অর্থনীতির উন্নয়নে বেসরকারি খাতে আরও বিনিয়োগ প্রয়োজন

বেসরকারি বিনিয়োগ
অলঙ্করণ: আনোয়ার সোহেল/স্টার ডিজিটাল গ্রাফিক্স

রেমিট্যান্সের নতুন রেকর্ড ও ক্রমবর্ধমান রপ্তানির আশির্বাদে আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ স্থিতিশীল রয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও বেসরকারি খাতে বিনিয়োগের পরিমাণ বাড়ছে না, যা খুবই উদ্বেগজনক। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে পাওয়া সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, বেসরকারি খাতে বিনিয়োগের পরিমাণ আগস্ট মাস পর্যন্ত এর আগের বছরের আগস্টের তুলনায় নয় দশমিক ৮৬ শতাংশ বাড়লেও নভেম্বরে এসে তা কমে সাত দশমিক ৬৬ শতাংশ হয়েছে (আগের বছরের নভেম্বরের তুলনায়)। পাশাপাশি, চলতি অর্থ বছরের জুলাই-নভেম্বর সময়কালে মূলধনী যন্ত্রপাতির আমদানির জন্য খোলা এলসি নিষ্পত্তির হার আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২১ দশমিক নয় শতাংশ কমেছে। এ ধরনের আমদানির জন্য এলসি খোলার সংখ্যা ২৬ দশমিক ৪৫ শতাংশ কমেছে। 

আরও কিছু কারণ থাকলেও, অর্থনীতিবিদরা বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ কমে যাওয়ার পেছনে মূল কারণ হিসেবে রাজনৈতিক অস্থিরতাকেই চিহ্নিত করেছেন। একইসঙ্গে তারা হুশিয়ারি দিয়েছেন, সরকার কার্যকর উদ্যোগ না নিলে এই পরিস্থিতি আরও এক বছর ধরে চলতে পারে। অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করার জন্য বেশ কয়েকটি উদ্যোগ নিয়েছে। আগস্টে অন্তর্বর্তী প্রশাসন ক্ষমতা গ্রহণের পর প্রথম বারের মতো দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২১ বিলিয়ন ডলার পার করে ৩১ ডিসেম্বর ২১ দশমিক ৩৬ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছে যায়। মূলত রেমিট্যান্সের প্রবাহ বৃদ্ধির কারণেই এই অর্জন। এতে প্রবাসী কর্মী ও সরকারের উদ্যোগ, উভয়ই অবদান রেখেছে। পাশাপাশি, ২০২৪ সালে বাংলাদেশের রপ্তানির পরিমাণ ৫০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছায়, যা এর আগের বছরের তুলনায় আট দশমিক তিন শতাংশ বেশি। শুধু ডিসেম্বরেই রপ্তানিকারকরা চার দশমিক ৬২ বিলিয়ন ডলার অর্জন করেছেন, যা গত বছরের ডিসেম্বরের তুলনায় ১৮ শতাংশ বেশি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রানীতি ও স্থিতিশীল বিনিময় মূল্যের কারণেই এসব সাফল্য অর্জিত হয়েছে।

তবে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগের পরিমাণ বাড়ানো না গেলে এসব উন্নয়ন টেকসই হবে না। দেশে বেসরকারি বিনিয়োগের হার বেশ কয়েক বছর ধরে নিম্নগামী। চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতায় পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনার ক্রমবর্ধমান খরচ, উচ্চ সুদের হার, তারল্য সংকট ও চাপের মুখে থাকা ব্যাংকিং ব্যবস্থা উন্নয়নের পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। পাশাপাশি, আগের সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল এমন অনেক ব্যবসায়ী এখন কার্যক্রম বন্ধ করেছেন অথবা সমস্যায় পড়েছেন, যা বিনিয়োগকে আরও নিরুৎসাহিত করছে। নিরবচ্ছিন্ন উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও সুদের হার ব্যবসার খরচ বাড়িয়েছে। যার ফলে ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জন্য ঋণ পাওয়া ও তাদের ব্যবসার সম্প্রসারণ ঘটানো আরও কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এসব সমস্যার মোকাবিলায় সরকারকে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার বিষয়টিকে প্রাধান্য দিতে হবে। পাশাপাশি, মূল্যস্ফীতি কমানো ও ব্যবসা করার পথে বাধাগুলোকে দূর করার বিষয়েও জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে। অসংখ্য স্থানীয় ও বিদেশি বিনিয়োগকারীর মতে, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও বাংলাদেশ ব্যাংকের কিছু নীতিমালা বিনিয়োগ পরিপন্থী। সরকারের উচিত বিনিয়োগকারী ও অন্যান্য অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করে এসব নীতিমালাকে আরও ব্যবসাবান্ধব করে তোলা। এ ছাড়া, চলমান সংস্কার কার্যক্রমের অংশ হিসেবে নীতিমালা সংস্কার ও প্রণয়নের সময় বেসরকারি খাতের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করা খুবই জরুরি। 

 

Comments

The Daily Star  | English

Expatriates' remittance helps Bangladesh make turnaround: Yunus

It is the expatriates who help sustain the country, says the chief adviser

1h ago