লালন : কালান্তরের পথিক
বাউল, চলতি কথায়, মরমি-সাধনপথের পথিক। গুরুর নির্দেশে দেহসাধনার পথ ও পন্থা জেনে নিয়ে তার যাত্রা হয় শুরু। মহাজন-বাক্য সুরের আশ্রয়ে গান হয়ে দিশা দেয় তাকে- গোপন-আঁধার পথের সুলুক-সন্ধান মেলে তারপর- আলোকিত হয়ে ওঠে তার মনের পৃথিবী। জীবন ও জগতের রহস্য ক্রমে উন্মোচিত হয় যখন সে দেহের ভাষা পড়তে পারে। বাউলের গান তাই একদিকে দেহজরিপের গান, স্বরূপ-অন্বেষার গান, ‘গভীর নির্জন পথে’ ‘মনের মানুষ’কে খুঁজে ফেরার গান- অপরদিকে এই গান নিম্নবর্গের মানুষের দ্রোহের গান- প্রতিবাদের গান- শ্রেণিচেতনার গান- শুভ্র-সুন্দর জীবনস্বপ্নের গানও।
বাউলের জন্ম দ্রোহ থেকে। তার সাধনা প্রচলিত শাস্ত্র ও প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মকে অগ্রাহ্য-অস্বীকারের স্পর্ধার প্রতীক। তার দর্শন বর্ণশোষণ ও জাতপাতের বিরুদ্ধে ‘মানুষসত্যে’র উদার মানবিকতার দর্শন। তার গান রূপক-প্রতীকের আড়ালে প্রবল প্রতিবাদের গান- প্রচলিত আচার-প্রথা-বিশ্বাসকে চূর্ণ করা নবজীবনের গান। বিশ্বাসের বদলে যুক্তি, প্রথার শাসন থেকে মুক্তি, সংস্কার-আচারকে মুক্তবুদ্ধি দিয়ে প্রতিস্থাপন- বাউলের জীবনচেতনার মূল কথা। শুভবুদ্ধি ও কল্যাণচেতনায় অভিষিক্ত হয়ে প্রথা-শাস্ত্র-ধর্মকে আঘাত করার সামাজিক শক্তি অর্জনের প্রয়াসী সে। বিশুদ্ধ মানবিক গুণে ঋদ্ধ লালনের (১৭৭৪-১৮৯০) জীবন ও সাধনায় এই বাউলচেতনার পূর্ণ প্রকাশ লক্ষ করা যায়। তাই বাউলসাধনার উৎস ও ধারা বিশ্লেষণ করে লালনকে মরমি ও দ্রোহী- এই দুই পরিপূরক চেতনার সমন্বিত রূপ-বৈশিষ্ট্যের আলোকে চিনতে পারলেই তাঁর স্বরূপ স্পষ্ট হয়ে ধরা দেবে- তাঁর বক্তব্যের তাৎপর্য আবিষ্কৃত হবে- জীবন ও সমাজসত্যের শেকড়সন্ধানে তাঁর প্রয়াসের প্রকৃত মর্ম-উদ্ধার সম্ভব হবে।
২.
