‘পরের ধাপে যেতে ডাচ ক্রিকেটের দরকার বিনিয়োগ’

ডাচ পেসার পল ফন মিকেরেন আইসিসি টুর্নামেন্টগুলোতে বারবারই বাংলাদেশের জন্য বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন। ২০১৬, ২০২২ এবং ২০২৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশে বিপক্ষে প্রতিবারই একটি করে ম্যাচ খেলেছেন তিনি, আর প্রতিবারই নিয়েছেন দুই উইকেট। শুধু তাই নয়, ২০২৩ সালের কলকাতায় অনুষ্ঠিত আইসিসি বিশ্বকাপে ৪-২৩ নিয়ে টাইগারদের বিব্রতকর পরাজয়ের মুখে ফেলেছিলেন ৩২ বছর বয়সী এই পেসার। মিকেরেন খেলেছেন বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) একটি আসরও। সম্প্রতি দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে আলাপচারিতায় মিকেরেন কথা বলেছেন নেদারল্যান্ডসের ক্রিকেট অবকাঠামো, বাংলাদেশের বিপক্ষে তার সাফল্য এবং বিপিএল অভিজ্ঞতা নিয়ে।
বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজটি হঠাৎই আয়োজন হলো। আপনারা কি সিরিজের জন্য প্রস্তুত ছিলেন না?
পল ফন মিকেরেন: আমরা আসলে বেশ কিছু ক্রিকেট খেলেই এসেছি। গত কয়েক মাসে আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপ লিগ এবং টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব খেলেছি। এরপর কয়েক সপ্তাহের বিরতি ছিল, যা হয়তো থাকত না যদি সিরিজ সম্পর্কে আগে জানতাম। আমরা দুই-তিন সপ্তাহ অনুশীলন করেছি। কিছুটা আবহাওয়ার সমস্যাও ছিল, তাই আদর্শ প্রস্তুতি বলা যাবে না, তবে বাস্তবতা এটাই।
দুর্ভাগ্যবশত কয়েকজন খেলোয়াড় অনুপস্থিত ছিলেন, আবার এখানে আসার আগের সপ্তাহান্তে দুজন খেলোয়াড় একে অপরের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে ছিটকে যান। ফলে কয়েকজন নতুনকে ডাকতে হয়েছে, যারা অনেকদিন পর দলে ফিরেছেন।
নেদারল্যান্ডস দীর্ঘদিন ধরে সহযোগী সদস্য। পূর্ণ সদস্য হতে বাধা কোথায়?
মিকেরেন: স্পনসর পেলে আমাদের দেশের ক্রিকেট এগিয়ে যেতে পারত। নেদারল্যান্ডসে সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামের মতো মাঠ নেই। সর্বোচ্চ স্তরের বেশিরভাগ ক্লাব খেলে ম্যাট উইকেটে। কিছু ক্লাব আবার কৃত্রিম মাঠে খেলে—দুটি ফুটবল মাঠের মাঝখানে একটি ক্রিকেট উইকেট থাকে। আমরা সবাই এভাবেই ক্রিকেট শিখেছি। আমিও এভাবেই শিখেছি।
আমাদের বেশিরভাগ মাঠে গ্রাউন্ডসম্যান স্বেচ্ছাসেবক। ভালো উইকেট বানাতে পেশাদার গ্রাউন্ডসম্যান দরকার, আর তার জন্য টাকা দরকার। টাকা পেতে হলে ফুল মেম্বার হতে হবে। কিন্তু তার জন্য পারফরম্যান্স দরকার, অবকাঠামো দরকার। আর অবকাঠামো বানাতে হলে স্পনসরদের সম্মান দেখাতে হবে।
আমার মনে হয় আমাদের পরবর্তী ধাপে যেতে হলে ৩-৪ বছরের জন্য একজন স্পনসর দরকার, যিনি ডাচ ক্রিকেটে বিনিয়োগ করতে চান।
আইসিসি টুর্নামেন্টে আপনি সবসময়ই বাংলাদেশের বিপক্ষে ভালো খেলেন। রহস্য কী?
মিকেরেন: প্রথম টি-টোয়েন্টির আগের রাতে বুঝতে পারলাম, বাংলাদেশের বিপক্ষে খেললেই আমার পারফরম্যান্স ভালো হয়। আশা করি শেষ ম্যাচে সেই পর্যায়ে ফিরতে পারব, আবারও 'বাংলাদেশ কিলার' হতে পারব এবং হয়তো একটা ম্যাচ জিততেও পারব।
আপনি অনেক ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে খেলেছেন, বিপিএলে খুলনা টাইগার্সের হয়েও খেলেছেন। অন্যান্য লিগের সঙ্গে তুলনায় বিপিএল কেমন?
মিকেরেন: এটা দুর্দান্ত একটি টুর্নামেন্ট। দর্শকরা ভীষণ আবেগী। দেশটাও দারুণ। মাঠের বাইরের কিছু বিষয় সমাধান করা দরকার, তবে এই টুর্নামেন্টের প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে।
যখন আমি খেলেছিলাম, তখন এডিআরএস সিস্টেম ছিল, আসল ডিআরএস নয়। এখন সেটা চালু হয়েছে মনে হয়। মানে পরিবর্তন আসছে। যদি অফ-ফিল্ড সমস্যাগুলো সমাধান হয়, তবে বিপিএল বিশ্বের অন্যতম সেরা ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ হতে পারে।
বিপিএল নিয়ে নেতিবাচক মিডিয়া সংবাদ বিদেশি খেলোয়াড়দের খেলতে নিরুৎসাহিত করে কি?
মিকেরেন: আমাদের মতো ডাচ খেলোয়াড়দের ক্ষেত্রে একেবারেই না। শুধু বিপিএল নয়, বিশ্বের আরও লিগে এ ধরনের সমস্যা আছে। যদি এখানে কোনো খেলোয়াড়কে জিজ্ঞেস করেন তিনি বিপিএলে আসতে চান কি না, সবাই বলবে—"হ্যাঁ, অবশ্যই।" আমার মনে হয় কোনো খেলোয়াড় এড়িয়ে যাবে না। বরং উল্টোটা—খেলোয়াড়রা সত্যিই এখানে খেলতে চায়।
Comments