আইপিএল

শেষ ৫ বলে টানা ছক্কা মেরে কলকাতাকে জেতালেন রিংকু

আহমেদাবাদে শেষদিকের রোমাঞ্চে ৩ উইকেটে জিতেছে কলকাতা।
ছবি: এএফপি

জয়ের জন্য শেষ ওভারে চাই ২৯ রান। উমেশ যাদব প্রথম বলে সিঙ্গেল নিয়ে স্ট্রাইক দিলেন রিংকু সিংকে। ২৫ বছর বয়সী এই বাঁহাতি ব্যাটার এরপর যা করলেন তা রীতিমতো অবিশ্বাস্য! গুজরাট টাইটান্সের পেসার ইয়াশ দয়ালের ওপর চড়াও হয়ে হাঁকালেন টানা পাঁচটি ছক্কা। তার বীরত্বে স্মরণীয় এক জয় পেল কলকাতা নাইট রাইডার্স।

আইপিএলে রোববার শেষদিকের রোমাঞ্চে ৩ উইকেটে জিতেছে কলকাতা। আহমেদাবাদে টস জিতে আগে ব্যাট করতে নেমে ৪ উইকেটে ২০৪ রানের বড় পুঁজি পায় আসরের শিরোপাধারী গুজরাট। জবাবে রিংকুর বিস্ফোরক ইনিংসে ৭ উইকেটে ২০৭ রান তুলে জয় নিশ্চিত করে কলকাতা।

রশিদ খানের হ্যাটট্রিকে ১৭তম ওভারে ১৫৫ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে ফেলা কলকাতার শেষ ৮ বলে চাহিদা ছিল ৩৯ রানের। কোনো ব্যাটারের পক্ষে এমন সমীকরণ মেলানো অসম্ভবের পর্যায়েই পড়ে। তবে রিংকু সেটাকে সম্ভব করে ছাড়লেন। গুজরাটের আইরিশ পেসার জশ লিটলের করা ১৯তম ওভারের শেষ দুই বলে তিনি মারেন যথাক্রমে ছক্কা ও চার। এরপর দয়ালকে কচুকাটা করে ইতি টানেন উত্তেজনায় ভরপুর এক টি-টোয়েন্টি ম্যাচের।

২০তম ওভারের দ্বিতীয় বলটি ছিল ফুল টস। লং অফ দিয়ে তা সীমানার বাইরে পাঠান রিংকু। পরের দুটি বলও ফুল টস দেন বাঁহাতি বোলার দয়াল। যথাক্রমে ডিপ ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ার লেগ ও লং অফ দিয়ে হয় ছক্কা। অফ স্টাম্পের বাইরে থাকা পঞ্চম বলটিতেও আসে একই ফল। এবারে লং অন দিয়ে সীমানার বাইরে আছড়ে পড়ে বল।

রিংকুর তাণ্ডবে শেষ বলে ৪ রান দরকার দাঁড়ায় কলকাতার। এলোমেলো হয়ে পড়া দয়াল অফ স্টাম্পের বাইরে করেন শর্ট ডেলিভারি। রিংকু তীরে পৌঁছে তরী ডোবাতে দেননি। লং অন দিয়ে হাঁকান জয়সূচক ছক্কা। গুজরাটের খেলোয়াড়রা যখন হতাশায় ডুবে যাচ্ছিলেন, তখন দৌড়ে মাঠের ভেতরে ঢুকে রিংকুকে নিয়ে উল্লাসে মেতে ওঠেন কলকাতার খেলোয়াড়রা।

অবধারিতভাবেই ম্যাচসেরার পুরস্কার জেতেন রিংকু। পাঁচে নেমে ২১ বলে ৪৮ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি। যার ওপর দিয়ে ঝড়টা যায়, সেই দয়াল ৪ ওভারে বিনা উইকেটে খরচ করেন ৬৯ রান। আইপিএলের ইতিহাসে সবচেয়ে খরুচে বোলিংয়ের তালিকায় তার অবস্থান দুইয়ে। এর আগে ২০১৮ সালে ৪ ওভারে বিনা উইকেটে ৭০ রান দিয়েছিলেন সানরাইজার্স হায়দরাবাদের বাসিল থাম্পি। প্রতিপক্ষ ছিল রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু।

অথচ অধিনায়ক রশিদ জয়ের সুবাসই দিয়েছিলেন গুজরাটকে। ১৬তম ওভারের প্রথম তিন বলে তিনি সাজঘরে পাঠান আন্দ্রে রাসেল, সুনিল নারিন ও শার্দুল ঠাকুরকে। আফগান এই তারকা লেগ স্পিনারের বলে ক্যাচ দেন দুই ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটার রাসেল ও নারিন। আর শার্দুল পড়েন এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে। ঠিক আগের ওভারেই আগ্রাসী কায়দায় খেলতে থাকা ভেঙ্কটেশ আইয়ারকে তুলে নেন আলজারি জোসেফ। ফলে ৫ বলের মধ্যে স্কোরবোর্ডে ১ রান যোগ করতে ৪ উইকেট হারিয়ে খাদের কিনারায় পড়ে গিয়েছিল কলকাতা।

রিংকুর স্মরণীয় ব্যাটিংয়ের আগে ইমপ্যাক্ট খেলোয়াড় ভেঙ্কটেশ আর অধিনায়ক নিতিশ রানা কলকাতাকে রেখেছিলেন লক্ষ্য তাড়ার কক্ষপথে। দলীয় ২৮ রানের ভেতরে দুই ওপেনার রহমানউল্লাহ গুরবাজ ও নারায়ণ জগদীশানের বিদায়ের পর তৃতীয় উইকেটে ৫৫ বলে ১০০ রানের জুটি গড়েন তারা। নিজের পরপর দুই ওভারে দুজনকেই আউট করেন জোসেফ। ভেঙ্কটেশ ৪০ বলে ৮ চার ও ৫ ছক্কায় ৮৩ রান করেন। রানার ব্যাট থেকে ৪ চার ও ৩ ছয়ে আসে ২৯ বলে ৪৫ রান।

এর আগে সাই সুদর্শন ও বিজয় শঙ্করের ফিফটিতে দুইশ ছাড়ানো সংগ্রহ পায় গুজরাট। তিনে নামা সুদর্শন ৩৮ বলে ৩ চার ও ২ ছক্কায় ৫৩ রান করেন। শঙ্কর অপরাজিত থাকেন ৬৩ রানে। মাত্র ২৪ বল মোকাবিলায় তিনি মারেন ৪ চার ও ৫ ছক্কা।

Comments