গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধের প্রধান হাতিয়ার মামলা?

পরপর কয়েকটি ঘটনা ঘটে গেলো।

১. রাজধানীর গুলিস্তানে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের ভবন নিয়ে অনিয়মের সংবাদ প্রচার করায় নাগরিক টেলিভিশনের বিরুদ্ধে মামলার সুপারিশ করছে জাতীয় সংসদের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি।

২. ছাত্রলীগের পদবাণিজ্য নিয়ে সংবাদ প্রকাশের প্রায় আড়াই মাস পরে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে দৈনিক দেশ রূপান্তর পত্রিকার সাংবাদিক ও প্রকাশকের বিরুদ্ধে মানহানি মামলার আবেদন করেছেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক ইন্দ্রনীল দেব শর্মা। বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ শেষে রিপোর্টার পাভেল হায়দার চৌধুরী ও প্রকাশক মাহির আলী খান রাতুলকে হাজির হতে সমন জারি করেছেন আদালত।

৩. ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ৬ সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন রাঙামাটির সংরক্ষিত আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ফিরোজা বেগম চিনুর মেয়ে নাজনীন আনোয়ার।

তারা হলেন, দীপ্ত টিভির বিশেষ প্রতিনিধি বায়েজিদ আহমেদ, ইন্ডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের সাংবাদিক অনির্বাণ শাহরিয়ার, দৈনিক পার্বত্য চট্টগ্রাম ও পাহাড় টোয়েন্টিফোর ডটকম সম্পাদক ফজলে এলাহী, জাগো নিউজের রাঙ্গামাটি প্রতিনিধি সাইফুল হাসান, বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি দিদারুল আলম ও বণিক বার্তার প্রতিনিধি প্রান্ত রনি।

এবার কিছু প্রশ্ন করা যাক।

১.

'মুক্তিযোদ্ধাদের সম্পদের লাভের টাকা কে খায়?' এবং 'নিঃস্ব অনেক ব্যবসায়ী, একই দোকান দুবার বিক্রির পাঁয়তারা' শিরোনামে ২টি প্রতিবেদন প্রচার করে নাগরিক টেলিভিশন। এই সংবাদ তৈরিতে তথ্য অধিকার আইন মানা হয়নি বা সংশ্লিষ্ট সকলের বক্তব্য নেওয়া হয়নি—এমন অভিযোগে নাগরিক টেলিভিশনের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছে সংসদের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি।

বস্তুত, কোন সংবাদটি কোন প্রক্রিয়ায় তৈরি করা হবে; কার কার সাক্ষাৎকার নেওয়া হবে কিংবা কী কী বিষয় তুলে আনা হবে—সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার সংশ্লিষ্ট গণমাধ্যম কর্তৃপক্ষের। সব সময় সবার বক্তব্য পাওয়া যায় না। আবার অনেক সময় কারো কারো বক্তব্য নিতে গেলে সেই সংবাদ আর আলোর মুখ দেখে না—এরকম উদাহরণও ভুরি ভুরি। তার মানে গণমাধ্যমকে এরকম গুরুত্বপূর্ণ বা স্পর্শকাতর বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ ও প্রচারের ক্ষেত্রে কিছু কৌশল অবলম্বন করতে হয়। অনেক সময় গোপন ক্যামেরায় ছবি বা অডিও ধারণ করতে হয়। এটা সাংবাদিকতায় বৈধ।

তারপরও প্রশ্ন হলো, কোনো একটি সংবাদে যদি ভুল তথ্যও থাকে, তারপরও কি সংসদীয় স্থায়ী কমিটি সংবাদপত্র বা টেলিভিশনের বিরুদ্ধে মামলার সুপারিশ করতে পারে? সংবিধানের ৭৬ অনুচ্ছেদ বলছে, 'সংসদের স্থায়ী কমিটিগুলো খসড়া বিল ও অন্যান্য আইনগত প্রস্তাব পরীক্ষা নিরীক্ষা করবে; সংসদ কোনো জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয় কমিটিকে অবহিত করলে সেটি অনুসন্ধান বা তদন্ত করতে পারবে।' তার মানে গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে মামলার সুপারিশ করা সংসদীয় কমিটির এজেন্ডায় নেই। বরং কমিটির উচিত ছিল, টেলিভিশনে যে অনিয়মের অভিযোগে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে, সেটির তদন্ত করা বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সঠিক তদন্ত করে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া। কমিটির উচিত ছিল মুক্তিযোদ্ধারা কীভাবে বঞ্চিত হচ্ছেন এবং তাদের নাম ভাঙিয়ে কতিপয় অসাধু গোষ্ঠী কীভাবে ফায়দা লোটার চেষ্টা করছে, সেটি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা।

