শ্রীলঙ্কার বিশ্বকাপ জেতার জোরালো অবস্থা দেখছি: হাশান তিলকরত্নে

বাঁহাতি এই ব্যাটার লঙ্কান নারী দলের হয়ে এসেছেন সিলেটে। দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে আলাপ করেছেন বিবিধ বিষয়ে।
hashan tillakaratne

নব্বুই দশকে শ্রীলঙ্কার সাফল্যের অন্যতম সারথি ছিলেন হাশান তিলকরত্নে। ছিলেন ১৯৯৬ সালের বিশ্বকাপ জয়ী দলের সদস্য।  প্রথম শ্রীলঙ্কান হিসেবে দক্ষিণ আফ্রিকায় টেস্ট সেঞ্চুরি করেছিলেন। ৪২.৮৭ গড়ে টেস্টে আছে তার চাড়ে চার হাজারের বেশি রান। টেস্টে শ্রীলঙ্কাকে নেতৃত্বও দিয়েছেন তিনি। বাঁহাতি এই ব্যাটার লঙ্কান নারী দলের হয়ে এসেছেন সিলেটে। দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে আলাপ করেছেন বিবিধ বিষয়ে।

মেয়েদের ক্রিকেটে যুক্ত হওয়ার পেছনে কোন চিন্তা কাজ করেছে?

হাশান তিলকরত্নে: গত বছর জুলাইতে আমি নারী জাতীয় দলের দায়িত্ব নেই। মেয়েদের ক্রিকেট নিয়ে আমার প্যাশন ছিল, এটা আমি বেশ পছন্দ করি। আমার জন্য এটা ছিল চ্যালেঞ্জের। আমি কোচিং লেভেল ওয়ান, টু, থ্রি কোর্স করেছি। দল হিসেবে কাজ করতে হলে টেকনিক্যাল ও টেকটিক্যাল জায়গায় কাজ করতে হবে। আমাদের গবেষণা করতে হবে। এইজন্য চ্যালেঞ্জটা নিতে চেয়েছি। আমার মনে হয় আমরা ঠিকপথেই যাচ্ছি। মেয়েরা উন্নতি করছে। নিজেদের খেলা সম্পর্কে আরও বেশি ধারণা রাখছে। কিছু ইতিবাচক ফলও মিলছে। আরও ৬ থেকে ৮ মাস পর আরও ফল আসবে।

এই এশিয়া কাপে শ্রীলঙ্কা কতদূর যেতে পারে

তিলকরত্নে: আমরা কাপটা জিততে চাই। আমরা যদি নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী খেলি তাহলে সম্ভব। স্কিলফুল ও মেধাবী মেয়েরা দলে আছে। আমরা যদি নির্দিষ্ট জায়গা ও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারি তাহলে সম্ভব। টি-টোয়েন্টিতে যেকেউ জিততে পারে। আমরাও নিজেদের সেরাটা করে সেই জায়গায় যেতে পারি।

চামারির মতো ব্যাটার থাকাটাও নিশ্চয়ই আশাবাদী করে

তিলকরত্নে: সবাই জানে চামারি (আতাপাত্তু) কতটা মেধাবী। সে প্রমাণিত ক্রিকেটার, সবাই তাকে শ্রদ্ধা করে। এই ধরণের উইকেটে অবশ্য মানিয়ে নিতে হবে তাকে। চামারির মতো গতিময় উইকেটে খেলা ব্যাটারের জন্য এটা সহজ নয়। নিশ্চয়ই সে কাজ করছে। তার উপর আস্থা আছে, সে তার খেলা নিয়ে কাজ করছে।

উইকেট নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে, মনে হচ্ছে অনেক মন্থর ও নিচু বাউন্স

তিলকরত্নে:  আমি কিছুটা অবাক হয়েছি (উইকেট দেখে)। কিন্তু আপনি নিশ্চয়তা দিতে পারেন না উইকেটের ব্যাপারে। যেটাই তারা বানাক আমাদের সেখানে খেলতে হবে কোন অভিযোগ ছাড়াই। সব দেশের জন্যই এটা পরীক্ষা। আমরা শ্রীলঙ্কায় ভালো উইকেটে খেলে অভ্যস্ত। শ্রীলঙ্কার চেয়ে এখানকার উইকেট বেশ ভিন্ন। কিন্তু আবার বলব এটা অভিযোগ না জানিয়ে মানিয়ে নিতে হবে।

ম্যাচ শুরুর সময়ের কারণেও কি কিছুটা কঠিন হচ্ছে

তিলকরত্নে: আসলে দুই ম্যাচ থাকলে একই উইকেটে খেলা হবে। সংগঠকদের উপর এটা নির্ভর করে। এটা নিয়ে আমাদের কোন সমস্যা নাই। এটা ঠিকাছে।

কে সবচেয়ে কঠিন প্রতিপক্ষ?

