‘মিথ্যা খবর ছড়িয়েছিলেন শহিদুল আলম’- রয়টার্সের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, গত আগস্ট মাসে ছাত্র আন্দোলনের সময় আলোকচিত্রী শহিদুল আলম মিথ্যা খবর ছড়িয়ে তার সরকারকে যে বেকায়দায় ফেলতে চেয়েছিলেন এ ব্যাপারে তার কোনো সন্দেহ নেই।
গত মাসের শেষ দিকে নিউইয়র্কে অবস্থানকালে প্রধানমন্ত্রী রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এই কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকারটি গতকাল প্রকাশ করেছে রয়টার্স।
এতে জানানো হয়, সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে সুপরিচিত আলোকচিত্রীদের মধ্যে অন্যতম শহিদুল আলমকে ‘মানসিকভাবে অসুস্থ’ ও তার সরকারবিরোধী কর্মকাণ্ডের জন্য পারিবারিক অতীতকে দায়ী করেন। তবে প্রধানমন্ত্রী তার দাবির স্বপক্ষে কোনো প্রমাণ হাজির করেননি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, উত্তেজিত ছাত্রদের যখন তার সরকার শান্ত করার চেষ্টা করছিল ঠিক তখনই শহিদুল মিথ্যা খবর ছড়িয়েছিলেন। শেখ হাসিনা বলেন, ‘তিনি পরিস্থিতিকে ব্যবহার করে উসকানি দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। আমরা শিশুদেরকে রক্ষা করার চেষ্টা করছিলাম কিন্তু তিনি তাদের ব্যবহার করতে চাইছিলেন। তিনি সব মিথ্যা খবর শুরু করেছিলেন… আপনি বিষয়টিকে কিভাবে মেনে নিতে পারেন? পাল্টা প্রশ্ন রাখেন প্রধানমন্ত্রী।
এসময় শহিদুল আলমের ‘গ্রেট আঙ্কেল’ পাকিস্তানের সাবেক মন্ত্রী যিনি সক্রিয়ভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিলেন সেই আব্দুস সবুর খানের তীব্র সমালোচনা করেন।
তিনি আমাদের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিলেন, তিনি পাকিস্তানের সঙ্গে হাত মিলিয়েছিলেন, তিনি বাংলাদেশকে স্বীকার করেননি। ১৯৭১ সালে তিনি দখলদার পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সঙ্গে ছিলেন- উল্লেখ করে হাসিনা বলেন, অতীত সব সময় মিলিয়ে যায় না আপনি বুঝতেই পারছেন।
সদ্য কার্যকর হওয়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের উদ্বেগজনক দিকগুলো নিয়ে প্রশ্নের জবাবে তিনি রয়টার্সকে বলেন, রিপোর্টারদের ভয় পাওয়ার কিছুই নেই। তার ভাষায়, ‘তারা [সাংবাদিক] কোনো ভুল করছেন না এ ব্যাপারে যদি তাদের আত্মবিশ্বাস থাকে তবে তারা কেন উদ্বিগ্ন হবেন।’
গত আগস্ট মাসে নিরাপদ সড়কের দাবিতে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়া ছাত্র আন্দোলন নিয়ন্ত্রণে সরকারের পদক্ষেপের সমালোচনা করে বক্তব্য দেওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে শহিদুল আলমকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর পর থেকে সারা বিশ্ব থেকে শহিদুলের মুক্তি বহু বিশিষ্টজন বিবৃতি দিয়েছেন। বাংলাদেশের মানুষ কতটা বাক স্বাধীনতা ভোগ করেন শহিদুল গ্রেপ্তার হওয়াকে তার নজীর হিসেবেও দেখা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্যের ব্যাপারে জানতে চাইলে শহিদুলের পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়, বিচার হওয়ার আগেই সরকার তার অপরাধ নির্ধারণ করে ফেলেছে। শহিদুলের ভাইয়ের মেয়ে দিলরুবা করিম বলেন, ‘এ থেকে বোঝা যায় তারা তাদের বিচার প্রক্রিয়া সেরে ফেলেছেন।’ শেখ হাসিনার বক্তব্যকে ‘চরম নিষ্ঠুর’ ও ‘তিনি কথিত গণতন্ত্রের সঙ্গে খাপ খান না’ বলে মন্তব্য করেন।
Comments