কমিটি এই সংবাদের সত্যতা যাচাইয়ে নিজেরা উদ্যোগ নিতে পারতো এবং প্রয়োজনে সেখানে ওই সংবাদের রিপোর্টারকে কমিটির বৈঠকে আমন্ত্রণ জানিয়ে তার কাছ থেকে আরও বিস্তারিত তথ্য নিতে পারতো। কমিটির উচিত ছিল এরকম একটি অনিয়মের সংবাদ প্রচার করায় সংশ্লিষ্ট রিপোর্টার ও টেলিভিশন চ্যানেল যাতে কোনো ধরনের সমস্যায় না পড়ে বা কোনো ধরনের আক্রমণের শিকার না হয়, তার ব্যবস্থা করা। কিন্তু আমরা দেখছি ঘটনা ঘটলো উল্টো।

যে গণমাধ্যমকে বলা হয় রাষ্ট্রে গণতন্ত্র বিকাশের প্রধান হাতিয়ার, সেই গণমাধ্যমকে সহায়তা করা বা সেই গণমাধ্যমের সহায়তা নিয়ে কোনো অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করাই যেখানে কাঙ্ক্ষিত, সেখানে অত্যন্ত দুঃখজনকভাবে দেখা গেলো যে, জাতীয় সংসদের একটি কমিটি সেই গণমাধ্যমকেই চাপের মুখে ফেলার সুপারিশ করছে। এখানে মনে হচ্ছে আইন ও নির্বাহী বিভাগ একাকার।

নির্বাহী বিভাগ বা রাষ্ট্রের কোনো প্রতিষ্ঠান অন্যায় করলে সেটির বিরুদ্ধে যে সংসদীয় কমিটিগুলোর সোচ্চার ভূমিকা রাখার কথা, সেই কমিটিই দেশের একটি স্বনামধন্য টেলিভিশন চ্যানেলের বিরুদ্ধে যে মামলার সুপারিশ করলো, সেটি স্পষ্টত গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং দেশে গণতন্ত্রের বিকাশ বাধাগ্রস্ত করবে।

বস্তুত গণমাধ্যমের আয়নায় রাষ্ট্রকে দেখা যায়। সুতরাং রাষ্ট্রকে স্বচ্ছ রাখতে হলে সেই আয়নার কাঁচও স্বচ্ছ রাখতে হয়। সেটি যাতে ভেঙে না যায় বা কেউ যাতে ওই আয়নাটা ঘোলা করতে না পারে, সে বিষয়ে রাষ্ট্রকেই সচেষ্ট থাকতে হয়।

২.

গত ৬ জুলাই দৈনিক দেশ রূপান্তর পত্রিকার অনলাইন ও মুদ্রিত মাধ্যমে 'ছাত্রলীগের পদ কোটি টাকা' শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এর প্রায় আড়াই মাস পরে গত ২০ সেপ্টেম্বর পত্রিকার প্রকাশক মাহির আলী খাঁন রাতুল ও জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক পাভেল হায়দার চৌধুরীর বিরুদ্ধে মানহানির অভিযোগে মামলা করেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক ইন্দ্রনীল দেব শর্মা। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ঢাকা মহানগর হাকিম শহীদুল ইসলাম পত্রিকার প্রকাশক ও প্রতিবেদককে ২০ অক্টোবর আদালতে হাজির হতে সমন দেন।

রাজনৈতিক দলের কমিটি তথা পদ দেওয়া-নেওয়া নিয়ে কী ধরনের বাণিজ্য হয়, কী পরিমাণ টাকার লেনদেন হয়, তা এখন ওপেন সিক্রেট। তাছাড়া দেশ রূপান্তর যে সংবাদটি প্রকাশ করেছে, সেখানে সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য রয়েছে। যেসব কাঠামো ও নিয়ম মেনে একটি অনুসন্ধানী সংবাদ তৈরি করতে হয়, এখানে তাও অনুসরণ করা হয়েছে। এ ধরনের সংবাদে ভুক্তভোগীরা সব সময় নিজেদের নাম পরিচয় গোপন রাখেন এবং সাংবাদিকও সব সময় সোর্স বা সূত্র উল্লেখ করতে বাধ্য নন। কিন্তু দেখা যাচ্ছে সংবাদ প্রকাশের প্রায় আড়াই মাস পরে মানহানির অভিযোগে মামলা হয়েছে। এর অর্থই হলো, মূল অপরাধকে আড়াল করা। চোর যখন ধরা পড়ে তখন সে চুরির পক্ষে নানা যুক্তি দেয়। এখানেই তা-ই হয়েছে।

