যে বার্তা দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা

যে বার্তা দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা
ছবি: স্টার গ্রাফিক্স

বাংলাদেশিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেটা বিস্মিত হওয়ার মতো কিছু নয়। তার কারণ, বেশ কয়েক মাস আগেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এ ধরনের মনোভাব দেখিয়েছে। তবে মনে হচ্ছে, এবারের নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করা হবে। যদিও কাদের ওপর এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট এখনো সে তালিকা প্রকাশ করেনি। দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র জানিয়েছেন, এ তালিকায় বাংলাদেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল, বিরোধী দল, সাবেক ও বর্তমান সরকারি কর্মকর্তা, জুডিশিয়ারি ও সিকিউরিটি সার্ভিসের সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত।

আমারা মনে করি, এ ধরনের একটি কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ কোনো স্বাধীন, সার্বভৌম জাতির জন্য বিব্রতকর। বিশ্বের আরও অনেক দেশের ক্ষেত্রে এ ধরনের ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। তবে সেগুলো সাধারণত জাতীয় নির্বাচনের পরে দেওয়া হয়েছে, আগে নয়। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে তারা নির্বাচনের কয়েক মাস আগেই এ ধরনের ঘোষণা দিয়েছে। এ ধরনের নীতিতে বিরক্ত হলেও আমাদের অবশ্যই বোঝার চেষ্টা করতে হবে যুক্তরাষ্ট্র কী কারণে এ ধরনের বিধিনিষেধ বা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে প্ররোচিত হলো।

২০২১ সালের সালের ডিসেম্বর মাসে প্রথমবারের মতো এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা আসে। সেখানে র‌্যাবের সাতজন সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যা এবং নির্যাতনের অভিযোগে আনে। একই বছরের মে মাসে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করে এমন কর্মকাণ্ডের জন্য ভিসা নীতি প্রয়োগের ঘোষণা দেয় ওয়াশিংটন। ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ওই ঘোষণা আসে। তাহলে এ ক্ষেত্রে বাস্তবতাটা কী? মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের উল্লেখ করা কোনো সমস্যার কি সমাধান হয়েছে?

২০২১ সালের নিষেধাজ্ঞা ঘোষণার পর বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড এবং গুমের সংখ্যা নাটকীয়ভাবে হ্রাস পেলেও সেগুলো পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়নি। তাছাড়া সরকার এ সব অপরাধের তদন্ত না করে অস্বীকারের নীতি গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়; বিএনপি যেদিন জনসভা করবে বলে জানায়, ঠিক একই দিনে ক্ষমতাসীন দল পাল্টা জনসভার মাধ্যমে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ভয়ভীতি প্রদর্শন অব্যাহত রাখে; নির্বাচনের ঠিক আগে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে অসংখ্য অযৌক্তিক মামলা দায়ের করা হয়েছে, শত শত বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানোর পাশাপাশি পুলিশের অতিরিক্ত বল প্রয়োগ এবং শান্তিপূর্ণ সমাবেশে হামলা চালানো হয়।

এ ছাড়া সাংবাদিক ও মানবাধিকারকর্মীসহ যেকোনো ধরনের ভিন্নমত প্রকাশকারী বেসামরিক জনগণের ওপর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের (ডিএসএ) শ্বাসরুদ্ধকর প্রভাব তো আছেই। বাক স্বাধীনতা সীমিতকারী  আগের ধারাগুলো অব্যাহত রেখেই ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টকে (ডিএসএ) সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্টে (সিএসএ) প্রতিস্থাপন করা হয়েছে।

তাই অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে অনেক কথা বলা হলেও বাস্তবে এ বিষয়ে তার কোনো প্রতিফল নেই। মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞার কথা বাদ দিলাম, যেটাকে আমরা অপমানজনক বলে মনে করছি। আসন্ন নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হওয়ার সম্ভাবনা সম্পর্কে আমাদের সাধারণ জনগণের ধারণা কী? বেশিরভাগ মানুষের ধারণা অবাধ নির্বাচনের কোনো সম্ভাবনায় নেই। সুতরাং, আমাদের আরও বিশ্বাসযোগ্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। তাহলে সেটা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে জনগণের আস্থা বাড়াবে। আর এটা করতে হবে ভিসা নিষেধাজ্ঞার কারণে নয় বরং নিজেদের স্বার্থে। 

 

Comments

The Daily Star  | English

Threat of fresh Rohingya influx looms as clashes erupt in Myanmar

Gunfire and explosions were heard late Friday night from villages across the border in Myanmar opposite Whykong union in Teknaf upazila of Cox’s Bazar. Residents, gripped by panic, reported that this was the most intense gunfire they had heard in months.

2h ago