ইমরুল-লিটনের ব্যাটে জিম্বাবুয়েকে উড়িয়ে দিল বাংলাদেশ

সাগরিকায় ২৪৭ রানের লড়াকু লক্ষ্যই পেয়েছিল বাংলাদেশ। তবে এ লক্ষ্য তাড়ায় বড় কোন পরীক্ষায় পড়তে হয়নি টাইগারদের। জিম্বাবুয়ের দেওয়া লক্ষ্যকে মামুলী বানিয়ে দেন দুই ওপেনিং ব্যাটসম্যান ইমরুল কায়েস ও লিটন কুমার দাস। ১৪৮ রানের দারুণ এক ওপেনিং জুটি গড়েন তারা। ফলে হেসেখেলেই ৩৫ বল ও ৭ উইকেট হাতে রেখে জয়ের বন্দরে পৌঁছায় মাশরাফি বিন মুর্তজার দল। ফলে এক ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ নিশ্চিত করলো বাংলাদেশ।
দুই ওপেনারের বিদায়ের পর বাকি কাজ মোহাম্মদ মিঠুনকে নিয়ে শেষ করেন মুশফিকুর রহীম। শেষ পর্যন্ত ব্যাট করে ৪০ রান করেন এ উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান। মিথুন অপরাজিত থাকেন ২৪ রানে। জিম্বাবুয়ের পক্ষে ৩টি উইকেটই নিয়েছেন সিকান্দর রাজা।
সংক্ষিপ্ত স্কোর :
জিম্বাবুয়ে : ২৪৬/৭ (৫০ ওভার) (মাসাকাদজা ১৪, জুওয়াও ২০, টেইলর ৭৬, উইলিয়ামস ৪৭, রাজা ৪৯, মুর ১৭, চিগুম্বুরা ৩, মাভুটা ৯* , টিরিপানো ৩*; মাশরাফি ১/৪৯, মোস্তাফিজ ১/৩৫, ইফুদ্দিন ৩/৪৫, মিরাজ ১/৪৫, নাজমুল ০/৪৩, মাহমুদউল্লাহ ১/২১)।
বাংলাদেশ : ২৫০/৩ (৪৪.১ ওভার) (লিটন ৮৩, ইমরুল ৯০, ফজলে রাব্বি ০, মুশফিক ৪০*, মিঠুন ২৪*; জার্ভিস ০/৩১, চাতারা ০/৪৮, টিরিপানো ০/২২, মাভুটা ০/৫৬, উইলিয়ামস ০/৪৩, রাজা ৩/৪৩, জুওয়াও ০/৬)।
ফলাফল : বাংলাদেশ ৭ উইকেটে জয়ী।
বিলাসী শটে ইমরুলের বিদায়
জয় থেকে খুব বেশি দূরে ছিল না বাংলাদেশ। কিন্তু তাড়াহুড়ো করতে গিয়েই আউট হন শুরু থেকে দেখে শুনে খেলা ইমরুল কায়েস। হাফসেঞ্চুরি তুলেছিলেন, এগিয়ে যাচ্ছিলেন টানা দ্বিতীয় সেঞ্চুরির দিকে। কিন্তু বিলাসী শট খেলতে গিয়ে আউট হন এ ওপেনার। সিকান্দার রাজার তৃতীয় শিকার হয়ে লং অফে ধরা পড়েন এল্টন চিগুম্বুরার হাতে। ফলে ৯০ রানে শেষ হয় ইমরুলের ইনিংস। ১১১ বলে ৭টি চারের সাহায্যে এ রান করেন তিনি।
আবারো শূন্য রানেই সাজঘরে ফজলে রাব্বি
ঘরোয়া লিগে ভালো খেলার পুরষ্কার হিসেবে বাংলাদেশ জাতীয় দলে জায়গা পেয়েছিলেন ফজলে রাব্বি। তবে অভিষেকটা ভালো হয়নি তার। মিরপুরে ০ রানেই আউট হয়েছিলেন। দ্বিতীয় ম্যাচেও খালি হাতেই বিদায় নিলেন এ অলরাউন্ডার। সিকান্দার রাজার বলে এগিয়ে খেলতে গিয়ে মিস করলে স্টাম্পিংয়ের ফাঁদে পড়েন তিনি।
লিটনের বিদায়ে ভাঙল জুটি
শুরুতে রিভিউ নিয়ে বেঁচেছিলেন লিটন কুমার দাস। এরপর দারুণ ব্যাটিং করে চলেছিলেন এ ওপেনার। এগিয়ে যাচ্ছিলেন সেঞ্চুরির দিকে। কিন্তু সামান্য ভুলে শেষ হলো তার লড়াই। সিকান্দার রাজার বলে পয়েন্টে সহজ ক্যাচ তুলে দেন তিনি। আর সে ক্যাচ লুফে নিতে কোন ভুল করেননি তিরিপানো। ৭৭ বলে ৮৩ রান করেছেন লিটন। ১২টি চার ও ১টি ছক্কার সাহায্যে নিজের ইনিংস সাজিয়েছেন এ ওপেনার। আউট হওয়ার আগে ইমরুলের সঙ্গে ১৪৮ রানের জুটি গড়ে বাংলাদেশকে উড়ন্ত সূচনা এনে দিয়েছেন তিনি।