লালন সাঁই বাউলসাধনার সিদ্ধ পুরুষ। তাঁর সাধনার ভেতর দিয়েই বাউলমতের সর্বোচ্চ বিকাশ। লালন তাঁর অতুলনীয় সংগীত-প্রতিভা ও তত্ত্বজ্ঞানের সমন্বয়ে বাউলগানের একটি স্বতন্ত্র ‘ঘরানা’ নির্মাণ করেছিলেন। তাঁর গানে বাউলের তত্ত্ব ও সাধনার গভীর পরিচয় প্রতিফলিত। পাশাপাশি এ-ও উল্লেখ করা প্রয়োজন, ব্রাত্যজনের এই সাধন-সংগীতকে লালনই শিষ্টসমাজে গ্রহণযোগ্য ও সমাদরের সামগ্রী করে তোলেন।
লালনের গানে দেহবিচার, মিথুনাত্মক যোগসাধনা, গুরুবাদ, মানুষতত্ত্ব- বাউলসাধনার এইসব বিষয় সংগতভাবেই এসেছে। বাউলের সাধনার মূল অবলম্বন মানবদেহ ও মানবগুরুর নির্দেশনা। তাই দেহজরিপ ও গুরুবন্দনাই রয়েছে বাউলসাধনার মূলে। তার অনুষঙ্গে এসেছে সৃষ্টিতত্ত্ব, সাধনতত্ত্ব, মানুষতত্ত্ব, খোদাতত্ত্ব, নবিতত্ত্ব, কৃষ্ণতত্ত্ব বা গৌরতত্ত্ব।
দেহকে কেন্দ্র করেই বাউলের সাধনা। এই দেহেই ‘পরম পুরুষে’র বাস। তাই দেহবিচারের সৌজন্যে আত্মস্বরূপ নির্ণয় করতে পারলেই সেই পরম প্রত্যাশিত ‘মনের মানুষে’র সন্ধান মেলে। লালনের গানে এই মানবদেহ কখনো ‘ঘর’, কখনো ‘খাঁচা’, ‘নৌকা’, আবার কখনো বা ‘আরশিনগর’ নামে চিহ্নিত। দেহঘরের অচিন বসতির পরিচয়-সন্ধানের ব্যাকুলতা তাঁর গানে প্রকাশ পেয়েছে এইভাবে : ‘আমার এই ঘরখানায় কে বিরাজ করে। / তারে জনম-ভর একদিন দেখলাম নারে ॥’ লালন বলেন : ‘এই মানুষে আছে রে মন, যারে বলে মানুষ-রতন’। কিন্তু সেই মানুষ-দর্শনের অন্তরায় হলো : ‘আমার ঘরের চাবি পরের হাতে। / কেমনে খুলিয়ে সে ধন দেখব চক্ষেতে ॥’ মানবদেহই বাউলের পুণ্যতীর্থ। এই উপলব্ধি থেকেই লালনের ঘোষণা শুনি : ‘উপাসনা নাই গো তার / দেহের সাধন সর্ব-সার / তীর্থ-ব্রত যার জন্য / এ দেহে তার সকল মেলে ॥’
৩.
পারস্যের মরমি কবি হাফিজ বলেছিলেন, অবশ্যই রূপকার্থে,- ‘মুরশিদ যদি নির্দেশ করেন, তবে তোমার জায়নামাজ শরাব দিয়ে রঞ্জিত করে দাও’। বাউলও এমনই এক গুরুবাদী লৌকিক সম্প্রদায়। তাই গুরু বা মুরশিদের মাহাত্ম্য-কথা এই ধর্মসাধনার সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে আছে। গুরুর হাত ধরেই জ্ঞানরিক্ত শিষ্যের সাধন-ভজনের জগতে প্রবেশ। মীর মশাররফ হোসেনের ‘হিতকরী’ (৩১ অক্টোবর ১৮৯০) পত্রিকায় তাই এ-বিষয়ে স্পষ্টই বলা হয় : লালন ‘বড় গুরুবাদ পোষণ করিতেন’। লালনের গানে বাউলসাধনার এই অনুষঙ্গটি অত্যন্ত গুরুত্ব ও মর্যাদার সঙ্গে প্রকাশিত। লালন বলেছেন : ‘ভবে মানুষ-গুরু নিষ্ঠা যার / সর্ব-সাধন সিদ্ধ হয় তার ॥’ তাই সেই গুরুর প্রতিই লালনের বিনীত নিবেদন : ‘আমার জন্ম-অন্ধ মন-নয়ন / গুরু তুমি নিত্য-সচেতন / চরণ দেখব আশায় কয় লালন / জ্ঞান-অঞ্জন দেও নয়নে ॥’ - গুরু-বন্দনার উজ্জ্বল নিদর্শন শিল্প-শোভিত এই পদটি।
৪.