তবে কোনো সংবাদ নিয়ে কেউ সংক্ষুব্ধ হলে সেটির প্রতিকারের অনেক উপায় আছে। সংশ্লিষ্ট পত্রিকায় প্রতিবাদলিপি পাঠানো এবং প্রয়োজনে সংবাদ সম্মেলন করে ওই সংবাদে আনীত অভিযোগগুলো খণ্ডনের সুযোগ রয়েছে। যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে, সেগুলো যে সঠিক নয়, তা প্রমাণের সুযোগ রয়েছে। কিন্তু সেই পথে না গিয়ে মামলা করার অর্থই হলো গণমাধ্যমকে চাপে ফেলা, ভয় দেখানো।

প্রশ্ন হলো, তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ না দিয়ে আদালত  একটি পত্রিকার প্রকাশক ও রিপোর্টারের বিরুদ্ধে সরাসরি সমন দিয়েছেন। এই প্রশ্নটা এ কারণে উঠছে যে, এই মামলা গ্রহণের ক্ষেত্রে আদালত কতটা প্রভাবমুক্ত থাকতে পেরেছেন? তার ওপর কি রাজনৈতিক চাপ আছে? যদি রাজনৈতিক চাপের কারণে আদালত গণমাধ্যম বা গণমাধ্যমকর্মীকে চাপে ফেলেন, তাহলে শেষ পর্যন্ত চাপে পড়বে দেশ, দেশের গণতন্ত্র, আইনের শাসন।

৩.

সম্প্রতি চট্টগ্রাম সাইবার ট্রাইব্যুনাল আদালতে ৬ সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেছেন রাঙামাটির সংরক্ষিত আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ফিরোজা বেগম চিনুর মেয়ে নাজনীন আনোয়ার। স্মরণ করা যেতে পারে, পার্বত্য চট্টগ্রামভিত্তিক অনলাইন পোর্টাল পাহাড় টোয়েন্টিফোর ডটকমে ২০২১ সালে প্রকাশিত একটি সংবাদের পরিপ্রেক্ষিতে ওই এলাকার সংরক্ষিত আসনের সাবেক নারী সংসদ সদস্য ফিরোজা বেগম চিনুর মেয়ে নাজনিন আনোয়ার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সাংবাদিক ফজলে এলাহীর বিরুদ্ধে মামলা করেন। ওই মামলায় গত ২১ জুন রাঙামাটির তবলছড়ি এলাকার বাসা থেকে ফজলে এলাহীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম, কালের কণ্ঠ ও এনটিভির রাঙামাটি জেলা প্রতিনিধি।

ফজলে এলাহী সাবেক সংসদ সদস্য ফিরোজা বেগম চিনুর কিছু অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ করেছিলেন। মূলত এর জেরেই তার মেয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন। তিনি গ্রেপ্তার হওয়ার পরে সাংবাদিকসহ নানা শ্রেণিপেশার মানুষ তার মুক্তির দাবিতে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন। তাকে গ্রেপ্তারের ছবি ও সংবাদ ফেসবুকে শেয়ার করেছেন, এমনকি যে সংবাদের কারণে তিনি গ্রেপ্তার হয়েছেন, সেটিও অনেকে শেয়ার করেছেন। অথচ দেখা গেলো এর প্রায় ৩ মাস পরে ওই সাবেক সংসদ সদস্যের মেয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সেই ফজলে এলাহীসহ আরও ৫ সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনেই মামলা করলেন এবং আদালত সেটি আমলে নিয়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) আগামী ১৩ নভেম্বরের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন।

কোনো একটি অপরাধের সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশিত হওয়ার পরে সেই সংবাদ ফেসবুকে শেয়ার করা বা একজন সহকর্মী ডিজিটাল আইনে গ্রেপ্তার হলে তার মুক্তির দাবি জানিয়ে ফেসবুকে কিছু লেখা বা প্রতিবাদ জানানো সাংবাদিকের কর্তব্যের মধ্যেও পড়ে। অথচ সেই সংবাদ শেয়ার করা কিংবা সহকর্মীর মুক্তির দাবি জানিয়ে পোস্ট দেওয়া, কিছু লেখা বা কোনো মন্তব্য করার কারণে কী করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়? পুলিশ বা আদালত কী করে এই মামলা গ্রহণ করেন? যারা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করতে যান, সাধারণত তারা সমাজের প্রভাবশালী কিংবা প্রভাবশালীদের পক্ষে তাদের তথাকথিত মানহানির অভিযোগ তুলেই মামলা করেন। এখানে রাজনৈতিক ক্ষমতার প্রভাবই মূলত কাজ করে। তাতে তিনি মন্ত্রী হন কিংবা বর্তমান অথবা সাবেক সংসদ সদস্য, এমনকি সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য হলেও অসুবিধা নেই।

