তবে কি পানির দরেই ডিম কিনছি?

আমাদের দেশে একবার কোনো পণ্যের দাম বাড়লে তা সাধারণত আর কমে না বললেই চলে। বিক্রেতারাও বলেন, জিনিসপত্রের দাম আরও বাড়বে। চাল বা সবজির ভরা মৌসুমেও দাম খুব একটা কমে না।

ইতিহাস বলে, বাংলার সুবেদার শায়েস্তা খাঁর শাসনামলে টাকায় ৮ মন চাল কেনা যেত। আর বর্তমানে মাত্র ১ কেজি মোটা চালের দামই সর্বনিম্ন ৫০ টাকা। সেই চাল গরিবের পেট ভরিয়ে চিড়বিড়িয়ে ওঠা ক্ষুধাকে দমিয়ে রাখে। কিন্তু শুধু চালেই কি উদরপূর্তি হয়?

কয়েক বছরেই শাক-সবজি, ফলমূল, মাছ, মাংস, ডিম, দুধসহ নিত্য প্রয়োজনীয় প্রতিটি পণ্যের দাম বেড়েছে নানান ধাপে। সর্বংসহা মানুষ এসব মেনে নিয়েই বয়ে চলেছে জীবন।

দামি মাছ আর গরু ও খাসির মাংসের মতো খাবারগুলো মেহমান বাসায় না এলে খুব কম সংসারেই রান্না হয় এখন। খাবার পাতে দেশি মুরগির মাংসও যেন সোনার হরিণ। মধ্যবিত্তদের মাঝেও যারা ব্রয়লার মুরগি আর পাঙ্গাস-তেলাপিয়ার নাম শুনলে নাক সিঁটকাতেন, গত কয়েক বছরে তাদের বাজারের থলেতেও জায়গা করে নিয়েছে এগুলো।

মানুষের এমন অসহায় সময়ে গরিব ও মধ্যবিত্তের বন্ধু হয়ে হাত জড়িয়ে বসে ছিল ডিম আর দুধ। মধ্যবিত্ত ঘরের গিন্নি খাঁটি দুধে পানি মিশিয়ে পরিমাণে বেশি দেখিয়ে পরিবারের সবার যোগান দেন।

কিন্তু ডিম? ডিমের এত দাম হতে পারে, এমন ভাবনা ৫ বছর আগেও কেউ ভেবেছেন বলে মনে হয় না। রেকর্ড করেছে ডিমের দাম। পরিবারের প্রত্যেক সদস্যের একটি করে ডিম বরাদ্দ দেওয়াও এখন বেশ কঠিন। পেঁয়াজ মরিচকে সঙ্গী করে ডিম ভাজাও তো কঠিন এ দেশের আমজনতার জন্য। মরিচের ঝাল আর পেঁয়াজের ঝাঁঝ হার মেনেছে দামের কাছে।

প্রোটিনের উৎসের বিকল্প ডালের দামও কম নয়।

প্রতিটি পণ্যের ঊর্ব্ধগতির কারণে বাজার থেকে প্রয়োজনীয় জিনিসও পরিমাণে কম কিনতে হচ্ছে, আর বাদ পরে যাচ্ছে কম প্রয়োজনীয় পণ্য। বাজারে গেলে জিনিসপত্রের দাম শুনলেই অস্থির লাগে।

আমাদের দেশে একবার কোনো পণ্যের দাম বাড়লে তা সাধারণত আর কমে না বললেই চলে। বিক্রেতারাও বলেন, জিনিসপত্রের দাম আরও বাড়বে। চাল বা সবজির ভরা মৌসুমেও দাম খুব একটা কমে না।

অবশ্য শুধু দেশকে দুষিয়ে কি হবে, দাম বৃদ্ধির মিছিলে সারা বিশ্বই তো এগিয়ে চলেছে!

শৈশবে দেখেছি, জেলা শহরের প্রায় প্রতিটি বাড়িতে মুরগি, তিতির, কবুতর পালন করা হতো। অনেকে গরু-ছাগলও পালতেন। মাংস ও ডিম আসতো সেখান থেকেই, বিকিকিনিও চলতো কম-বেশি। উঠান জুড়ে ছিল সবজি বাগান।

আজকাল বারান্দায়, ছাদে, বাড়ির পাশে সবজি চাষ হলেও গৃহপালিত পশু-পাখি পালনের প্রচলন নেই বললেই চলে। সময় এসেছে মা-খালাদের এই সংসারে আয়ের এবং সেইসঙ্গে সাশ্রয়ের দেখানো পথটাকে আগলে ধরার।

গত কয়েকদিন দিন ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পরেছে গ্রাফিক্সে তৈরি একটি ছবি। তাতে লেখা, 'পানির দামে ডিম'। লেখাটির নিচে পাশাপাশি বোতলজাত পানি ও ডিমের ছবি। বোতলের ছবির নিচে লেখা, এক বোতল পানি ১৫ টাকা আর ডিমের ছবির নিচে লেখা, একটা ডিম ১৫ টাকা।

পানি মানব শরীরের অত্যন্ত প্রয়োজনীয় উপাদান, পানির অপর নাম জীবন। বিশুদ্ধ সুপেয় পানি সহজলভ্য নয়, এমন জায়গা ছাড়া অন্য কোথাও পানি কিনে পান করতে হয় না। সুপেয় পানির মূল্যও সাধারণের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যেই রয়েছে এখন পর্যন্ত। সেই অর্থে পানিকে সস্তা বলা যেতেই পারে। তবে কি ধরেই নিতে হবে, ডিমও দ্রব্যমূল্যের এই আকাশ ছোঁয়া বাজার দরের তুলনায় সস্তা? মাত্র ১টি ডিমের মূল্য ১৫ টাকা কি আমাদের জন্য আসলেই অনেক বেশি নয়?

তানজিনা আকতারী; সংবাদ পাঠক, বাংলাদেশ বেতার ও গণমাধ্যম কর্মী

[email protected]

(দ্য ডেইলি স্টারের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির আইনগত, মতামত বা বিশ্লেষণের দায়ভার সম্পূর্ণরূপে লেখকের, দ্য ডেইলি স্টার কর্তৃপক্ষের নয়। লেখকের নিজস্ব মতামতের কোনো প্রকার দায়ভার দ্য ডেইলি স্টার নেবে না।)

Comments

The Daily Star  | English

One month of interim govt: Yunus navigating thru high hopes

A month ago, as Bangladesh teetered on the brink of chaos after the downfall of Sheikh Hasina, Nobel Laureate Muhammad Yunus returned home to steer the nation through political turbulences.

7h ago