বাউলসাধনার মর্ম জুড়ে আছে মানুষতত্ত্বের ভূমিকা। ‘আরশিনগরের পড়শি’ যিনি, তিনিই লালনের ‘মনের মানুষ’, তিনিই ‘অচিন মানুষ’, ‘অলখ সাঁই’, ‘সাঁই নিরঞ্জন’। এই ‘মানুষে’র অন্বেষণেই বাউলের সাধনার দিন বয়ে যায়। ‘মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি’ আর ‘মানুষতত্ত্ব ভজনের সার’- এই জ্ঞানকে অন্তরে ধারণ করেই লালন বলেন : ‘মানুষতত্ত্ব যার সত্য হয় মনে / সে কি অন্য তত্ত্ব মানে ॥’
৫.
দীর্ঘজীবী লালন প্রায় পৌনে এক শতাব্দ ধরে গান রচনা করেছেন। তাঁর গানের সঠিক সংখ্যা জানা না গেলেও অনুমান করা যায় তা অনায়াসেই হাজারের কোঠা ছাড়িয়ে যাবে। তবে এ-যাবত সংগৃহীত তাঁর প্রামাণ্য গানের সংখ্যা কোনোমতেই সাতশো ছাড়াবে না। লালন ছিলেন নিরক্ষর, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষালাভের কোনো সুযোগই তাঁর হয়নি। কিন্তু তাঁর সংগীতে বাণীর সৌকর্য, সুরের বিস্তার, ভাবের গভীরতা আর শিল্পের নৈপুণ্য লক্ষ করে তাঁকে নিরক্ষর সাধক বলে মানতে দ্বিধা থেকে যায়। প্রকৃতপক্ষে লালন ছিলেন স্বশিক্ষিত। ভাবের সীমাবদ্ধতা, বিষয়ের পৌঁনঃপুনিকতা, উপমা-রূপক-চিত্রকল্পের বৈচিত্র্যহীনতা ও সুরের গতানুগতিকতা থেকে লালন ফকির বাউলগানকে মুক্তি দিয়েছিলেন। এই বৈশিষ্ট্যের কারণে তাঁর সমকালেই তাঁর গান লৌকিক ভক্তম-লির গণ্ডি পেরিয়ে শিক্ষিত সুধীজনকেও গভীরভাবে স্পর্শ করেছিল। রবীন্দ্রনাথ তাই তাঁর গানের যোগ্য কদরদানি করেছিলেন। উত্তরকালে লালনের গান দেশের ভূগোল ছাড়িয়ে বিদেশেও স্থান করে নিয়েছে। এই নিরক্ষর গ্রাম্য সাধককবির শিল্প-ভুবনে প্রবেশ করলে বিস্মিত হতে হয় যে, তিনি কত নিপুণভাবে শিল্পের প্রসাধন-প্রয়োগ করেছেন তাঁর গানে। ভাব-ভাষা, ছন্দ-অলঙ্কার বিচারে এই গান উচ্চাঙ্গের শিল্প-নিদর্শন এবং তা তর্কাতীতরূপে কাব্যগীতিতে উত্তীর্ণ। লোকপ্রিয় লালনের গান আজ তাই সংগীত-সাহিত্যের মর্যাদা পেয়েছে।
৬.
