সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ সফর পুরস্কার নয়

সরকারি প্রকল্পের অধীনে কর্মকর্তাদের অপ্রয়োজনীয় বিদেশ সফর নিয়ে যথেষ্ট উদ্বেগ থাকলেও, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ নিয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া না দেখানোয় আমরা শঙ্কিত। গত কয়েক মাসে অনেকবার বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরে আনা হয়েছে।

সরকারি প্রকল্পের অধীনে কর্মকর্তাদের অপ্রয়োজনীয় বিদেশ সফর নিয়ে যথেষ্ট উদ্বেগ থাকলেও, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ নিয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া না দেখানোয় আমরা শঙ্কিত। গত কয়েক মাসে অনেকবার বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরে আনা হয়েছে।

বিদেশ সফরের বিষয়ে যে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে, তা অনেকটাই অকার্যকর। খরচ বাড়ার কারণে হয়তো কখনো প্রকল্প কর্মকর্তাদের তিরস্কার করা হয়। কিন্তু, বিদেশ সফরে যাওয়ার প্রহসনমূলক চর্চা বন্ধ হয়নি।

দ্য ডেইলি স্টারে সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়ায় বিভিন্ন মহলে সুসম্পর্ক বজায় রাখেন এমন কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রে 'প্রশিক্ষণের' জন্য সরকারি খরচে বিদেশ সফর এক ধরনের 'উপহারে' পরিণত হয়েছে।

প্রতিবেদনে মহা হিসাব-নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক (সিএজি) কার্যালয়ের নিরীক্ষা করা ১৩টি প্রকল্পের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ২০১৭-১৮ থেকে ২০১৯-২০ অর্থবছরে এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ৭টি প্রকল্পের আওতায় ২২৮ জন কর্মকর্তা বিদেশ সফরে গিয়েছেন। তাদের মধ্যে ৪৫ জনের বয়স ৫৫ বছরের বেশি ছিল, ২৩ জনের অবসরে যাওয়ার মাত্র ১ বছর বাকি ছিল। আরও উদ্বেগের বিষয় এই যে, ৭৩ জনের প্রকল্পের সঙ্গে কোনো সম্পর্কই ছিল না।

মৎস্য অধিদপ্তরের প্রকল্পগুলোর ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছে। এক্ষেত্রে প্রশিক্ষণের জন্য বিদেশে পাঠানো কর্মকর্তাদের ৩০ শতাংশ ওইসব প্রকল্প  বাস্তবায়নকারী সংস্থার কর্মকর্তা ছিলেন না। দুটি প্রকল্পের ১৬ শতাংশ কর্মকর্তার বয়স ৫৫ বছরের বেশি।

সামগ্রিকভাবে এসব প্রকল্পে ব্যবহারিক ও প্রযুক্তিগত জ্ঞান অর্জনের জন্য বিদেশ সফরে যাওয়া কর্মকর্তাদের ১৬-২০ শতাংশের বয়স ৫৫ বছরের বেশি ছিল। এখন প্রশ্ন হচ্ছে জনগণের অর্থেই যখন বিদেশ সফর হচ্ছে, তখন শিগগির অবসরে যাবেন বা অবসরে চলে গেছেন এমন কর্মকর্তারা 'প্রশিক্ষণ' নিয়ে তা কীভাবে দেশের বা জনগণের কাজে লাগাবেন?

শুধু তাই নয়, যারা বাস্তবায়নকারী সংস্থার কর্মকর্তা নন (৩০-৩২ শতাংশ) কিংবা যারা মাঠপর্যায়ের থেকে অনেক উচ্চ পদে কর্মরত আছেন, তারাও এ ধরনের প্রশিক্ষণের জন্য মনোনীত হচ্ছেন।

বিদেশ সফরের জন্য কর্মকর্তাদের নির্বাচন করা ও অনুমোদন প্রক্রিয়া, উভয় ক্ষেত্রেই ব্যাপক অনিয়ম হচ্ছে বলে আমরা মনে করছি। যেমন: কর্মকর্তারা দেশে ফিরে কোনো প্রশিক্ষণ প্রতিবেদন জমা দেন না এবং অর্জিত জ্ঞান কাজে লাগানোর কোনো প্রমাণ দেন না।

এখানে স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে যে প্রকল্প প্রস্তাবনায় (ডিপিপি) দক্ষতা বৃদ্ধির নামে ব্যক্তিগতভাবে কাউকে সুবিধা দেওয়ার যৌথ ব্যবস্থা চালু হয়েছে। দুর্ভাগ্যবশত, আমাদের প্রকল্প বাস্তবায়ন চর্চা এভাবেই চলছে। এভাবে প্রকল্পের অর্থের বড় অংশ অপ্রয়োজনীয় খাতে ব্যয় বা অপচয় হচ্ছে।

আর আমাদের প্রকল্পগুলোর ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে এভাবেই। বেশিরভাগ উন্নয়ন প্রকল্পের ক্ষেত্রেই এমন দেখা যাচ্ছে। আমরা সরকারকে এ ধরনের ভ্রষ্টাচারের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিতে এবং জনগণের অর্থ অপচয়ের সঙ্গে জড়িত সবাইকে জবাবদিহির আওতায় আনতে অনুরোধ জানাচ্ছি।

Comments

The Daily Star  | English

DMCH doctors threaten strike after assault on colleague

A doctor at Dhaka Medical College Hospital (DMCH) was allegedly assaulted yesterday after the death of a private university student there, with some of his peers accusing the physicians of neglecting their duty in his treatment

4h ago