ঢাকার জলাশয় ভরাট বন্ধ করুন
দ্রুত নগরায়ণের কারণে খাল, ঝিল আর জলাশয়ে ভরা একসময়ের সবুজ নগরী ঢাকা তার বেশিরভাগ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যই হারিয়েছে। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) ডিটেইল এরিয়া প্ল্যান ২০২২ অনুযায়ী, রাজউকের ১৫২৮ বর্গকিলোমিটার এলাকায় ৩৪৬৪টি পুকুর আছে। এর মধ্যে ২০৫টি ঢাকার মধ্যাঞ্চলে। ২০১০ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে ব্যক্তি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, রিয়েল এস্টেট ডেভেলপার এবং অন্যান্য সংস্থার কারণে ঢাকা ৯৫৫৬ একর বন্যা প্রবাহ অঞ্চল, জলধারণ এলাকা এবং জলাশয়ের মধ্যে ৩৪৪০ একরই হারিয়েছে।
এই বিশাল ক্ষতি দেশের পানি সম্পদের উপর চাপ সৃষ্টি করেছে এবং ভবিষ্যতে আমাদের পানি নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ তৈরি করেছে। প্রকৃতপক্ষে পানি নিরাপত্তায় শ্রীলঙ্কা, নেপাল, ভুটান ও আফগানিস্তানের চেয়ে পিছিয়ে বাংলাদেশ। এর পাশাপাশি, ঢাকার জলাশয়গুলো ভরাট হওয়ার কারণে, শহরটি কোনো ভারী বন্যা সামাল দিতে পারে না। ঢাকার প্রায় ৯০ শতাংশ এলাকা কংক্রিটে মোড়ানো থাকায় বৃষ্টির জল নিষ্কাশনের উপায় থাকে না এবং ভারী বৃষ্টিপাতের সময় তীব্র জলাবদ্ধতা তৈরি হয়।
নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, জনসংখ্যা বিবেচনায় ঢাকার ১২-১৫ শতাংশ এলাকায় জলাশয় থাকা উচিত, কিন্তু বর্তমানে এর আওতা মাত্র ৫ শতাংশ। ২০১৬ সাল পর্যন্ত গত ৩০ বছরে ঢাকার ৬০ শতাংশের বেশি জলাভূমি হারিয়ে গেছে। ২০০৩ থেকে ২০১১ সালের মধ্যে একটি জরিপে অবিভক্ত ঢাকা শহরের মানচিত্রে ৬৫টি পুকুর চিহ্নিত করা হয়েছিল। যাদের অনেকগুলোকেই ভরাট করা হয়েছে, নগরায়নের কারণে চিরতরে হারিয়ে গেছে।
আমাদের জলাশয়গুলো ভরাট হবে না এমন কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। গত বছর বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) আশকোনার হজ ক্যাম্পের কাছে একটি জলাশয় একটি আবাসন প্রকল্পের জন্য ভরাট করে। একটি সরকারি সংস্থা কীভাবে আমাদের জলাভূমি সুরক্ষা আইনের প্রতি এত অবহেলা দেখাতে পারে, যেখানে বলা হয়েছে যে একটিও পুকুর বা জলাশয় ভরাট করার কোনো সুযোগ নেই। কর্তৃপক্ষকে নিশ্চিত করতে হবে যে আইনটি কেবল কাগজে-কলমে নয়। লঙ্ঘনকারীদের বিচারের আওতায় আনার বাস্তব পদক্ষেপ নিতে হবে।
কতটা ঝুঁকি রয়েছে তা বোঝার জন্য, আমাদের অবশ্যই বুঝতে হবে জলাশয়গুলো কতটা গুরুত্বপূর্ণ। এসব জলায়শের পরিবেশগত এবং আর্থ-সামাজিক মূল্য রয়েছে। জীববৈচিত্র্যের বিকাশে সহায়তা, বৃষ্টির পানির জলাধার এবং পানি নিষ্কাশনে অবদান রাখে জলাশয়গুলো। ঢাকার মতো ঘনবসতিপূর্ণ শহর অঞ্চলে যেখানে আগুন লাগার ঘটনা খুব ঘন ঘন ঘটে, সেখানে অগ্নিনির্বাপণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এসব জলাশয়।
বঙ্গবাজারের ঘটনা আমাদের মনে করিয়ে দিয়েছে যে আমাদের জলাশয়গুলোর কী অবস্থা। যেগুলো অবশিষ্ট আছে সেগুলোর অবস্থা সঙ্গীন। এগুলো রক্ষায় অবিলম্বে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। এসব জলাশয় সুরক্ষার জন্য সরকারকে অবশ্যই মনিটরিং বাড়াতে হবে এবং প্রাসঙ্গিক আইন প্রয়োগ করতে হবে। আমরা সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, সময় শেষ হওয়ার আগেই এ বিষয়টি আন্তরিকতার সঙ্গে বিবেচনা করুন এবং আমাদের অবশিষ্ট জলাশয়গুলোকে বাঁচাতে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।
Comments