বাউলগান লৌকিক সমাজের মরমি অধ্যাত্মসাধনার অবলম্বন হলেও লালনের হাতে তা অধিকতর সামাজিক তাৎপর্য ও মানবিক বিশ্বাসে সমৃদ্ধ হয়ে প্রকাশিত হয়েছে। লালনের গানে ধর্ম-সমন্বয়, সম্প্রদায়-সম্প্রীতি, মানব-মহিমাবোধ, অসাম্প্রদায়িক চেতনা, আচারসর্বস্ব ধর্মীয় অনুষ্ঠানের বিরুদ্ধতা, বর্ণশোষণ-জাতিভেদ ও ছুঁতমার্গের প্রতি ঘৃণা, সামাজিক অবিচার ও অসাম্যের অবসান-কামনা- এইসব বিষয় স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত। মূলত তাঁর বিদ্রোহ প্রথাগত শাস্ত্রাচার ও প্রচলিত সমাজধর্মের বিরুদ্ধে। এই ধরনের বক্তব্যের ভেতর দিয়ে তাঁর উদার দৃষ্টিভঙ্গি ও মানবতাবাদী মনের পরিচয় পাওয়া যায়। লালন তাঁর আন্তরিক বোধ ও বিশ্বাসকে অকপটে তাঁর গানে প্রকাশ করেছেন। তাঁর আদর্শ ও জীবনাচরণের সঙ্গে তাঁর বক্তব্যের কোনো অমিল হয়নি- বিরোধ বাধেনি কখনো।
লালন জীবনভর বর্ণশোষণ, জাতপাত ও অস্পৃশ্যতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও সংগ্রাম করে এসেছেন। তাঁর নিজের জীবনেও এই দুঃখজনক অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হয়েছে অনেকবারই। প্রথম জীবনে মুসলমানের গৃহে অন্ন-জল-আশ্রয় গ্রহণের জন্যে লালনকে শুধু সমাজচ্যুতই হতে হয়নি, স্নেহময়ী জননী ও প্রিয়তমা পত্নীকেও হারাতে হয়েছে। এইসব নির্মম ও বেদনাদায়ক অভিজ্ঞতার কারণেই হয়তো তাঁর ভেতরে গড়ে উঠেছিল একটি প্রতিবাদী সত্তা। লালন তাই কখনোই জাতিত্বের সংকীর্ণ গণ্ডির মধ্যে নিজেকে আবদ্ধ রাখতে চাননি। একজন মানবপ্রেমী সংস্কারমুক্ত বাউল হিসেবে তিনি জানতেন, জাতের অহমিকা ও দ্বন্দ্ব মানুষকে খণ্ডিত ও কূপমণ্ডুক করে রাখে। তাই জাতধর্মের বিরুদ্ধে চরম বক্তব্য পেশ করে তিনি বলেছেন : ‘জাত না গেলে পাইনে হরি / কি ছার জাতের গৌরব করি / ছুঁসনে বলিয়ে। / লালন কয় জাত হাতে পেলে / পুড়াতাম আগুন দিয়ে ॥’
লালনের গান বাউল সম্প্রদায়ের গুহ্য-সাধনার বাহন হলেও এর ভেতরে মাঝে-মধ্যে বিস্ময়কর সমাজচেতনা প্রকাশ পেয়েছে। সামাজিক অবিচার ও অসাম্য, ধর্মীয় গোঁড়ামি, শ্রেণি-শোষণ ও গোত্র-বৈষম্য এই মরমি সাধকের দৃষ্টি এড়িয়ে যায়নি। তাই অধ্যাত্ম-উপলদ্ধির অবসরে, প্রক্ষিপ্ত চিন্তার চিহ্ন হলেও, তিনি এসব বিষয়ে তাঁর অকপট-আন্তরিক বক্তব্য পেশ করেছেন। বিত্তবান ও বিত্তহীন, কুলীন ও প্রাকৃত, শোষক ও শোষিতে বিভক্ত সমাজে দরিদ্র-নিঃস্ব-নির্যাতিত নিম্নবর্গের মানুষের প্রতিনিধি ছিলেন লালন।
৭.