ইমরুলের হাফসেঞ্চুরি
আগের ম্যাচেই দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরি করেছিলেন ইমরুল কায়েস। দ্বিতীয় ম্যাচেও দারুণ ব্যাটিং চালিয়ে যাচ্ছেন। এর মধ্যেই তুলে নিয়েছেন ফিফটি। সিকান্দার রাজার বলে সুইপার কাভারে ঠেলে দিয়ে হাফ সেঞ্চুরি স্পর্শ করেন তিনি। ৫৭ বলে ফিফটি তোলা এ ব্যাটসম্যান নিজের ইনিংসে চার মেরেছেন ৫টি।
লিটন-ইমরুল জুটিতে শতরান
লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে দুর্দান্ত সূচনা পেয়েছে বাংলাদেশ দল। এক প্রান্তে বেশ আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করছেন লিটন কুমার দাস। শুরুতে কিছুটা দেখে খেললেও ধীরে ধীরে খোলস ছেড়ে বেড়িয়ে আসছেন আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান ইমরুল। এর মধ্যেই এ জুটিতে এসেছে শতরান। ৯৪ বলে আসে এ জুটির শতরান।
লিটনের হাফ সেঞ্চুরি
ইনিংসেই প্রথম ওভারেই ফিরতে পারতেন লিটন কুমার দাস। রিভিউ নিয়ে বেঁচেছিলেন তিনি। এরপর দারুণ ব্যাটিং করে তুলে নিয়েছেন নিজের হাফসেঞ্চুরি। মাত্র ৪৬ বলে হাফসেঞ্চুরি স্পর্শ করেছেন। ৮টি চার ও ১টি ছক্কার সাহায্যে এ রান করেন তিনি।
লিটন-ইমরুল জুটিতে পঞ্চাশ রান
দুই ওপেনার লিটন কুমার দাস ও ইমরুল কায়েসের দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে দারুণ সূচনা পেয়েছে বাংলাদেশ দল। এর মধ্যেই এ দুই ব্যাটসম্যান ৫০ রানের জুটি গড়েছেন। ইমরুল কিছুটা দেখে খেললেও বেশ আগ্রাসী ব্যাটিং করে যাচ্ছেন লিটন।
রিভিউ নিয়ে বাঁচলেন লিটন
কাইল জার্ভিসের বলে লেগে ঘোরাতে চেয়েছিলেন লিটন কুমার দাস। ব্যাটে বলে করতে না পারায় লাগে প্যাডে। এলবিডাব্লুউর আবেদন করেন জার্ভিস। তার আবেদনে সাড়া দিয়েছিলেন আম্পায়ার। পরে আরেরক ওপেনার ইমরুল কায়েসের সঙ্গে আলোচনা করে রিভিউ নিলে বেঁচে যান লিটন। রিপ্লেতে দেখা যায় লেগ স্টাম্পের বাইরে ছিল বল।
বাংলাদেশকে ২৪৭ রানের লক্ষ্য দিল জিম্বাবুয়ে
দারুণ এক হাফ সেঞ্চুরি করেছেন ব্রেন্ডন টেইলর। ফিফটি করতে না পারলেও দারুণ দুটি ইনিংস খেলেছেন শন উইলিয়ামস ও সিকান্দার রাজা। এ তিন ব্যাটসম্যানের দৃঢ়তায় লড়াই করার পুঁজি পেয়েছে জিম্বাবুয়ে। নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ২৪৬ রান তুলেছে তারা। টাইগারদের লক্ষ্য তাই ২৪৭ রান।
সংক্ষিপ্ত স্কোর :
জিম্বাবুয়ে : ২৪৬/৭ (৫০ ওভার) (মাসাকাদজা ১৪, জুওয়াও ২০, টেইলর ৭৬ , উইলিয়ামস ৪৭, রাজা ৪৯, মুর ১৭, চিগুম্বুরা ৩, মাভুটা ৯*, ট্রিপানো ৩*; মাশরাফি ১/৪৯, মোস্তাফিজ ১/৩৫, সাইফুদ্দিন ৩/৪৫, মিরাজ ১/৪৫, নাজমুল ০/৪৩, মাহমুদউল্লাহ ১/২১ )।
