‘অসাধারণ পারফর্মার বললে আমি বর্ষণের নাম নিব’
যুব এশিয়া কাপ জিতে প্রত্যাশা অনেক বাড়িয়ে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ খেলতে গিয়েছিল বাংলাদেশ দল। কিন্তু যুবারা বিদায় নিয়েছে সুপার সিক্স পর্ব থেকেই। পাকিস্তানের বিপক্ষে মাত্র ৫ রানে হৃদয়ভাঙা হারে হাতছাড়া হয়েছে সেমিফাইনাল খেলার স্বপ্ন। প্রধান কোচ স্টুয়ার্ট ল দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে সাক্ষাতকারে প্রকাশ করেছেন নিজেদের হতাশা। তবে আগামী দিনে এই দলের কয়েকজন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আলো ছড়াতে পারেন বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি।
অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নেওয়ার ধরনটা নিশ্চয়ই খুব যন্ত্রণাদায়ক ছিলো?
স্টুয়ার্ট ল: আমরা শুধু ম্যাচ নয় পাকিস্তানের থেকে রানরেট বেশি রেখে জেতার কথা আলাপ করছিলাম, সেই পথেও ছিলাম। আমরা টস জিতে পাকিস্তানকে দুইশোর ভেতর আটকে রেখেছিলাম। বোলিং দারুণ ছিলো। দুর্দান্ত পারফর্ম করেছে বর্ষণ (রোহানাত দৌলা) ও জীবন (শেখ পারভেজ)। আমাদের ফিল্ডিংও খুব ভালো হয়েছে। আমরা দারুণ কিছু ক্যাচ নিয়েছি, রান আউট করেছি। আমরা সত্যিই লড়াইয়ে এগিয়ে ছিলাম। তারপর এলো ব্যাটিং। আমরা জানতাম রানটা ৩৮.১ ওভারে নিতে হবে, ওভারপ্রতি চার রান করেছিলো। চাপটা আমাদের বেশি হয়ে গেল, পাকিস্তান খুব ভালো বল করল। ব্লুমফন্টেইন থেকে উইকেট ভিন্ন ছিলো, ব্যাটার বান্ধব ছিলো না। আমরা মনে করেছি ম্যাচটা জিততে হবে, সেমিফাইনালে যেতে হবে। অবশ্যই হৃদয়ভাঙা ছিলো।
ড্রেসিংরুমে অনেক কান্নাকাটি হয়েছে, ছেলেরা খুব আপসেট হয়ে যায়। নিজেদের ব্যাটিং নিয়ে চরম হতাশ হয়ে পড়ে। আমরা সবাই সামনে এগিয়ে যেতে উদগ্রীব ছিলাম, কিন্তু সফরটা সংক্ষিপ্ত হয়ে গেলো।
কোচ হিসেবে কতটা কষ্ট পেয়েছেন?
স্টুয়ার্ড ল: কোচ হিসেবে আমি কষ্ট পাইনি। কিন্তু ছেলেরা কষ্ট পাচ্ছে সেজন্য কষ্ট পেয়েছি। আমি নিজের জন্য এখানে আসিনি, খেলোয়াড়দের জন্য এসেছি। ২০ মাস থেকে এই ভ্রমণে সঙ্গী ছিলাম। সম্ভবত আমি মাত্র একটা অনুশীলন ম্যাচ মিস করেছি এই সময়ে। এই ছেলেদের তরুণ খেলোয়াড় শুধু না মানুষ হিসেবে বেড়ে উঠতেও দেখেছি। আমি কেবল এশিয়া কাপ জেতার স্মৃতিটা মনে করছি। আমরা এখনো এশিয়ার চ্যাম্পিয়ন, আগামী দুই বছর তা থাকব। এটাই ইতিবাচক।
ব্যাটিংটাই কি ভুগালো?
স্টুয়ার্ড ল: সব সময়ই ভেবেছি উন্নতির জায়গা আছে। আমরা অনূর্ধ্ব-১৯ পর্যায়ের ছেলেদের নিয়ে কথা বলছি। তরুণ হিসেবে প্রতিদিন তার ভুল করবে, সেখান থেকে শিখবে। এটা তাদের ক্যারিয়ারের উন্নতির পর্যায়। চাপের সময়গুলো সর্বোচ্চ পর্যায়ে খেলতে তাদের কাজে দেবে। সবাই জিততে চায়, কিন্তু মনে রাখতে হবে বয়সভিত্তিক ধাপে জেতাটাই মুখ্য নয়।
এই দলের কারা খুব দ্রুত জাতীয় দলে প্রতিনিধিত্ব করতে পারবে?
স্টুয়ার্ড ল: বোলিংয়ের দিক থেকে অনেকে আছে। আমি বর্ষণের কথা বলব। এশিয়া কাপের সেমিফাইনালে ভারতের বিপক্ষে ও ফাইনালে আমিরাতের বিপক্ষে সে দুর্দান্ত ছিলো। আমাদের মারুফ মৃধার মতন ব্যাকআপ আছে, ইমন ভালো (ইকবাল হোসেন)। তবে অসাধারণ পারফর্মার বললে আমি বর্ষণের নাম নিব। এছাড়া জীবন স্পিনার হিসেবে খুব ভালো। আরিফুল (ইসলাম) আয়ারল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র ও নেপালের বিপক্ষে দ্রুত রান তোলে রানরেট বাড়িয়েছে। যখন চাপ থাকবে আরিফুলকে শিখতে হবে কীভাবে স্ট্রাইক রোটেট করা যায়। আশিকুর রহমান শিবলি এশিয়া কাপে ভালো করেছে, তার দিকে নজর থাকবে।
ঘরোয়া পর্যায়ে এই ছেলেদের প্রতি আপনার কি বার্তা থাকবে?
স্টুয়ার্ড ল: আমার বার্তা থাকবে যাও এবং কোচদের কথা শোন। প্রত্যেক কোচেরই ভিন্ন দর্শন আছে। কোচ ও দল কি চায় সেটা বোঝার চেষ্টা কর। প্রক্রিয়া কখনো বদল হবে না। ব্যাটিংয়ে রক্ষণ আঁটসাঁট করা, ফুটওয়ার্ক ভালো করলে স্ট্রাইক রোটেটের হার বাড়বে।
এখান থেকে আপনার ব্যক্তিগত পরিকল্পনা কি?
স্টুয়ার্ড ল: আমি এখনো বিসিবির সঙ্গে কথা বলিনি চালিয়ে যাওয়া নিয়ে। আমার জন্য পাইপলাইনে আরও কিছু সুযোগ আছে। আমি বাংলাদেশে থাকতে পছন্দ করব, কাজটা চালিয়ে যেতে পছন্দ করব। বাংলাদেশে আমার সময়টা ভালো কেটেছে। কাজ করার জন্য এটা দারুণ জায়গা। আলোচনা যেহেতু হয়নি, জানি না কি হবে।
Comments