ঢাকার গরম: দরিদ্রদেরই কষ্ট বেশি

তীব্র গরম
রাজধানীর এক ব্যস্ত সড়কে যানজট। প্রচণ্ড রোদ থেকে বাঁচতে তাই মাথার ওপর এই পলিথিনের চাঁদোয়া। ছবি: পলাশ খান/ স্টার ফাইল ফটো

গত আগস্টে দেশে তীব্র দাবদাহ হয়। ওই সময়ের গড় তাপমাত্রা গত ৩ দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ ছিল। সম্প্রতি, আড্রিয়েন আরস্ট-রকফেলার ফাউন্ডেশন রেজিলিয়েন্স সেন্টারের গবেষণায় দেখা গেছে, অত্যধিক তাপমাত্রা বা গরমের কারণে ঢাকা প্রতি বছর ৬ বিলিয়ন ডলার মূল্যের জিডিপি হারাচ্ছে। এটি ঢাকার বার্ষিক জিডিপির প্রায় ৮ শতাংশ।

এতে আরও বলা হয়, বৈশ্বিক উষ্ণতা কমাতে ব্যবস্থা নেওয়া না হলে ২০৫০ সালের মধ্যে এই ক্ষতির পরিমাণ ১০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে।

বিশ্বের ১২টি শহরের সঙ্গে তুলনা করে গবেষণায় দেখা গেছে, ঢাকার অবস্থা সবচেয়ে খারাপ। অন্যান্য শহরগুলোর মধ্যে শ্রমনির্ভর অর্থনীতি এবং বাতাস ঠাণ্ডা হওয়ার সুযোগ কম থাকায় ঢাকা তুলনামূলক বেশি ঝুঁকিপূর্ণ।

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে উচ্চ তাপমাত্রা ও আর্দ্রতার কারণে ঢাকার অবস্থা যথেষ্ট খারাপ হলেও পরিস্থিতি সামলাতে নগর কর্তৃপক্ষ তেমন কিছুই করেনি।

বিশেষজ্ঞদের মতে, শহরাঞ্চলে তাপমাত্রার প্রভাব কমাতে গাছপালা, বনরাজি ও জলাশয়ের ভূমিকা অনেক।

সম্প্রতি আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, গত ৩ দশকে ঢাকার প্রায় ৫৬ শতাংশ সবুজ নষ্ট হয়েছে। ঢাকার জলাভূমির অবস্থাও একই রকম। গত এক দশকে ঢাকার জলাভূমির প্রায় ২২ শতাংশ হারিয়ে গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

দ্রুত নগরায়নের কারণে প্রাকৃতিক জলাশয়গুলো দখল হয়ে যাচ্ছে, বিষয়টি শুধু এমন নয়। গত মাসেই আমরা দেখেছি যে অপরিশোধিত বর্জ্য ফেলে ঢাকার নদীগুলোকে মেরে ফেলা হচ্ছে। নদী রক্ষার দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের চোখের সামনে এমনটি হচ্ছে।

বিস্ময়ের কিছু নেই বরং এটাই সত্য যে সবচেয়ে দরিদ্ররাই চরম তাপমাত্রার সবচেয়ে বড় শিকার। নতুন এক সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, বস্তি বা নিম্ন-আয়ের মানুষদের থাকার ঘরগুলো সাধারণত টিনের হয়। এসব জায়গার তাপমাত্রা ঢাকার অন্যান্য জায়গার তুলনায় ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি থাকে।

টিনের ঘরগুলো দিনে তাপ ধরে রাখে এবং রাতে ঠাণ্ডা হতে যথেষ্ট সময় নেয়। গাছপালা না থাকায় এবং আশেপাশের উঁচু ভবনের কারণে বায়ুপ্রবাহ বাধা পাওয়ায় এই জনগোষ্ঠীর কষ্ট আরও বেড়ে যায়।

আবার শ্রমনির্ভর অর্থনীতির ক্ষতি হলে তা দরিদ্রদের ওপর বেশি আঘাত করে।

আরেক সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারিং, পরিবহন ও খুচরা ব্যবসার মতো খাতে যেখানে গড় মজুরি তুলনামূলক কম, সেখানে তাপমাত্রা বাড়ার কারণে ইতোমধ্যে শ্রমিকদের আয়ের প্রায় ১০ শতাংশ ক্ষতি হচ্ছে।

বিশেষ করে পোশাক কারখানা বা ইটভাটার মতো শিল্পে শ্রমিকরা যন্ত্রপাতি বা চুল্লির কাছাকাছি থাকে এবং এসব খাতেই ক্ষতির পরিমাণটা বেশি।

অন্যদিকে কাঁচঘেরা ভবনে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষ ব্যবহারকারীরা এ শহরকে আরও উত্তপ্ত করে চলেছে।

পরিস্থিতি স্পষ্টতই খুবই খারাপ এবং যদি জরুরি ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তবে শুধু দরিদ্ররাই এই গরমের তীব্র প্রভাব অনুভব করবে তা নয়, আমাদের শহরের পুরো অর্থনীতিই চাপে থাকবে।

ঢাকার অপরিকল্পিত নগরায়নকে সব উপায়ে রোধ করতে হবে এবং তাপমাত্রা কমাতে জোরালো ব্যবস্থা নেওয়ার মাধ্যমে একটি বাসযোগ্য শহর তৈরিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষার স্বাক্ষর রাখতে হবে।

Comments

The Daily Star  | English

Exporters fear losses as India slaps new restrictions

Bangladesh’s exporters fear losses as India has barred the import of several products—including some jute items—through land ports, threatening crucial trade flows and millions of dollars in earnings.

3h ago