সাইফউদ্দিনের তৃতীয় শিকার চিগুম্বুরা
আগ্রাসী ব্যাটিং করার সুনাম আছে এল্টন চিগুম্বুরার। তবে এদিন ঠিক সুবধা করে উঠতে পারেননি। সাইফউদ্দিনের খাট লেংথের বলে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে সীমানায় ধরা পড়েছেন নাজমুল ইসলাম অপুর হাতে। ৯ বলে ৩ রান করেছেন এ ব্যাটসম্যান।
মুরের উইকেট নিলেন মোস্তাফিজ
দারুণ বোলিং করলেও উইকেট পাচ্ছিলেন না মোস্তাফিজুর রহমান। অবশেষে পিটার মুরকে শিকার করেছেন তিনি। তার অফকাটার লংঅন দিয়ে সীমানা পার করতে চেয়েছিলেন মুর। দৌড়ে এসে সীমানায় দারুণ এক ক্যাচ লুফে নিয়েছেন মেহেদী হাসান মিরাজ। ২০ বলে ২টি চারের সাহায্যে ১৭ রান করেছেন এ ব্যাটসম্যান।
বিপজ্জনক রাজাকে ফেরালেন মাশরাফি
উইকেটে নেমেই হাত খুলে খেলছিলেন সিকান্দার রাজা। এগিয়ে যাচ্ছিলেন হাফ সেঞ্চুরির দিকে। কিন্তু এক রানের আক্ষেপ নিয়েই মাঠ ছাড়তে হয় তাকে। বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজার বলে আউট হয়েছে উইকেটরক্ষক মুশফিকুর রহীমের হাতে ক্যাচ দিয়ে। ৬১ বলে ৩টি চার ও ২টি ছক্কায় ৪৯ রান করেছেন এ অলরাউন্ডার।
সাইফউদ্দিনের দ্বিতীয় শিকার উইলিয়ামস
ইনিংসের প্রথম আঘাতটা করেছিলেন সাইফউদ্দিন। এবার তুলে নিলেন নিজের দ্বিতীয় উইকেট। ফিরিয়েছেন শন উইলিয়ামসকে। সাইফউদ্দিনের বলে পয়েন্টের দিকে কাট করতে গিয়ে উইকেটরক্ষক মুশফিকুর রহীমের হাতে ধরা পড়েন এ ব্যাটসম্যান। ৭৬ বলে ২টি চারের সাহায্যে ৪৭ রান করেছেন উইলিয়ামস।
বোলিংয়ে এসেই জুটি ভাঙলেন মাহমুদউল্লাহ
ক্রমেই ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছিলেন ব্রান্ডেন টেইলর। ব্যাটিংয়ে নেমেই বেশ আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে খেলছিলেন এ উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান। জিম্বাবুয়ের ইনিংসও মেরামত করেন দারুণভাবে। কিন্তু একটি ভুলেই শেষ হলো তার লড়াই। মাহমুদউল্লাহর বলে রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে এলবিডাব্লিউর ফাঁদে পড়েন তিনি। তবে এর আগে খেলেছেন ৭৫ রানের কার্যকরী এক ইনিংস। ৭৩ বলে ৯টি চার ও ১টি ছক্কার সাহায্যে এ রান করেন তিনি।
টেইলরের হাফসেঞ্চুরি
দারুণ এক হাফ সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন জিম্বাবুয়ের উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান ব্রেন্ডন টেইলর। বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজার বলে স্কয়ার লেগে ঠেলে দিয়ে নিজের ফিফটি স্পর্শ করেন তিনি। ৫২ বলে হাফসেঞ্চুরি করা ব্যাটসম্যান নিজের ইনিংস সাজান ৫টি চার ও ১টি ছক্কায়। জুওয়াওর সঙ্গে ৫২ রানের জুটি গড়ার পর শন উইলিয়ামের সঙ্গে দারুণ এক জুটি গড়ে দলের হাল ধরেছেন টেইলর।
