বাস্তবায়ন না হওয়ার ‘দুষ্টচক্রে’ বাজেট

বাজেট, অর্থবছর, মোস্তফা কে মুজেরি, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ,

নীতিনির্ধারকদের অতিরিক্ত প্রত্যাশা ও সরকারি সংস্থাগুলোর সক্ষমতার অভাবে চলতি অর্থবছরেও জাতীয় বাজেট সম্পূর্ণ বাস্তবায়নে ব্যর্থ হতে পারে সরকার।

বাস্তবায়নের এই গতি যদি ২০২২-২৩ অর্থবছরের শেষ পর্যন্ত অর্থাৎ ৩০ জুন পর্যন্ত অব্যাহত থাকে, তবে টানা ১৪ বছরের মতো সরকার পূর্ণ বাজেট বাস্তবায়নে ব্যর্থ হতে যাচ্ছে।

বাজেটের পূর্ণ বাস্তবায়নের এই ব্যর্থতাকে একটি 'দুষ্টচক্র' বলে মন্তব্য করেছেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা এবি মির্জা আজিজুল ইসলাম।

তিনি বলেন, 'প্রতি বছর আমরা বাজেট বরাদ্দ করি। কিন্তু, আমরা পুরো অর্থ ব্যবহার করতে পারি না। ফলে, বাজেটের পূর্ণ বাস্তবায়নে যে সুফল পাওয়া যেত তা থেকে বাংলাদেশ বঞ্চিত হচ্ছে।'

২০২২-২৩ অর্থবছরে শুরুতে বাজেট নির্ধারণ করা হয়েছিল ৬ লাখ ৭৯ হাজার কোটি টাকা। পরে সরকার তা কমিয়ে ৬ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা করেছিল। যা ছিল আগের পরিকল্পিত বাজেটের ৯৭ শতাংশ।

এর আগে সর্বশেষ ২০১১ সালে পরিকল্পিত বাজেটের ৯৭ শতাংশ বাস্তবায়ন হয়েছিল।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের মতে, ২০০৮-০৯ সাল থেকে বাংলাদেশের গড় বাজেট বাস্তবায়নের হার ছিল ৮৬ শতাংশ।

২০০৭-০৮ এবং ২০০৮-০৯ কার্যবছরের বাজেট প্রণয়নকারী এবি মির্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, 'পরিকল্পিত বাজেট বাস্তবায়নে ব্যর্থতার মূল কারণ হলো সরকারি কর্মকর্তাদের অযোগ্যতা এবং জবাবদিহিতার অভাব। জবাবদিহির ব্যবস্থা চালু করতে হবে। সাফল্যের জন্য পুরস্কার এবং ব্যর্থতার জন্য শাস্তির ব্যবস্থা থাকতে হবে।'

এদিকে বাজেট প্রণয়ন প্রক্রিয়াটিকে 'রাজনৈতিক' বলে উল্লেখ করেছেন ইনস্টিটিউট অব ইনক্লুসিভ ফাইন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের নির্বাহী পরিচালক মোস্তফা কে মুজেরি।

তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বাস্তবতা হলো আমরা ব্যয়ের পরিকল্পনার সময় অতিরিক্ত আশাবাদী থাকি। সমাজের সব শ্রেণি-পেশার মানুষের চাহিদা মেটানোর কথা বলা হয় বাজেটে, যদিও আমরা জানি, তা বাস্তবায়িত হবে না। যারা বাজেট তৈরি করেন, তারা জানেন লক্ষ্য অর্জন হবে না। তবুও, তারা উচ্চ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেন।'

'আমাদের বাস্তবায়নের সক্ষমতার উন্নতি হচ্ছে না। যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে আমরা মনোযোগও দিই না। আর বাস্তবায়ন না হওয়ায়, অগ্রাধিকার ঠিক রাখাও কঠিন হয়ে পড়ে,' বলেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, 'সড়ক ও মহাসড়কের মতো শক্ত অবকাঠামো নির্মাণে প্রচুর অর্থ ব্যয় করা হচ্ছে। অন্যদিকে শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং সামাজিক সুরক্ষার ব্যয় সেই অনুপাতে বাড়ছে না। এসব গুরুত্বপূর্ণ খাতে আমরা পিছিয়ে পড়ছি।'

অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০০৮-০৯ থেকে ২০২০-২১ সাল পর্যন্ত ১৩ বছরে উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর গড় বাস্তবায়নের হার ছিল ৮১ শতাংশ। সরকারি কর্মকর্তাদের বেতন ও ঋণের সুদ পরিশোধসহ অন্যান্য পরিচালন ব্যয়ের মেটানোর হার ছিল ৮৮ শতাংশ।

মোস্তফা কে মুজেরি বলেন, 'এক বা ২ বছরের বাজেট বাস্তবায়ন না হলে ঠিক আছে। কিন্তু, বছরের পর বছর তা চলতে পারে না। এর মানে হলো কিছু সমস্যা আছে। সেগুলো চিহ্নিত করে সমাধান করা প্রয়োজন।'

এ প্রসঙ্গে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, 'বাজেট বাস্তবায়ন না হওয়া একটি দুষ্টচক্রে আটকে আছে। এটা দুঃখের হলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই। এটি এক ধরনের ব্যবসায়ে পরিণত হয়েছে।'

'বাস্তবায়নে ব্যর্থতার পেছনের কারণগুলো সংসদে আলোচনা করা হয় না,' বলেন তিনি।

তার মতে, উন্নয়ন ব্যয় নিশ্চিত করা প্রয়োজন কারণ এটি অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে উত্সাহিত করার পাশাপাশি বিনিয়োগ আকর্ষণ করে, কর্মসংস্থান তৈরি করে এবং আয় বাড়ায়।

'আর্থিক ব্যবস্থা সঠিকভাবে কার্যকর করা হলে মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত হবে। আর সেটি হলে আমরা এর অনেক ইতিবাচক প্রভাব দেখতে পাব,' যোগ করেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

137 journalists sued so far

They have been charged with murder, attempted murder, unlawful assembly, rioting, abduction, vandalism, extortion, assault, and in certain cases, genocide, and crimes against humanity.

9h ago