খননে প্রাণ ফিরছে লৌহজং নদীর, দু-পাড়ে তৈরি হচ্ছে পায়ে হাঁটা পথ

গত মার্চ থেকে মৃতপ্রায় লৌহজং নদী পুনরুদ্ধারের অভিযান শুরু করে টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসন। ছবি: মির্জা শাকিল/স্টার

ধীরে ধীরে আগের অবয়ব ফিরে পাচ্ছে টাঙ্গাইল শহরের 'লাইফ লাইন'-খ্যাত ঐতিহ্যবাহী লৌহজং নদী। কেননা পৌর এলাকার হাউজিং ব্রিজ থেকে স্টেডিয়াম এলাকা পর্যন্ত নদীর দখল হয়ে যাওয়া জায়গা থেকে অবৈধ স্থাপনা স্বেচ্ছায় সরিয়ে নিয়েছেন স্থানীয়রা।

এর আগে, গত ১ মার্চ থেকে মৃতপ্রায় নদীটি পুনরুদ্ধারের অভিযান শুরু করে টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসন। অভিযানের শুরুতে পৌর এলাকায় নদীর প্রায় দেড় কিলোমিটার অংশে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কাজে অংশ নেয় স্বেচ্ছাসেবীরা।

এর পরপরই নদীর এই অংশের দু-পাড়ে রাস্তা তৈরির কাজে হাত দেয় প্রশাসন, যা টাঙ্গাইল সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হাসান বিন আলীর তত্ত্বাবধানে এখনো চলছে। নুর মোহাম্মদ খান রাজ্য ও রতন সিদ্দিকীসহ স্থানীয় পরিবেশ কর্মীরা এ কাজে সহায়তা করছেন।

ইউএনও জানান, পানি আইন-২০১৩ অনুসরণ করে নদী উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে এবং স্থানীয়রাও কাজটিতে সহায়তা করছেন। 

তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'দখল-দূষণে ভাগাড়ে পরিণত হয়েছিল নদীটি। গত একমাস টানা কাজের পর নদীটি ধীরে ধীরে তার পূর্বের অবয়ব ফিরে পাচ্ছে।'

নদীর পাড়ে রাস্তা নির্মাণের কাজ শেষ হলে আসন্ন বর্ষায় পাড়ের মাটি যাতে ধসে না যায়, সেজন্য আরও কিছু কাজ করতে হবে বলে জানান তিনি।

এটি নদী উদ্ধারে জেলা প্রশাসনের তৃতীয় দফা উদ্যোগ। ২০১৬ সালে প্রথম এবং পরে ২০২০ সালের অভিযানে দুই দফা মাপজোক করে নদীর দু-পাড়ের স্থাপনা অপসারণ করা হয়েছিল। মানবিক বিবেচনায় কোনো কোনো ক্ষেত্রে তৎকালীন প্রশাসন কিছুটা ছাড়ও দিয়েছিল বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

নদীপাড়ের বাসিন্দা আলীম আকন্দ ডেইলি স্টারকে বলেন, '২০১৩ সালে প্রণীত আইন অনুযায়ী অভিযান পরিচালনা করা হলেও যাদের দখলদার বলা হচ্ছে তারা অনেক আগে থেকে বৈধ কাগজপত্র সূত্রে এসব জমির মালিক। স্থানীয় ভূমি অফিস খাজনা নিয়েছে, পৌরসভা তাদের ভবন নির্মাণের নকশাও অনুমোদন দিয়েছে। তাই মামলা-মোকদ্দমার জটিলতা এড়াতে বর্তমান প্রশাসনের উচিত আগের জেলা প্রশাসকরা যতটুকু উচ্ছেদ করেছেন সে পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকা।'

'এই এলাকায় নদী এখন পর্যন্ত যতটুকু উন্মুক্ত হয়েছে বর্ষাকালে পানি আসলে আরও ভালো লাগবে। এখন মূল কাজ যথাযথ গবেষণা ও পরিকল্পনার পর উৎসমুখসহ খননের মাধ্যমে প্রাকৃতিক প্রবাহ ফিরিয়ে এনে নদীটিকে পুনর্জীবিত করা', বলেন তিনি।

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) বিভাগীয় সমন্বয়ক গৌতম চন্দ্র চন্দ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা নদীর দু-পাড়ে প্রশাসনের রাস্তা নির্মাণের উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। তবে সেটি হতে হবে পায়ে হাঁটা পথ। প্রাকৃতিক পরিবেশ ও প্রাণবৈচিত্র্য রক্ষায় নদী পাড়ে যান চলাচল করা ঠিক হবে না। এ বিষয়ে উচ্চ আদালতের সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে।'

টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আইরিন আক্তার ডেইলি স্টারকে বলেন, 'যথাযথ আইন অনুরণ করেই সবকিছু করা হচ্ছে এবং হবে। জেলা প্রশাসকের প্রচেষ্টায় নদী উদ্ধারের কাজ সুন্দরভাবে এগিয়ে চলেছে।'

নদীপাড়ের বাসিন্দা বাবুল খান ডেইলি স্টারকে বলেন, '৭৬ কিলোমিটার নদীর মাত্র এক-দেড় কিলোমিটার অংশে চলছে এসব কর্মযজ্ঞ। আমি আমার বাড়ি ভেঙে দিয়েছি। আমরা আসলে পুরো নদীটাকেই উদ্ধার দেখতে চাই।'

এ বিষয়ে টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক মো. কায়ছারুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে জানান, নদী উদ্ধার কাজে তিনি এবং তার প্রশাসন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ সব মহলের পূর্ণ সমর্থন পাচ্ছেন।

'পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযানের সময় আমরা কথা দিয়েছিলাম যে, আমরা নদীর দু-পাশে রাস্তা করব। নদীর স্বাভাবিক যে গতিপথ সেটি ফিরিয়ে আনার জন্য যা কিছু করণীয় আমরা তা করব', বলেন তিনি।

জেলা প্রশাসক আরও বলেন, 'নদীর দু-পাড়ে রাস্তা তৈরির কাজ এখনো চলমান আছে। আশা করছি আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই এই কাজ শেষ হবে। বর্ষাকালে যখন পানি আসবে তখন নদীতে যে ময়লা-আবর্জনা আছে সেগুলো এমনিতেই চলে যাবে। এ ছাড়া, স্বাভাবিক পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম নিয়মিতই চলবে।'

Comments

The Daily Star  | English
chief adviser yunus confirms election date

Election in February

Chief Adviser Prof Muhammad Yunus last night announced that the general election will be held before Ramadan in February 2026, kickstarting the process of handing over the power to an elected government.

8h ago