টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ২০০৭: ক্রিকেটের নতুন দিগন্ত

ছবি: এএফপি

অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে বসতে যাওয়া আসন্ন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের বাকি আর মাত্র পাঁচ দিন। এমন সময়ে স্মৃতির পাতা হাতড়ে অতীতে ফিরে যেতে চাইবেন অনেক ক্রিকেট ভক্তই। খেলার ধরনের মতো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম আসর ছিল উত্তেজনা ও অনিশ্চয়তায় ভরপুর। ২০৫ রান করেও শেষ হাসি হাসতে পারেনি ওয়েস্ট ইন্ডিজ, অন্যদিকে ৬ বলে ৬ ছক্কা হাঁকিয়ে স্টুয়ার্ট ব্রডের ক্যারিয়ারটাই প্রায় শেষ করে দিয়েছিলেন যুবরাজ সিং!

দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গে বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচেই টি-টোয়েন্টির অতিমানবীয় উত্তেজনার স্বাদ পেয়ে যান দর্শকরা। দুইশর বেশি রান করেও যে হাত ফসকে যাবে ম্যাচ, তা হয়তো ঘুণাক্ষরেও ভাবেনি ক্রিস গেইল, মারলন স্যামুয়েলসদের দানবীয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তবে হার্শেল গিবস ও জাস্টিন কেম্প ভেবে রেখেছিলেন ভিন্ন কিছু। তাদের চোখ ধাঁধানো পাওয়ার হিটিংয়ে অসম্ভবকে সম্ভব করেছিল আসরের স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকা।

টি-টোয়েন্টির বিশ্বমঞ্চে প্রোটিয়াদের মতো নিজেদের শুরুটা রাঙিয়েছিল বাংলাদেশও। মোহাম্মদ আশরাফুলের ২৭ বলে ৬১ রানের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে ক্যারিবিয়ানদের ১৬৪ রান টাইগাররা টপকে যায় ২ ওভার হাতে রেখেই। আফতাব আহমেদের ৪৯ বলের ৬২ রানের অপরাজিত ইনিংসকেও সুযোগ নেই খাটো করে দেখার।

দুই চিরপ্রতিদ্বন্দী ভারত-পাকিস্তান দুবার পরস্পরের মুখোমুখি হওয়ায় বাড়তি মাত্রা পায় ২০০৭ বিশ্বকাপ। দুই দেখাতেই অবশ্য শেষ হাসি হাসে মহেন্দ্র সিং ধোনির ভারত। গ্রুপ পর্বের ম্যাচে ডারবানে এক নতুন নিয়মের প্রয়োগ দেখে ক্রিকেট বিশ্ব। টাই হওয়া ভারত-পাকিস্তান লড়াইয়ে বিজয়ী নির্বাচন করে হয় 'বোল আউট'-এর মাধ্যমে।

আসরের সুপার এইটের ম্যাচে ভারতের আগ্রাসী ব্যাটার যুবরাজ গড়েন এমন এক কীর্তি, যা ছাঁপিয়ে যায় দক্ষিণ আফ্রিকার অতিমানবীয় রান তাড়াকেও। ম্যাচটিতে শুধু ব্যাট-বল নয়, ক্রিকেটারদের কথার লড়াইও যোগ করেছিল বাড়তি উত্তেজনার পারদ। ভারতের ইনিংসের ১৮তম ওভার করতে এসেছিলেন অ্যান্ড্রু ফ্লিনটফ। সে ওভারে উত্তপ্ত বাক্য ছুড়ে যুবরাজকে তাতিয়ে দেন ইংল্যান্ডের অলরাউন্ডার।

সেটার মাশুল যে এভাবে দিতে হবে তা হয়তো কল্পনাতেও ছিল না ফ্লিনটফের। জানলে হয়তো কথার লড়াইয়ে জড়াতেনই না ভারতের তারকার সঙ্গে! ১৯তম ওভারে ব্রডের একটি বলও মাঠের সীমানায় রাখেননি ক্ষিপ্ত যুবরাজ। ৬ বলের সবকটিই আছড়ে পড়ে গ্যালারিতে।

উদ্বোধনী আসরের ফাইনালটাও ছিল মনে রাখার মতো। মিসবাহ উল হক প্রায় জিতিয়েই দিয়েছিলেন পাকিস্তানকে, তবে অপর প্রান্তে নিয়মিত উইকেট হারানোয় কঠিন হয়ে যায় তার কাজটা। শেষ ওভারে জয়ের জন্য যখন ১৩ রান প্রয়োজন পাকিস্তানের, তখন তাদের জয় দেখে ফেলেছিলেন অনেক ভক্তই। তবে ক্রিকেট যে গৌরবময় অনিশ্চয়তার খেলা তা আরও একবার প্রমাণ হয়েছিল সেদিন। শেষ ৩ বলে পাকিস্তানের দরকার ছিল ৬ রান, ভারতের ১ উইকেট। এমন সময়েই স্কুপ করতে গিয়ে শর্ট ফাইন লেগে ক্যাচ দিয়ে আউট হয়ে যান মিসবাহ। একই সঙ্গে শেষ হয়ে যায় পাকিস্তানের বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন, ভারত মাতে চূড়ায় পৌঁছানোর উল্লাসে।

২৬৫ রান করে ২০০৭ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ছিলেন অস্ট্রেলিয়ার ওপেনার ম্যাথু হেইডেন। বিশ্বকাপ ও টি-টোয়েন্টির ইতিহাসে প্রথম সেঞ্চুরি করা গেইলই ছিলেন আসরের সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংসের মালিক। প্রথম ম্যাচে প্রোটিয়াদের বিপক্ষে করা তার ১১৭ রান (৫৭ বলে) টপকাতে পারেননি কেউই। বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দ্যুতি ছড়ান পাকিস্তানের উমর গুল। ১৩ উইকেট নিয়ে বনে যান আসরের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি।

সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহের (২৬০/৬) কীর্তি অবশ্য গড়েছিল সনাথ জয়সুরিয়া, কুমার সাঙ্গাকারা, মাহেলা জয়াবর্ধনেদের তারকাবহুল শ্রীলঙ্কা। তবে তা ছিল দুর্বল প্রতিপক্ষ কেনিয়ার বিপক্ষে। অন্যদিকে, সুপার এইটের ম্যাচে সর্বনিম্ন দলীয় সংগ্রহের বিব্রতকর রেকর্ড গড়ে বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে মাত্র ৮৩ রানে গুটিয়ে যায় টাইগাররা। সব মিলিয়ে ব্যাট-বলের তুমুল লড়াইয়ে প্রথম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ পরিণত হয় সফল ও স্মৃতিময় এক আসরে।

Comments

The Daily Star  | English

JP central office vandalised, set ablaze

A group of unidentified people set fire to the central office of Jatiyo Party in Dhaka's Kakrail area this evening

1h ago