তিলকরত্নে: আমার মনে হয় ভারত। ভারত খুব ভাল খেলছে, আমরা জানি তারা কতটা অভিজ্ঞ ও দক্ষ। তারা প্রমাণ করেছে কতটা ভাল তারা। তাদেরকে হারানো যেকোনো দলের জন্যই চ্যালেঞ্জের। টি-টোয়েন্টি খেলায় যেকেউ জিততে পারে।

ছেলেদের দল দারুণ খেলে এশিয়া কাপ জিতে নিল। মাঝে একটা জেনারেশন অবসরে গেলে কিছুটা পড়তি দেখা গিয়েছিল। এই জাগরণ কেমন দেখলেন?

তিলকরত্নে: আমরা তাদের নিয়ে গর্ব করি। শ্রীলঙ্কা একটা বাজে সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিল। মুখে হাসি ফুটানো খুব দরকার ছিল। তারা দল হিসেবে খেলে সেটা পেরেছে। যখন কীনা সাঙ্গাকারা, মাহেলা, মালিঙ্গা চলে গেল। ২০১৫, ২০১৬ থেকে একটা শূন্যতা তৈরি হয়। নতুনদের সবাই খুব দক্ষ, তাদের জ্ঞানে কিছুটা ঘাটতি ছিল। একসঙ্গে ৫-৬ বছর খেলার পর আবার তারা নিজেদের সমৃদ্ধ করে নিয়েছে। স্কিলের সঙ্গে বোঝাপড়া যুক্ত হওয়ায় তারা এখন জানে কীভাবে পরিস্থিতি সামাল দিতে হয়। উদাহরণ হিসেবে যদি বলি পাকিস্তানের বিপক্ষে ফাইনালে ৫৮ রানে ৫ উইকেট পড়ে গিয়েছিল। তারপর ১৭০ রানের পুঁজি ঠিকই পেয়ে গেছে। এটাই হচ্ছে পরিস্থিতি সামলানো। এটাই বলছি যে স্কিলের পাশাপাশি এখন নলেজ যুক্ত হয়েছে। আমি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জেতায় তাদের জোরালো অবস্থান দেখব। আমি খুবই আশাবাদী। তারা যেভাবে খেলছে… দল হিসেবে খেলছে, একে অন্যের জন্য খেলছে। একতাবদ্ধ আছে। আমি ইতিবাচক কিছু দেখছি। তাদের জন্য শুভ কামনা যেন কাপটা ফেরাতে পারে শ্রীলঙ্কায়।

আপনি টেস্টে প্রবল নিবেদন ও ধৈর্য নিয়ে খেলতেন। এখন তো ক্রিকেট অনেক বদল হয়েছে। টি-টোয়েন্টি এসেছে, টি১০ নামক ফরম্যাটও খেলা হচ্ছে। হালের ক্রিকেট কেমন দেখছেন

 তিলকরত্নে: এটা খুব ইতিবাচক দিকই বলব। মানুষকে আরও বেশি যুক্ত করছে। কেউ টেস্ট ম্যাচ দেখছে, কেউ ওয়ানডে, কেউ কুড়ি ওভারের ক্রিকেট। আমরা আরও বৃহত্তর দর্শক পাচ্ছি। একই সঙ্গে এটা খুব বিনোদনদায়ী। অনেক স্পন্সর আসছে, সমর্থন যোগাচ্ছে আমাদের। আমার মনে হয় এটা ইতিবাচক দিক।

১০ বছর পর ক্রিকেট কোথায় দাঁড়াবে? ফ্র্যাঞ্চাইজির যুগ তো এখনি বলা যায়…

তিলকরত্নে: হ্যাঁ, শ্রীলঙ্কায় ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। এটা ভালই, বিনোদন আছে। প্রচুর খেলোয়াড়ের সম্পৃক্ততা আছে। তবে আমার মনে হয় না এতে করে টেস্ট ক্রিকেটের কোন ক্ষতি হবে। টি-টোয়েন্টি, ওয়ানডে এসব জায়গায় আরও কিছু বদল আসবে। আমি কিন্তু এটা খুব পছন্দ করি।

আপনার তিন ছেলে ক্রিকেট খেলে। তারমধ্যে বড় দুজন যমজ। তারা আপনাকে দেখেই তো ক্রিকেটে এলো?

