচালনার ক্ষেত্রে নিয়ম কানুনে ব্যত্যয় পরিলক্ষিত হচ্ছে। বিষয়টি চার জন কমিশনারেরই নজরে এসেছে। এখন থেকে ইসি সচিবালয়ের কর্মকাণ্ড যেন যথাযথ নিয়ম মেনে হয় তার জন্য বলা হয় অফিস আদেশে।

নির্বাচন কমিশনের সূত্রগুলো দ্য ডেইলি স্টারকে এই অফিস আদেশ জারি হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

শুধু তাই নয়, অফিস আদেশ জারির আগে সেদিনই সিইসি তার অফিসে অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারদের চায়ের নিমন্ত্রণ জানান।

নির্বাচন কমিশনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজে ‘একতরফা সিদ্ধান্ত’ নিতে থাকায় সিইসির নূরুল হুদার সঙ্গে অন্য চার নির্বাচন কমিশনার-রফিকুল ইসলাম, মাহবুব তালুকদার, কবিতা খানম ও শাহাদাত হোসেন চৌধুরীর দূরত্ব বাড়ছিল। গত মাসে এই চার কমিশনার ইসি সচিবালয়ে ‘আনঅফিশিয়াল নোট’ দেওয়ার পর বিষয়টি প্রথমবারের মতো সামনে আসে। ইসি সচিবালয়ের একজন কর্মকর্তা আনঅফিশিয়াল নোটের বরাত দিয়ে জানান, নির্বাচন কমিশনাররা এতে বলেছেন, ‘নির্বাচন কমিশনের সব সিদ্ধান্ত সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামতের ভিত্তিতে হওয়া উচিত। অনেক ক্ষেত্রেই এই নিয়ম মানা হচ্ছে না।’

এতে তারা আরও বলেন, নিয়ম অনুযায়ী নির্বাচন কমিশনের সব সিদ্ধান্ত তাদের জানার কথা। কিন্তু সিইসি’র অনুমোদন নিয়ে এমন অনেক সিদ্ধান্ত এসেছে যেগুলো সম্পর্কে তারা কেউই অবগত ছিলেন না।

ইসি’র সূত্রগুলো জানায়, নির্বাচন কমিশনের সব গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র তাদের সামনে হাজির করার জন্য ইসি সচিব হেলালউদ্দিন আহমেদকে বলেছেন নির্বাচন কমিশনাররা। সেই সঙ্গে বিভিন্ন প্রকল্প ও নির্বাচনের প্রস্তুতির ব্যাপারেও তারা জানতে চান।

ইসি সূত্রগুলো জানায়, গত ৫ সেপ্টেম্বর নির্বাচন কমিশনের একটি বৈঠকে অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারদের মতামত না নেওয়াকে কেন্দ্র করে সিইসির সঙ্গে তাদের দূরত্ব তৈরি হয়। সেদিন ‘ফোরাম অব দ্য ইলেকশন ম্যানেজমেন্ট বডিজ অফ সাউথ এশিয়া’র নবম সম্মেলনের ঢাকায় আয়োজন নিয়ে বৈঠকে কথা হয়। কিন্তু উপস্থিত থাকলেও সেদিন নির্বাচন কমিশনারদের মতামত নেননি সিইসি।

এর পর ২২ সেপ্টেম্বর রাজধানীর নির্বাচন ভবনে সিইসির উপস্থিতিতে নির্বাচন কর্মকর্তাদের একটি প্রশিক্ষণ কর্মশালায় অংশগ্রহণ করা থেকে বিরত থাকেন নির্বাচন কমিশনাররা। কারণ হিসেবে তারা বলেন, কর্মশালার ব্যাপারে তারা ‘অবহিত ছিলেন না’। এমনকি এই কর্মশালার ব্যাপারেও নির্বাচন কমিশনারদের মতামত নেওয়া হয়নি। তাদের কয়েকজন অভিযোগ করে বলেন, সিইসি ও ইসি সচিব অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়ে কমিশনারদের উপেক্ষা কাজ করেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন নির্বাচন কমিশনার গতকাল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ৩,৮০০ কোটি টাকা খরচ করে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) কেনার ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনের প্রস্তাবের ব্যাপারে তিনি অবগত ছিলেন না। আরেকজন নির্বাচন কমিশনার বলেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচন কর্মকর্তাদের মাঠ পর্যায়ে পরিদর্শনে যাওয়ার ব্যাপারে তিনি কিছু জানতেন না।

‘সাংবাদিকরা বিভিন্ন সময় আমাদের নির্বাচনের প্রস্তুতি, ইভিএম ও নির্বাচন কমিশনারদের পরিদর্শনে যাওয়ার ব্যাপারে প্রশ্ন করেন। কিন্তু এসব ব্যাপারে অন্ধকারে থাকায় আমি প্রশ্নের জবাব দিতে পারি না’- উল্লেখ করেন তিনি।

নির্বাচন সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের দায়িত্বে রদবদল নিয়ে গত বছরের জুলাই মাসে প্রথম আনঅফিশিয়াল নোট দিয়েছিলেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার। জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যাবহারের জন্য গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন করতে ইসির উদ্যোগের ব্যাপারে এ বছরের ৩০ আগস্ট নোট অব ডিসেন্ট দিয়ে দ্বিমত জানিয়েছিলেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

Govt to form commissions to reform six key sectors: Yunus

The commissions are expected to start their functions by October and they are expected to complete their work within the next three months, said Chief Adviser Prof Muhammad Yunus in his televised address to the nation

23m ago