শিক্ষার্থীদের বিভক্তি ‘জুলাই স্পিরিটের’ বিপরীত

বাংলা একাডেমির আয়োজনে চলছে মাসব্যাপী অমর একুশে বইমেলা। প্রতিদিন মেলায় আসছে নতুন নতুন বই। এবারের মেলায় বাতিঘর প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হয়েছে কথাসাহিত্যিক মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিনের 'দা ভিঞ্চি ক্লাব'। গণঅভ্যুত্থান, নিজের লেখালেখি ও বইমেলা নিয়ে তিনি কথা বলেছেন দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে।
মেলায় প্রকাশিত 'দা ভিঞ্চি ক্লাব' সম্পর্কে জানতে চাই...
'দা ভিঞ্চি ক্লাব'-কে একটি ভিন্ন ধারার থ্রিলার বলতে পারেন। লিওনার্দো দা ভিঞ্চির পাঁচশ বছরের পুরোনো একটি চিত্রকর্মের অ্যাট্রিবিউশনকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়েছে গল্পটি। অ্যাট্রিবিউশনের কাজটি খুবই টেকনিক্যাল এবং জটিল, আমি চেষ্টা করেছি সহজভাবে, গল্পের আদলে পাঠকের কাছে তুলে ধরতে। তবে এই গল্পে আর্ট-অ্যাট্রিবিউশনের পাশাপাশি মোনালিসাকে নিয়ে কিছু নতুন এবং চমকে যাওয়ার মতো সত্যও তুলে ধরা হয়েছে।
বইমেলা ছাড়া আমাদের বই বাজার নিয়ে আপনার পর্যবেক্ষণ কী?
আমাদের বই বাজার খুবই ভঙ্গুর এবং নাজুক। বছরে মাত্র একটি মাসের মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে আছে দীর্ঘকাল থেকে। যার জন্যে আমাদের বই বাজারটি বিস্তৃত হতে পারছে না। এখান থেকে বের হয়ে আসার লক্ষণও দেখছি না। আমাদের বই নিয়ে বছরে কমপক্ষে একাধিক ইভেন্ট থাকা উচিত। আর লেখক-প্রকাশকদের উচিত মেলার বাইরে বই প্রকাশ করা। এটা করতে পারলে বইমেলায় আটকে থাকা বাজারটি হয়ত কিছুটা হলেও মুক্তি পাবে।
গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রধান সংকটগুলো কী কী বলে মনে করেন?
সংকট কথা বললে শেষ করা যাবে না। সংকট নেই কোথায়? দীর্ঘদিন গণতন্ত্রের অনুপস্থিতি আমাদের প্রায় সকল প্রতিষ্ঠানই কেবল ধ্বংস করেনি, বিরাট একটি জনগোষ্ঠীর মানসিকতাও নষ্ট করে দিয়েছে। এ থেকে উত্তরণের জন্য দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার দরকার। সবার আগে দরকার সুষ্ঠু নির্বাচনী ব্যবস্থা এবং আইনের শাসন।
জুলাই আন্দোলনে সরাসরি যুক্ত ছিলেন, এখন কী করছেন?
জুলাই আন্দোলনে কোটি কোটি মানুষের মতো আমিও অংশ নিয়েছি। গণতন্ত্র এবং ন্যায়বিচারের যে সংগ্রাম সেটা কখনো শেষ হওয়ার নয়, ফলে অবসরে যাওয়ারও অবকাশ নেই। সংগ্রাম এখনো চলছে। অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানোর আগে অবসর মিলবে না।
গণঅভ্যুত্থান নিয়ে কেমন কন্টেন্ট তৈরি হচ্ছে, যেগুলো হয়েছে সেগুলোর মান কেমন?
আসলে জুলাইর গণঅভ্যুত্থান নিয়ে খুব বেশি কাজ এখনো হয়নি। যেগুলো হয়েছে সেগুলোর বেশিরভাগই হুজুগে বা সুযোগ নেওয়ার জন্য হয়েছে। আগে যেমন বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে হত, তেমন আরকি। এই আন্দোলনকে বুকে ধারণ করে সততার সঙ্গে কাজ এখনো তেমন একটা হয়নি। জুলাইয়ের ঘটনা সাহিত্যে এখনো তেমন একটা আসেনি। আমি ব্যক্তিগতভাবে তরুণ লেখকদের নিয়ে একটি ছোটগল্পের সঙ্কলন করেছি অবশ্য। আশা করছি বছর শেষ হওয়ার আগে আরও কিছু কাজ আমরা পাব।
শিক্ষার্থীদের বিভক্তি-বৈষম্য আমাদের কোন দিকে নিয়ে যাচ্ছে?
জুলাই স্পিরিটের একদম বিপরীত। আমি আগেও বলেছি, জুলাই যদি ম্লান হয় তো এই গণঅভ্যুত্থানের অগ্রসৈনিকদের ভুলেই হবে। আগস্টের পর যারা ক্ষমতায় গেছে কিংবা সামনে ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন দেখছে, সকল পক্ষের মধ্যে একটা জিনিস লক্ষণীয়, তারা জুলাইকে ব্যবহার করছে, এই স্পিরিটকে ধারণ করছে না আর। এসব দেখে আমি খুবই মর্মাহত।
আপনার পাঠক কারা, কেন আপনার বই সংগ্রহ করে?
শুরুতে আমি ভাবতাম থ্রিলারধর্মী গল্প তরুণ-তরুণীরা বেশি পড়ে, কিন্তু দীর্ঘদিন পর এই ধারণাটি বদলে গেছে। স্কুলের ছাত্র-ছাত্রী থেকে শুরু করে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়, সর্বোপরি বয়স্করাও আমার লেখা পড়ে।
কলকাতায় একটি গ্রুপ আপনার নামে-বেনামে নিন্দা করে। কেন?
কলকাতার একটি সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী শুরু থেকেই আমার ব্যাপারে নাখোশ ছিল, তারা জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর আমাকে ভারত-বিরোধী হিসেবে আখ্যায়িত করে বয়কটের আন্দোলন করার চেষ্টা করছে। এই গোষ্ঠীটি বিজেপি-আরএসস সমর্থিত, ওদেরকে নিয়ে আমি বেশি কিছু বলব না, কেননা ওরা সংখ্যায় নগণ্য। বেশিরভাগ পাঠক এখনো আমার বই কিনছে, পড়ছে। এটাই হলো গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। বাকি যা কিছু হচ্ছে সেগুলো কেবলই নয়েজ।
Comments