কলঙ্কিত অতীত আর কতদিন আঁকড়ে থাকবে শিবির?

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তি, নির্বাচনের সময় ঘোষণা নিয়ে দেশজুড়ে উৎসবের আমেজ ছিল মঙ্গলবার। সেই সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ইসলামী ছাত্রশিবিরের প্রদর্শনী। সেটা নিয়ে যতটা সমালোচনা হওয়ার কথা ছিল, তার আগেই প্রদর্শনীটি গুটিয়ে ফেলা হয়েছে।
বলা যায় এটা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে খাটো করে দেখানোর ধারাবাহিক প্রচেষ্টার আরেকটি কিস্তি। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠনের ক্যাডাররা পরখ করে দেখতে চাইছে কতদূর যেতে পারে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে কতটা অপমান করতে পারে।
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ইসলামপন্থী দলের ছাত্র সংগঠনটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণকেন্দ্র টিএসসিতে তাদের প্রদর্শনীতে মহিমান্বিত করার চেষ্টায় তুলে ধরে সাতজন দণ্ডিত যুদ্ধাপরাধীর ছবি। তাদের মধ্যে ছিলেন মতিউর রহমান নিজামী ও আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ—যারা ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরে মুক্তিযুদ্ধের শেষ পর্যায়ে বুদ্ধিজীবী হত্যার পেছনে ছিলেন।
ওই সাতজনের মধ্যে আরও ছিলেন সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী, আব্দুল কাদের মোল্লা ও মোহম্মদ কামারুজ্জামান। মুক্তিযোদ্ধাদের দমনে তারা শুধু সক্রিয় ছিলেন না, অত্যন্ত সহিংস অপরাধের দায়ে দণ্ডিতও হয়েছেন।
ছাত্রশিবির হয়তো বুঝতে পারছে না—তারা সাবেক নেতাদের যত মহিমান্বিত করার চেষ্টা করে, ততটাই ঘৃণিত হয়ে উঠবে। রাজাকার ও যুদ্ধাপরাধীদের 'বীর' হিসেবে তুলে ধরার যত চেষ্টা চালাবে, অন্যরা তত বিব্রত হবে। বিশেষ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যান্য সদস্যরা, যাদের কাছে আওয়ামী-বিরোধিতা আর মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা মোটেই সমার্থক নয়। শিবির যতবার তাদের যুদ্ধাপরাধী নেতাদের নিয়ে নিজেদের অনুভূতি প্রকাশ করে, ততবারই প্রমাণ দেয় যে, তারা এখনো তাদের কলঙ্কিত অতীত ভোলেনি বা সেই অতীতের জন্যে একটুও লজ্জিত না।
শিবির তাদের নেতাদের নিরপরাধ ভুক্তভোগী, এমনকি শহীদ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা চালিয়ে যাবে, সেটা অবশ্য সহজেই অনুমেয়। কিন্তু উদ্বেগজনক ব্যাপার হলো, এই ঘটনা যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অনুমোদন বা প্রশ্রয়ে ঘটে, তখন তা ভিন্ন এক বার্তা দেয়। যারা এই প্রদর্শনী অনুমোদনের প্রক্রিয়ায় ছিলেন, চুপচাপ রাজি হয়েছেন এবং কিছু না বুঝে সরল মনে অনুমতি দেওয়ার ভান করেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই কর্মকর্তাদের দিকে এখন পর্যন্ত কেউ আঙুল তোলেনি। তোলা উচিত। দেখিয়ে দেওয়া দরকার স্বাধীনতা-বিরোধীদের দোসর কারা।
Comments