জিম্বাবুয়েকে উড়িয়ে সিরিজ জিতল বাংলাদেশ

ওপেনিংয়ে তামিম ইকবালের সঙ্গী হতে নিজেদের মধ্যে অন্যরকম লড়াই শুরু করেছিলেন লিটন দাস আর ইমরুল কায়েস। সেই লড়াই জমিয়ে তুললেন আরও। কে কাকে ছাপিয়ে যাবেন এই প্রতিযোগিতায় ছারখার হয়ে গেছে জিম্বাবুয়ে।
Liton Das & IMRUL KAYES
১৪৮ রানের জুটির পথে লিটন ও ইমরুল। ছবি: ফিরোজ আহমেদ

ওপেনিংয়ে তামিম ইকবালের সঙ্গী হতে নিজেদের মধ্যে অন্যরকম লড়াই শুরু করেছিলেন লিটন দাস আর ইমরুল কায়েস। সেই লড়াই জমিয়ে তুললেন আরও। কে কাকে ছাপিয়ে যাবেন এই প্রতিযোগিতায় ছারখার হয়ে গেছে জিম্বাবুয়ে।

বুধবার চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ জিতেছে কোনরকম চিন্তা ছাড়াই। ৭ উইকেট ও   ৩৫ বল হাতে রেখে। এই জয়ে তিন ম্যাচ সিরিজে এক ম্যাচ বাকি থাকতেই সিরিজ জেতা হয়ে গেছে বাংলাদেশে। একই ভেন্যুতে শুক্রবার শেষ ম্যাচে হোয়াইটওয়াশ এড়াতে লড়বে সফরকারীরা। 

শিশিরে সিক্ত মাঠে ২৪৭ রানের লক্ষ্যটা সহজই। বাংলাদেশের অতি বাজে কোন ব্যাটিং কিংবা জিম্বাবুয়ের কারো দুর্দান্ত স্পেলই উল্টাতে পারত পাশার দান। সেটা হয়নি। হতে দেননি দুই ওপেনার। ওপেনিংয়ে তামিম ইকবালের সঙ্গী নিয়ে এতদিন ছিল হাহাকার। সেই হাহাকার গুচিয়ে নিজেদের মধ্যেই অন্যরকম লড়াইয়ে মাতলেন ইমরুল কায়েস ও লিটন দাস। এমন মধুর লড়াইয়ে লাভ হয় দলের। হলোও।  তাদের ১৪৮ রানের জুটিতেই কাজ প্রায় সারা। কোন একটু মুহূর্তের জন্যও ম্যাচের বাইরে যায়নি বাংলাদেশ।

জুটিতে লিটন ছিলেন স্বভাব সুলভ আগ্রাসী। বরাবরের মতই খেলেছেন চমৎকার সব শট। একপাশে লিটনের তাণ্ডবের বিপরীতে অন্য পাশে দরকার ছিল স্থিরতা। নিজের পছন্দের এমন দায়িত্ব পেয়ে ভুল করেননি ইমরুল। তবে আক্ষেপে পুড়তে হয়েছে দুজনকেই। দুজনেই হাতের নাগালে থাকা সেঞ্চুরি হাতছাড়া করেন ভুল শটে।

শুরুতে নড়বড়ে থাকলেও সময়ের সঙ্গেই লিটন মেলেন নিজের ডানা। তিনি রান পেলে সেটা হয় দৃষ্টি সুখকর। এদিনও ছিল তেমন কিছু বাউন্ডারির পসরা। চোখ ধাঁধানো কাভার ড্রাইভে যেন মনে করিয়ে দিলেন মার্ক ওয়াহকে।

ক্যারিয়ারের প্রথম ১৭ ওয়ানডেতে একটিও ফিফটির দেখা না পাওয়া লিটন শেষ তিন ম্যাচে করে ফেললেন ১২১, ৪ আর ৮৩ । আজ যেমনটা খেলছিলেন সেঞ্চুরি পাওনাই ছিল। উইকেটে ছিল না জুজু, শিশিরের কারণে জিম্বাবুয়াইন বোলাররা বল গ্রিপ করতেই পারছিলেন। আগ্রাসী লিটনের সামনে দাঁড়াতেই হিমসিম খেতে হচ্ছিল তাদের। এমন অবস্থায় নিজের ইনিংসকে অনেক বড় করতে পারতেন তিনি। কিন্তু সেঞ্চুরির কাছে গিয়ে অস্থিরতাই ডোবালো তাকে। সিকান্দার রাজাকে ইনসাইড আউতে এক্সট্রা কাভার দিয়ে চার মারার পর কাট করে মারলেন আরেকটি। পরের বলেই উড়াতে চাইলেন কাভারের উপর দিয়ে। টাইমিং না হওয়ায় ধরা পড়েন ট্রিপানোর হাতে। অন্য দিকে আগের ম্যাচের দুর্দান্ত সেঞ্চুরি করে বার্তা দিয়ে রেখেছিলেন ইমরুল। এদিন শুরু থেকেই সতর্ক হয়ে খেলেছেন।