লালনের গান সমাজ-সম্পর্কের ধারা বেয়ে সাম্প্রদায়িকতা-জাতিভেদ-ছুঁতমার্গ- এইসব যুগ-সমস্যাকে চিহ্নিত করে তার সমাধানের ইঙ্গিত দিয়েছিল। এই প্রয়াসের মাধ্যমে লালন সমাজসচেতন, মানবতাবাদী ও প্রগতিশীল দৃষ্টিভঙ্গির যে পরিচয় দিয়েছেন তার স্বরূপ নির্ণয় বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ও মূল্যবান। লালনের এই ঐতিহাসিক ভূমিকাকে কেউ কেউ বাংলার সামাজিক জাগরণের পুরোধা রাজা রামমোহন রায়ের অবদানের সঙ্গে তুলনা করতে চেয়েছেন। এ প্রসঙ্গে অন্নদাশঙ্কর রায় মন্তব্য করেছেন : ‘বাংলার নবজাগরণে রামমোহনের যে গুরুত্ব বাংলার লোক-মানসের দেয়ালী উৎসবে লালনেরও সেই গুরুত্ব’। ইতিহাসবেত্তা অমলেন্দু দে-ও লোকায়ত জীবনে লালনের সুগভীর প্রভাব এবং নবজাগৃতির প্রেক্ষাপটে লালন ও রামমোহনের ভূমিকার তুলনামূলক আলোচনার গুরুত্ব স্বীকার করেছেন।
আমাদের বিশ্বাস, নবজাগৃতির পটভূমিকায় রামমোহন ও লালনের দৃষ্টিভঙ্গি ও অবদানের আলোচনা হলে দেখা যাবে লালনের অসাম্প্রদায়িক চেতনা, মানবতাবাদ, সংস্কার-প্রয়াস ও জাতিভেদ-বিরুদ্ধ মনোভাবের ঐতিহাসিক গুরুত্ব কতখানি। জানা যাবে, লালনের মানবিক মূল্যবোধ ও মানবধর্মী চিন্তাধারার প্রভাব বাংলার গ্রামদেশের প্রাকৃত জনগোষ্ঠী এবং নগরবাসী কিছু শিক্ষিত কৃতী পুরুষের মনেও কী গভীর প্রভাব ফেলেছিল, কতখানি আন্তরিক ও অকৃত্রিম ছিল সেই প্রচেষ্টা। নবজাগৃতির অন্যতম শর্ত যে অসাম্প্রদায়িক মানবতাবাদ ও ইহজাগতিকতা, তা এই স্বশিক্ষিত গ্রাম্যসাধকের বাণী ও সাধনার ভেতরেই প্রকৃত অর্থে সত্য হয়ে উঠেছিল- প্রাণ পেয়েছিল। যথার্থই গ্রাম-বাংলার এই মানবতাবাদী মুক্তবুদ্ধি-আন্দোলনের প্রাণপুরুষ ছিলেন লালন সাঁই।
৮.
একমাত্র মানুষই সত্য, আর সব মিথ্যা, অলীক-কুহক-মায়ার বিভ্রম। কেবল এই মানবজন্মই সত্য- ইহলোকের ওপারে আর কিছু দৃশ্যমান নয়। ‘জগৎ সত্য, ব্রহ্ম মিথ্যা’- এই তত্ত্ব লালনের চেতনাকেও নাড়া দিয়েছিল। তাই তাঁর কণ্ঠে শুনি ইহজাগতিকতার জয়ধ্বনি : ‘এমন মানব-জনম আর কি হবে।/ মন যা কর ত্বরায় কর এই ভবে॥’
মানুষের মুক্ত ভূমির সন্ধানে- মহৎ জীবনের অভিমুখে লালন যাত্রা করেছিলেন। তিনি হতে চেয়েছিলেন তরঙ্গমুখর এক জলধি, কিন্তু বিরূপ পরিবেশের চাপে হয়ে রইলেন এক গ-ুষ পানীয়ের ‘কূপজল’। তাই দীর্ঘশ্বাস আর হাহাকারে দীর্ণ লালনের কণ্ঠে ফুটে ওঠে ক্ষোভ আর নৈরাশ্যের যুগলবন্দি :
রাখলেন সাঁই কূপজল করে আন্ধেলা পুকুরে।
কিন্তু অমৃতের সন্তান- মহৎ জীবন-অভিসারের যাত্রী লালন ভরসা হারাননি, বিশ্বাসচ্যুত হননি,- অনুকূল সময়ের প্রত্যাশায় তাই অপেক্ষায় থেকেছেন :
কবে হবে সজল বরষা
রেখেছি মন সেই ভরসা...
-এই আশাবাদের নামই লালন- এই বিশ্বাসের নামই লালন- এই ভবিষ্যতের নামই লালন।
ডক্টর আবুল আহসান চৌধুরী
প্রফেসর, বাংলা বিভাগ (পিআরএল)
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়
Comments