রিভিউ নিয়ে বাঁচলেন টেইলর
২০তম ওভারের পঞ্চম বলে ব্রান্ডেন টেইলরকে আউট দিয়েছিলেন আম্পায়ার। তবে রিভিউ নিয়ে বেঁচে গেছেন টেইলর। রিপ্লেতে দেখা যায় বল লেগ স্টাম্প মিস করছিল। এ সময়ে ৪২ রানে ব্যাট করছিলেন এ উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান।
জুওয়াওকে ফিরিয়ে জুটি ভাঙলেন মিরাজ
অধিনায়ক হ্যামিল্টন মাসাকাদজার বিদায়ের পর ব্রেন্ডন টেইলরকে নিয়ে দারুণ এক জুটি গড়েছিলেন সিফাস জুওয়াও। ৫২ রানের জুটি গড়ার পর জুওয়াওকে ফিরিয়েছেন অফস্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজ। ১২তম ওভারের পঞ্চম বলেই দারুণ একটি বাইন্ডারি মেরেছিলেন তিনি। পরের বলে ছক্কা হাঁকাতে যান। তবে টাইমিংয়ে গড়বর হওয়ায় লংঅফে ধরা পড়েন ফজলে মাহমুদের হাতে। ২৭ বলে ১টি করে চার ও ছক্কায় ২০ রান করেছেন এ ওপেনার।
মাসাকাদজাকে ফেরালেন সাইফউদ্দিন
ওপেনিংইয়ে বল করতে এসে খুব একটা সুবিধা করে উঠতে পারেননি অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। তাই দুই ওভার করেই বল তুলে দিলেন তরুণ সাইফউদ্দিনের হাতে। অধিনায়কের আস্থার পূর্ণ প্রতিদান দিয়েছেন এ অলরাউন্ডার। জিম্বাবুয়ে অধিনায়ক হ্যামিল্টন মাসাকাদজাকে ফিরিয়েছেন তিনি। স্লোয়ার বলে জায়গায় দাঁড়িয়ে খোঁচা দেওয়ার খেসারত দিয়েছেন জিম্বাবুয়ে অধিনায়ক। ১৮ বলে ১৪ রান করেছেন এ ব্যাটসম্যান।
বাংলাদেশ একাদশ: লিটন দাস, ইমরুল কায়েস, ফজলে রাব্বি, মুশফিকুর রহিম, মোহাম্মদ মিঠুন, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, মেহেদী হাসান মিরাজ, মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন, মাশরাফি মর্তুজা, নাজমুল ইসলাম অপু ও মোস্তাফিজুর রহমান।
জিম্বাবুয়ে একাদশ: হ্যামিল্টন মাসাকাদজা, সিফাস জুয়াও, এলটন চিকুম্বুরা, ব্র্যান্ডন টেইলর, শেন উইলিয়ামস, সিকান্দার রাজা, পিটার মুর, ডোনাল্ড ট্রিপানো, ব্যান্ডন মাভুটা, কাইল জার্ভিস ও টেন্ডাই চাতারা।
টস জিতে ফিল্ডিং নিয়েছে বাংলাদেশ
শিশিরের কারণে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠা টসে জিতে ফিল্ডিং নিয়েছে বাংলাদেশ। অক্টোবর মাসে চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে পরে ব্যাট করলে পাওয়া যায় বাড়তি সুবিধা। সন্ধ্যার পর এখানে স্পিনারদের বল গ্রিপ করতে হয় সমস্যা। আর সেটা মাথায় রেখে আগের দিন পরে ব্যাট করার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন অধিনায়ক মাশরাফি মর্তুজা।
সিরিজ জেতার ম্যাচে একাদশে কোন পরিবর্তন আনেনি বাংলাদেশ। তবে সিরিজে ফিরতে মরিয়া সফরকারীরা ক্রেইগ আরভিনের জায়গায় দলে নিয়েছে অভিজ্ঞ অলরাউন্ডার এলটন চিকুম্বুরাকে।
Comments