লিটনের পর ক্যারিয়ারের টানা দ্বিতীয় ম্যাচে ০ রানে আউট হয়ে ফেরা ফজলে রাব্বির বিদাতেও টলেননি তিনি। মুশফিকের সঙ্গে গড়েন ৫৯ রানের আরেক জুটি। তবে ৯০ রানে গিয়ে ছুঁড়ে দিয়েছেন উইকেট। রাজাকে অকারণে উড়াতে যেয়ে ক্যাচ দেন লং অফে।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১০ হাজার রান করার ম্যাচে মোহাম্মদ মিঠুনকে নিয়ে বাকিটা নিরাপদে তুলে নেন মুশফিকুর রহিম।

ব্যাটিংয়ে ওপেনিংয়ে সমাধান পাওয়ার ম্যাচে বোলিংয়ে সমাধান দিয়েছেন মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন। প্রথম ম্যাচে ব্যাট হাতে অবদান রাখা এই অলরাউন্ডার এদিন বল হাতে দেখিয়েছেন ঝলক। অধিনায়কের মন জেতা সাইফুদ্দিন জাতীয় দলের বাইরে ছিটকে পড়ার পর নিজেকে বদলেছেন অনেকখানি। এমনকি উইকেট উদযাপনেও এনেছেন বদল। সাইফুদ্দিনের তোপেই আসলে বড় রান নিতে পারেনি জিম্বাবুয়ে।  মাসাকাদজাকে আউট করে প্রথম ব্রেক থ্রো আনার পর দ্বিতীয় স্পেলে নেন উইলিয়ামসের গুরুত্বপূর্ণ উইকেট। আউট করেছে চিকুম্বুরাকেও। এর আগে চার ওয়ানডে খেলে পেয়েছিলেন কেবল ১ উইকেট। আজ কোটা পূরণ করে ৪৫ রানে নেন ৩টি।

টস হেরে আগে ব্যাট করা সফরকারীরা ডুবেছে কারো ইনিংস টানতে না পারায়। ছন্দে ফেরা অভিজ্ঞ ব্র্যান্ডন টেইলর দারুণ আগ্রাসী ব্যাট করে এক পর্যায়ে নাড়িয়ে দিয়েছিলেন বাংলাদেশকে। অতি আক্রমনাত্মক হতে গিয়েই হয়েছে বিপদ। তার ৭২ বলে ৭৫ রানের ঝকঝকে ইনিংস থেমেছে মাহমুদউল্লাহর বলে। এদিনও ব্যাটে ধার ছিল শেন উইলিয়ামসের। আগের ম্যাচের সাফল্যে প্রমোশন পেয়ে নেমেছিলেন চার নম্বরে। টেইলরের সঙ্গে জুটি বেধে এগুচ্ছিলেন ফিফটির দিকে। টেইলর ফিরতে তিনিও থামান দৌড়।

ইনিংস বড় করতে না পারার আক্ষেপে পুড়েছেন সিকান্দার রাজাও। মাশরাফির শিকার হয়ে তিনি ফেরেন ৪৯ রানে। তিন ব্যাটসম্যানের মাঝারি ইনিংসে জুতসই সংগ্রহ পায়নি জিম্বাবুয়ে। শিশির ভেজা মাঠে ২৪৬ আটকানো বেশ কঠিন। ইনিংস বিরতিতেই তাই অনেকটা পরিষ্কার হয়ে যায় ম্যাচের ছবি।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

জিম্বাবুয়ে:  ২৪৬/৭ (৫০) (মাসাকাদজা ১৪, জুয়াও ২০ , টেইলর ৭৬ , উইলিয়ামস ৪৭  , রাজা ৪৯, মুর ১৭, চিকুম্বুরা ৩, মাভুটা ৯* , ট্রিপানো ৩*  ; মাশরাফি ১/৪৯,  মোস্তাফিজ ১/৩৫,  সাইফুদ্দিন ৩/৪৫ , মিরাজ ১/৪৫, নাজমুল ০/৪৩, মাহমুদউল্লাহ ১/২১ ) 

বাংলাদেশ: ২৫০/৩ (৪৪.১)  (লিটন ৮৩,  ইমরুল ৯০, ফজলে রাব্বি ০, মুশফিক ৪০*, মিঠুন ২৪*   ; জার্ভিস ০/৩১, চাতারা ০/৪৮, ট্রিপানো ০/২২, মাভুটা ০/৫৬,  উইলিয়ামস ০/৪৩, রাজা ৩/৪৩, জুয়াও ০/৬)

ফল: বাংলাদেশ  ৭  উইকেটে জয়ী।

 

Comments

The Daily Star  | English

Abu sayed’s death in police firing: Cops’ FIR runs counter to known facts

Video footage shows police shooting at Begum Rokeya University student Abu Sayed, who posed no physical threat to the law enforcers, during the quota reform protest near the campus on July 16. He died soon afterwards.

5h ago