তিলকরত্নে:  আমি কিন্তু তাদের কখনই ক্রিকেট খেলতে জোর করিনি। আমি বরাবর তাদের বলেছি নিজের পরিচয় বড় করতে। ভাগ্য ভাল তারা খেলছে এবং বেশ ভাল খেলছে। আমার বড় ছেলে দুভিন্দু শ্রীলঙ্কার জাতীয় দলের খুব কাছে চলে এসেছিল। গত মৌসুমে আমাদের ঘরোয়া টুর্নামেন্টে সে সর্বোচ্চ উইকেট নিয়েছে। সে বাঁহাতি স্পিনার। আর আরেকজন হচ্ছে রাভিন্দু ও বাঁহাতি রিস্ট স্পিনার-চায়নাম্যান।  সে মাঝে চোটে ছিল। আবার শুরু করে ভাল করছে। আমার তিন নম্বর ছেলে বয়সভিত্তিক পর্যায়ে কলেজের অধিনায়ক। সে আবার অলরাউন্ডার। আমরা (আমি ও আমার স্ত্রী) খুব আশাবাদী যে তারা শ্রীলঙ্কাকে প্রতিনিধিত্ব করবে। আমি তাদের বলেছি কোন শর্ট কাট রাস্তা নেই। উপরে যেতে হলে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে।

কেউ আপনার মতো পুরো ব্যাটার নয়…!

তিলকরত্নে:  ভাগ্যক্রমে (হাসি)। আমার তৃতীয় ছেলে খারাপ ব্যাটার নয়। সে ভাল ব্যাট করে, অলরাউন্ডার। বাকিরাও হয়ত দরকারে ব্যাট চালাবে।

আপনি তো রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন, এখন আছেন কিনা জানি না। সেজন্যই জিজ্ঞেস করা শ্রীলঙ্কার রাজনৈতিক অবস্থা এখন কেমন। অর্থনৈতিক সংকটেরই বা কী হাল?

 তিলকরত্নে: পরিস্থিতি ক্রমাগত ভাল হচ্ছে। আমরা খুব বাজে সময় পার করেছি। আমি বলতে চাই রাজনীতিবিদরা খুব জ্ঞানী। তারা এখন দরকারি জিনিসটাই করবেন। আমাদের এখন সবারই উচিত ধৈর্য্য ধরে দেশটাকে সমর্থন করা। আমি খুব আশাবাদী পরিস্থিতি উন্নতি হয়ে যাবে দ্রুত। ভালো হচ্ছে দিনে দিনে।

বাংলাদেশে তো ঘরোয়া ক্রিকেটও খেলেছিলেন আপনি?

তিলকরত্নে: আমি মোহামেডানের হয়ে খেলেছি, ব্রাদার্স ইউনিয়নে খেলেছি। মোহামেডানে আমার দারুণ সময় কেটেছে। রানাতুঙ্গাও খেলেছিলেন। আমার অনেক বন্ধু আছে এখানে। আমার এখনো মনে আছে যখনই আবাহনীর সঙ্গে খেলা হতো খুব কঠিন হয়ে যেত চারপাশ। (হাসি)।

ওই সময়ের বাংলাদেশের ক্রিকেট আর এখনকার বাংলাদেশের ক্রিকেটের মধ্যে ফারাক কতটা দেখেন?

তিলকরত্নে: খেলাটা দ্রুত এগুচ্ছে এখানে। বাংলাদেশ অনেক এগিয়েছে। তোমাদের বিশ্বমানের তারকা আছে। অবকাঠামোও তো ভালো অনেক।

আপনাদের ওখানে তো অনেক ক্রিকেট মাঠ, এখানে কিন্তু মাঠের অনেক সংকট

তিলকরত্নে: আমাদের স্কুল ক্রিকেটটা খুব শক্তিশালী। শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট স্কুল ক্রিকেট কাঠামোকে অনেক অর্থ যোগায়। আমাদের ওই পর্যায় থেকে খেলোয়াড়দের তৈরি করা হয়। স্কুল ছাড়াও জেলা ভিত্তিক কাঠামোও এখন ভাল। প্রচুর মাঠ থাকা অবশ্যই জরুরি। ভাগ্য ভাল আমাদের এদিকটা ইতিবাচক জায়গায় আছে।

বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান এসব দেশে মেয়েদের খেলাধুলোয় আসতে একটা বাধা আছে। শ্রীলঙ্কার অবস্থা আসলে কেমন?

