হাল চাষ থেকে বিশ্ব মঞ্চে: মারুফার আদর্শ ‘হার্দিক পান্ডিয়া’
সদ্য কৈশোর পেরিয়েছেন। চোখেমুখে সরলতার ছাপ, কথাবার্তাতেও তাই। বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের নতুন মুখ মারুফা আক্তার ভরা সংবাদ সম্মেলনে সরলতা দিয়েই কাড়লেন আলো। ডানহাতি পেস বোলিংয়ের পাশাপাশি আগ্রাসী ব্যাটিং এবং সংগ্রামমুখর জীবন। ক্রিকেটে মারুফা তাই আদর্শ হিসেবে বেছে নিয়েছেন ভারতের তারকা অলরাউন্ডার হার্দিক পান্ডিয়াকে। তার সহজ ব্যাখ্যা, 'হার্দিক পান্ডিয়া আদর্শ, কারণ আমার মতো এজন্য।'
ঘরোয়া ক্রিকেটের দুই আসরে নৈপুণ্য দেখিয়ে জাতীয় দলে পা রেখেছেন মারুফা। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে ওয়ানডে সংস্করণে ১১ ম্যাচে ওভারপ্রতি ৩.২১ রান দিয়ে নেন ২৩ উইকেট। এক ম্যাচেই পান ৭ উইকেট। জেতেন টুর্নামেন্টের সেরা উদীয়মান খেলোয়াড়ের পুরস্কার। গেল মাসে সিলেটে টি-টোয়েন্টি সংস্করণের জাতীয় লিগে ৭ ম্যাচে নেন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৩ উইকেট। ওভারপ্রতি রান দেন কেবল ২.৭৬ করে।
সহজাত স্যুয়িং বোলিংয়ের কারণে নজর কাড়েন বিশেষভাবে। সংযুক্ত আরব আমিরাতে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের বাছাইপর্বের দলে তাই সহজেই জায়গা পান ১৭ পেরুনো মারুফা। বৃহস্পতিবার আবুধাবির ফ্লাইট ধরার আগে মিরপুর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সংবাদ সম্মেলনে ম্যানেজার ও নির্বাচক মনজুরুল ইসলাম পরিচয় করিয়ে দেওয়ার পর মারুফার সংগ্রাম ও নিবেদনের কথা।
নীলফামারী জেলার প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে ক্রিকেটের নেশায় উঠে এসেছেন বড় মঞ্চে। করোনাভাইরাস মহামারির সময়ে দরিদ্র-পীড়িত সংসারের প্রয়োজনে হাল চাষও করতে হয়েছে তাকে। পরে মারুফার পাশে দাঁড়ায় বিসিবি। সেই সহায়তা থাকে দেশের জন্য কিছু করার জন্য অনুপ্রাণিত করে। টানা নৈপুণ্য দেখিয়ে বিকেএসপির এই মেয়ে এখন বাংলাদেশের জার্সি গায়ে চাপাবেন।
ক্যামেরার সামনে প্রথমবার এলে অনেক পরিণত বয়সের ক্রিকেটারই কিছুটা ভড়কে যান। মারুফারও স্নায়ুচাপ থাকলেও চোখেমুখে দারুণ কিছুর আভা তাকে করছিল আলাদা, ছোট ছোট কথায় দিয়েছেন জবাব, 'ভালো লাগতেছে, আমার এটা প্রথম ট্যুর। সবাই দোয়া করবেন।'
ক্রিকেটে আপনার আদর্শ কে? এমন প্রশ্নে এক কথায় জবাব, 'হার্দিক পান্ডিয়া।' কারণ কি? 'আমার মতো এজন্য।'
পাশেই থাকা অধিনায়ক নিগার সুলতানা জ্যোতি জানাচ্ছিলেন স্যুইং বোলিং, ব্যাট হাতে নেমে ঝড় তোলার পাশাপাশি দারুণ ফিল্ডারও মারুফা। যেকোনো পরিস্থিতিতে তিনি রাখতে পারেন সাহস। এর কারণ হিসেবে নিজে জানালেন, আমি টেনশন করি না তো, চাপ মাথায় নেই না।'
ছোটবেলায় বড় ভাইয়ের সঙ্গে ক্রিকেট খেলতেন মারুফা। বড় ভাই মারুফার বোলিং দেখে তখনই উৎসাহ দেন ক্রিকেটার হওয়ার। এই পর্যন্ত আসতে পারার পেছনেও বড় প্রেরণা তার ভাই। জাতীয় দলে ডাক পেয়েও তাকেই আগে খবরটা দিয়েছেন।
সম্প্রতি সিলেট থেকে অনুশীলন ক্যাম্প করে ঢাকায় আসার পথে প্রথমবার বিমানে উঠেন। নিজের রোমাঞ্চের কথা জানান অধিনায়ক জ্যোতিকে। এবার বিমানে করে আরও দীর্ঘ যাত্রা এই তরুণীর।
সেখানে আয়ারল্যান্ড, স্কটল্যান্ড ও যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে খেলবেন মারুফারা। বাবাকে কথা দিয়েছেন, বড় কিছু করবেন। বাংলাদেশ দলও আন্তর্জাতিক মঞ্চে তার নৈপুণ্যের অপেক্ষায়।
Comments