দুঃখজনক ব্যাপার হলো, ২০১৮ সালে এই অদ্ভুত আইনটি পাস হওয়ার পর থেকেই লক্ষ্য করা যাচ্ছে, এই আইনের প্রধান উদ্দেশ্যই হচ্ছে ক্ষমতাবানদের বিষয়ে কোনো সংবাদ বা ফেসবুক স্ট্যাটাস অথবা মন্তব্যকে প্রতিহত করা, তথা যিনি সংবাদ লিখবেন বা প্রচার করবে অথবা ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেবেন কিংবা কমেন্ট করবেন, তার বিরুদ্ধে সরাসরি মামলা করে দেওয়া।

এই আইনের এমনই জাদুকরি ক্ষমতা যে, কেউ চাইলেই যে কারোর বিরুদ্ধে মামলা হতে পারে। কিন্তু অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে এই আইনের প্রধান টার্গেট সাংবাদিক এবং সোশ্যাল মিডিয়া অ্যক্টিভিস্টরা। অর্থাৎ প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে যেকোনো ধরনের সংবাদ, কার্টুন, মন্তব্য কঠোর হাতে দমন এবং কেউ যাতে এ ধরনের কাজ করতে না পারে সেজন্য একটি ভীতিকর পরিবেশ তৈরি করাই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের উদ্দেশ্য।

ডিজিটাল প্লাটফর্মে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কথা আইনে বলা হলেও গত ৪ বছরে এই আইনে কতজন সাধারণ মানুষকে নিরাপত্তা দেওয়া হয়েছে আর কতজন ক্ষমতাবানের তথাকথিত মান রক্ষার কাজে ব্যবহৃত হয়েছে, তা নিয়ে নাগরিকদের মনে প্রশ্নের শেষ নেই।

মূলত গত ৪ বছরে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটি গণমাধ্যম ও সোশ্যাল মিডিয়াকে চাপে রাখা এবং ক্ষমতাবানদের মান রক্ষার আইনে পরিণত হয়েছে। এরকম একটি আইনি পরিকাঠামোর ভেতরে না গণমাধ্যম বিকশিত হতে পারে, না ভিন্নমত। আর যেখানে ভিন্নমতের কোনো জায়গা নেই, সেখানে গণতন্ত্র বা আইনের শাসন, এমনকি প্রশাসনে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিও নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। কারণ মানুষ যদি তার চোখে দেখা কালোকে কালো বলতে না পারে, মানুষ যদি সমালোচনা করতে না পারে, যদি তাকে শুধু প্রশংসাই করতে হয়, তাহলে সেই সমাজ ও রাষ্ট্র থেকে উদারতা, সহনশীলতা এবং বাকস্বাধীনতা শব্দগুলো গায়েব হয়ে যাবে।

পরিশেষে, ডিজিটাল মাধ্যমে নাগরিকের সুরক্ষা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। সেজন্য একটি আইন থাকাও বাঞ্ছনীয়। কিন্তু নাগরিকের সুরক্ষা, নিরাপত্তা ও অধিকারের কথা বলে প্রণীত সেই আইন যদি ক্ষমতাবানদের তথাকথিত মান রক্ষার কাজে ব্যবহৃত হতে থাকে; যদি সেই আইন গণমাধ্যম এবং গণমাধ্যমকর্মীদের সারাক্ষণ ভয় ও আতঙ্কের মধ্যে রাখে; সেই আইন যদি সোশ্যাল মিডিয়ায় মানুষের কথা বলা তথা ভিন্ন মত প্রকাশের অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায় এবং সেই আইনের কারণে যদি কিছু লেখা শুরু করার আগেই সাংবাদিক ও নাগরিকদের সেলফ সেন্সরশিপ আরোপে বাধ্য করে—তাহলে সেই আইনের শুধু সংশোধন নয়, বরং সেটি বাতিল করে নতুন আইন করাই সময়ের দাবি।

আমীন আল রশীদ: কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স এডিটর, নেক্সাস টেলিভিশন

(দ্য ডেইলি স্টারের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির আইনগত, মতামত বা বিশ্লেষণের দায়ভার সম্পূর্ণরূপে লেখকের, দ্য ডেইলি স্টার কর্তৃপক্ষের নয়। লেখকের নিজস্ব মতামতের কোনো প্রকার দায়ভার দ্য ডেইলি স্টার নেবে না।)

Comments

The Daily Star  | English

No price too high for mass deportations

US President-elect Donald Trump has doubled down on his campaign promise of the mass deportation of illegal immigrants, saying the cost of doing so will not be a deterrent.

4h ago