তিলকরত্নে: শ্রীলঙ্কার সমাজেও রক্ষণশীলতা আছে। বেশিরভাগ মায়েরা চায় না তাদের মেয়েরা ক্রিকেট খেলুক। আমার স্ত্রী মেয়েদের ক্রিকেটের আহবায়ক। সে খেলাটা জনপ্রিয় করার কাজ করে, কলম্বের বাইরে গিয়ে। ওদেরকে গিয়ে বলে যে আমরা তোমাদের মেয়েদের দেখভাল করব, নিশ্চয়তা দিয়ে তারপর নিয়ে আসে। এখন অনেক বেশি অবশ্য আসছে, অনুশীলন করছে। বড় উন্নতি হচ্ছে। উত্তর থেকে পশ্চিম, পূর্ব থেকে দক্ষিণ সবখানে। আমরা সম্প্রতি বয়সভিত্তিক টুর্নামেন্ট শেষ করলাম। এটা খুবই সফল ছিল। আমাদের বর্তমানে ডেভোলাপমেন্ট স্কোয়াড, ইমার্জিং স্কোয়াড ও জাতীয় স্কোয়াড আছে। প্রচুর মেয়েরা এখন আসছে।

মেয়েদের ক্রিকেটে অর্থনৈতিক কাঠামো কেমন?

তিলকরত্নে: সব মেয়েরাই চুক্তিভুক্ত।  ডেভোলাপমেন্ট, ইমার্জিং ও জাতীয় দলের খেলোয়াড়দের সবাইকে বোর্ড থেকে চুক্তিতে রেখেছে। এটার বাইরে বেশিরভাগ মেয়ে বিভিন্ন বাহিনীর সঙ্গে যুক্ত। কেউ হয়ত সেনাবাহিনী, কেউ নৌবাহিনীতে আছে। বলব বেশ ভাল কাঠামো আছে। আমাদের এখন আরও আত্মবিশ্বাস যোগাতে হবে তাদের। মেয়েদের স্কুল ক্রিকেটেও নজর দিতে হবে।

ক্রিকেটার হিসেবে বেশ সফল, বিশ্বকাপও জিতেছেন। কোচ হিসেবে কতদূর যেতে চান?

তিলকরত্নে: খেলোয়াড়ি জীবন শেষে যখন কোচ হবেন সেটা ভিন্ন অনুভূতি। কোচ হিসেবে কাপ জেতা, ম্যাচ জেতার অভাবনীয়। উঠা-নামা থাকবে। দুনিয়ার সেরা কোচ হলেও ফল নিশ্চিত করা যায় না ধৈর্য ধরতে হয়।

বাংলাদেশের সঙ্গে শ্রীলঙ্কার নিবিড় সম্পর্ক। অনেকে এখানে কোচ হয়েছেন। চণ্ডিকা হাথুরুসিংহে ছিলেন, এখন যেমন স্পিন কোচ হিসেবে রঙ্গনা হেরাথ আছে। বাংলাদেশের ক্রিকেটের কোচিং নিয়ে আপনার কোন আগ্রহ আছে?

তিলকরত্নে: নিশ্চয়ই। আমাদের দুই দেশের মধ্যে শক্ত বন্ধন আছে। এটা খুব ভালো। অনেক শ্রীলঙ্কান এখানে কোচ হয়ে এসেছিলেন। এটা কেবল এক পাক্ষিক না। বাংলাদেশের কেউও হয়ত আমাদের কোচ হয়ে আসতে পারে আগামীতে। আমরা নিজেদের অভিজ্ঞতা বিনিময় করতে পারি। তাহলে নিজেরা আরও সমৃদ্ধ হতে পারব। নিজেদের এগিয়ে নিতে পারব।

Comments

The Daily Star  | English

Abantika: A victim of institutional neglect

The universities also didn't organise any awareness activities regarding where and how to file complaints.

7h ago